সাজেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ একদিনে দুজনের মৃত্যু

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া দুজনই সাজেক ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম লংথিয়ান পাড়ার বাসিন্দা। মৃতরা হলেন গবতি বালা ত্রিপুরা (৫৫) ও দরুং ত্রিপুরা (৬০)। এর মধ্যে গতকাল ভোররাতে গবতি বালা ত্রিপুরা নামে এক নারী এবং বেলা ১টার দিকে দরুং ত্রিপুরা নামে এক পুরুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের লংথিয়ান পাড়ায় আরো ২০ জনের অধিক এবং আশপাশের পাড়ায় নারী-শিশু, বৃদ্ধসহ অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন।

সাজেক ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বনবিহারী চাকমা বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে ইউনিয়নের লংথিয়ান পাড়া, অরুণ পাড়া, কাইজা পাড়া, রায়না পাড়া ও শিয়ালদহসহ আশপাশের বেশকিছু গ্রামে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এসব গ্রামের আশপাশে কোনো হাসপাতাল কিংবা কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকায় স্থানীয়রা বৈদ্যদের (তান্ত্রিক) কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সড়কপথে যাতায়াতের ব্যাবস্থা না থাকায় হেঁটে সাজেকের মাচালং বাজার কিংবা বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর হাসপাতালে রোগী পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।’

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, ‘এক সপ্তাহ ধরে সাজেকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। সুপেয় পানির সংকটের কারণে প্রতি বছরই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন সাজেকের বাসিন্দারা।’ বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, ‘ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে রয়েছে। আক্রান্ত এলাকাটি অনেক দুর্গম এলাকা বলে জানতে পেরেছি। হেঁটে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আক্রান্তের খবর পাওয়ার পরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ, পানিসহ মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে।’

রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, ‘সাজেকের ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল (আজ) তারা সেখানে পৌঁছবেন। এরপর জানা যাবে সেখানকার কী অবস্থা, কতজন আক্রান্ত হয়েছেন এসবের বিস্তারিত তথ্য।’

প্রসঙ্গত, রাঙ্গামাটির দুর্গম উপজেলাগুলোয় প্রতি বছরই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। বিশেষত আয়তনে জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়ন, জুরাছড়ির দুমদুম্যা ও মৈদং ইউনিয়ন এবং বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের বাসিন্দারা ডায়রিয়াসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। এসব এলাকায় সারা বছরই থাকে সুপেয় পানির সংকট। দুর্গম এসব এলাকার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলা সদরে এসে চিকিৎসা নিতে না পারায় অসুস্থ হয়ে মারা যায়। সর্বশেষ ২০২০ সালে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে হাম ও হাম সদৃশ রোগে আক্রান্ত হয়ে আট শিশুর মৃত্যু হয়। ওই সময় কয়েক ধাপে জরুরি টিকা ক্যাম্পেইন করে হাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন