প্রথম প্রান্তিকে জাপানের অর্থনীতি সম্প্রসারণ হয়েছে ২.৭%

বণিক বার্তা ডেস্ক

অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও পর্যটনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাপানের অর্থনীতি ছবি: এপি

জাপান চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গতকাল দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিস জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে জাপানের জিডিপি ২ দশমিক ৭ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়েছে। এর আগে প্রাথমিক প্রাক্কলনে ১ দশমিক ৬ শতাংশ সম্প্রসারণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। প্রথম প্রান্তিকে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি দেশটির শক্তিশালী করপোরেট ব্যয়কে প্রতিফলিত করে। খবর নিক্কেই এশিয়া।

মুডিসের অ্যানালিটিকস জাপানের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন সংশোধনের বিষয়টিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তথ্য বলছে, দেশটির জিডিপি এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, যা প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলিত ১ দশমিক ৬ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি। 

রয়টার্স ও কুইকের অর্থনীতিবিদদের জরিপে জাপানের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ। সর্বশেষ সংশোধিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার (২ দশমিক ৭ শতাংশ) এ প্রাক্কলনের তুলনায়ও অনেক বেশি।

সাম্প্রতিক তথ্য দেখায়, জাপানের অর্থনীতি করোনাভাইরাস মহামারী থেকে স্থিতিশীল পুনরুদ্ধার অব্যাহত রেখেছে। মার্চে সমাপ্ত অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি গত বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এর আগের প্রাক্কলনের তুলনায় যা কিছুটা বেশি। পাশাপাশি এটি ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির দ্বিতীয় বছরে পা দিয়েছে।

মূলধন ব্যয় ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। জাপানি নির্মাতাদের ব্যবসায়িক ব্যয় দ্রুতগতিতে বাড়ছে, গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া এমন ইঙ্গিতের পর প্রাথমিক প্রাক্কলন থেকে যা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

জেপি মরগান সিকিউরিটিজ জাপানের অর্থনীতিবিদ আয়াকো ফুজিতা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‌অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের ঘাটতি ও সাপ্লাই চেইনের পুনর্বিন্যাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কোম্পানিগুলো ক্যাপেক্স বাড়াচ্ছে। আগামী প্রান্তিকগুলোয় যা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।’

বেসরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যয়কে অভ্যন্তরীণ চাহিদার স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা জাপানের জিডিপির অর্ধেকেরও বেশিজুড়ে খাতটি ভূমিকা রাখে। আগের প্রাক্কলন তথ্যানুযায়ী খাতটির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এটা এখনো টানা চার প্রান্তিক ধরে বেড়েছে।

আয়াকো ফুজিতা বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকৃত আয় কমা সত্ত্বেও মহামারী চলাকালীন সঞ্চিত সঞ্চয়ের মাধ্যমে পারিবারিক ব্যয় বর্তমানে বাড়ছে। আমরা আশা করছি, মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিম্নমুখী আয় এবং সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে। এতে ভোক্তা ব্যয় স্থিতিশীল থাকবে। এ পটভূমিতে আমাদের প্রত্যাশা, অর্থনীতি সারা বছর ধরে সম্ভাব্য গতির ওপরে বাড়বে।’

অভ্যন্তরীণ চাহিদা সামগ্রিকভাবে প্রথম প্রান্তিকের সংশোধিত প্রবৃদ্ধিতে ১ শতাংশ পয়েন্ট অবদান রেখেছে। প্রাথমিক প্রাক্কলনের তুলনায় যা কিছুটা বেশি ছিল। কিন্তু এ সময়ে নিট রফতানি শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে, যা প্রাথমিক পরিসংখ্যানের সঙ্গে মিলেছে।

মুডি’স অ্যানালিটিকস জানিয়েছে, প্রথম প্রান্তিকে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে যে জাপানের শ্লথ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতিশীল হচ্ছে। কিন্তু সংস্থাটি একই সঙ্গে সতর্ক করেছে একটি শক্তিশালী ডাটা পয়েন্ট থেকে অত্যধিক আশাবাদী হওয়া যাবে না। কেননা প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি মূলত স্টক পরিবর্তন মাধ্যমে চালিত হয়েছে। এটি স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। আগামীর পরিসংখ্যান অস্থিতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মুডি’স বলছে, জাপানের মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে আরো দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শঙ্কায় ফেলেছে। আমরা সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এদিকে জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, জাপানের বর্তমান অ্যাকাউন্টের উদ্বৃত্ততা এপ্রিলে ৭৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন