এইচডিএমের জরিপ

সওজের ভাঙাচোরা সড়ক ২,১৫২ কিলোমিটার

শামীম রাহমান

দেশের প্রধান মহাসড়ক সম্প্রসারণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। জাতীয়, আঞ্চলিক আর জেলা সড়ক মিলিয়ে সংস্থাটির নেটওয়ার্কভুক্ত সড়কের পরিমাণ ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২০ হাজার ৫২৩ কিলোমিটার অংশে গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত জরিপ চালানো হয়েছে। হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট মডেল (এইচডিএম-৪) সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা জরিপ থেকে জানা যায়, ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ২ হাজার ১৫২ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে ৩৭৭ কিলোমিটারের বেশি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। 

সওজ প্রতি বছরই এইচডিএমের জরিপ প্রকাশ করে। এবারের জরিপটি প্রকাশিত হয়েছে ৬ জুন। গত বছরের জরিপ প্রতিবেদনে দেশে ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সে হিসাবে চলতি বছর সওজের ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। ভাঙাচোরা এসব সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর ৯ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। 

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (ইন্টারন্যাশনাল রাফনেস ইনডেক্স বা আইআরআই) অনুসরণ করেই এইচডিএমের জরিপটি পরিচালনা করা হয়। আইআরআই মান শূন্য থেকে ১২ পর্যন্ত। মানের ভিত্তিতে সড়কগুলোয় ভাগ করা হয় পাঁচটি শ্রেণীতে। আইআরআই মান শূন্য থেকে ৫ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকা সড়কগুলোকে ফেলা হয় ভালো শ্রেণীতে। এইচডিএমের জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে সওজের ভালো সড়কের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৪৬৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ২ হাজার ৯৫১ কিলোমিটার। আঞ্চলিক সড়কের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৬২ কিলোমিটার। আর ভালো অবস্থায় থাকা জেলা সড়কের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার।

চলনসই সড়কের আরআরআই মান ৬ থেকে ৭ দশমিক ৯। সওজের ২ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার সড়ক চলনসই মানের রয়েছে বলে উঠে এসেছে জরিপে। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কের পরিমাণ ৭০৬ কিলোমিটার। আঞ্চলিক ও জেলা সড়কের পরিমাণ যথাক্রমে ৫৭৭ ও ১ হাজার ৬৩৩ কিলোমিটার। আইআরআই মান ৮ থেকে ৯ দশমিক ৯ হলে সেই সড়ককে দুর্বল হিসেবে অভিহিত করা হয়। মান ১০ থেকে ১১ দশমিক ৯ হলে সেটিকে ফেলা হয় খারাপ শ্রেণীতে। আর আইআরআই মান ১২ পর্যন্ত হলে ওই সড়ককে খুব খারাপ শ্রেণীতে ফেলা হয়। 

দুর্বল, খারাপ ও খুব খারাপ—তিন শ্রেণীই ভাঙাচোরা সড়ককে নির্দেশ করে। সওজের নেটওয়ার্কভুক্ত এমন ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ ২ হাজার ১৫২ কিলোমিটার বলে এইচডিএমের জরিপে উঠে এসেছে। এর মধ্যে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে ১ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার মহাসড়ক। খারাপ অবস্থায় থাকা সড়কের পরিমাণ ৫১২ কিলোমিটার। আর ৩৭৭ কিলোমিটার সড়ক খুব খারাপ।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাতীয় মহাসড়কগুলোয় ভাঙাচোরা অংশের পরিমাণ প্রায় ২৮৭ কিলোমিটার। আঞ্চলিক সড়কে ভাঙাচোরা অংশের পরিমাণ ৩৫৩ কিলোমিটার। জেলা সড়কগুলোয় ভাঙাচোরা অংশ রয়েছে ১ হাজার ৫১২ কিলোমিটার।

সারা দেশে সওজের সড়ক নেটওয়ার্কটি ১০ জোনে বিভক্ত। জোনভিত্তিক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভাঙাচোরা সড়ক রয়েছে চট্টগ্রাম জোনে। এ জোনে ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ প্রায় ৩৫২ কিলোমিটার। আর সবচেয়ে কম ভাঙাচোরা সড়ক রয়েছে গোপালগঞ্জ জোনে। ভাঙাচোরা সড়কের পরিমাণ প্রায় ৮৫ কিলোমিটার।

অন্য জোনগুলোর মধ্যে বরিশালে ১৩৯ কিলোমিটার, কুমিল্লায় ২৫৫, ঢাকায় ১৪৫, খুলনায় ৩৪০, ময়মনসিংহে ২৭২, রাজশাহীতে ২১০, রংপুরে ২১২ ও সিলেট জোনে ভাঙাচোরা সড়ক রয়েছে ১৪০ কিলোমিটার।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে দেশের সওজের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ২৫ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ পেলেও ভাঙাচোরা সড়ক কমার বদলে উল্টো বেড়েছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এইচডিএমের জরিপ অনুযায়ী চলতি বছর সড়কের অবস্থা আগের বছরের চেয়ে সামান্য খারাপ। তবে বাস্তবতা হলো দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে। চলতি অর্থবছর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৪৫২ কিলোমিটার সড়ক সওজের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে অনেকগুলো ডিবিএসটির মতো অমসৃণ সড়ক তৈরি হয়েছে। সামগ্রিক সড়ক নেটওয়ার্কের মান কিছুটা খারাপ হওয়ার পেছনে এসব বিষয় দায়ী।’

সওজের প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, ‘দেশের কিছু সড়কে ফুলে ওঠা বা দেবে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে। আরআইআই সূচকের মান বাড়াতে এসব সড়কও ভূমিকা রেখেছে।’

সওজের নেটওয়ার্কভুক্ত ভাঙাচোরা সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর ৯ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এইচডিএমের প্রতিবেদনে। যদিও সওজের প্রকৌশলীদের অভিযোগ, সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর যে পরিমাণ বরাদ্দের প্রয়োজন হয়, বাস্তবে বরাদ্দ দেয়া হয় তার চেয়ে আনেক কম। তারা বলছেন, আগামী অর্থবছরের জন্য যেখানে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে তার বিপরীতে পাওয়া যাবে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বিঘ্নিত হয় বলে মনে করছেন তারা।

বিষয়টি স্বীকার করে সওজের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ পেলে সড়কের মান আরো ভালো হতো।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন