তাপপ্রবাহ বজায় থাকবে আরো ৫-৬ দিন

এবার বন্ধ হলো মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশব্যাপী চলমান তাপপ্রবাহের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে আজ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত মঙ্গলবার একই কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম চারদিন (৫-৮ জুন) বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়, যে ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে আরো পাঁচ-ছয়দিন।

গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হক হেনরি স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে একদিনের ছুটির ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, আগামী পাঁচ-ছয় দিন দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তার কারণে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর আগে তাপপ্রবাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর বেসরকারি ও সরকারি বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে পাঁচ দফা নির্দেশনাও দেয় মাউশি। গত সোমবার মাউশির সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) রুপক রায় স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। ৫ জুন থেকে বন্ধ থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। 

জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘যেসব সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে প্রাথমিক শ্রেণী (ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ) রয়েছে সেখানেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’

মাউশির অফিস আদেশে বলা হয়, তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা অনুসারে আগামী পাঁচ-ছয়দিন দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে যেসব বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে, সেসব বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শ্রেণী কার্যক্রম ৮ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। 

পাঁচ দফা নির্দেশনায় বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত থাকবে। রোদের মধ্যে খেলাধুলাসহ অন্যান্য কার্যক্রম করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে নিজ বাসা থেকে পর্যাপ্ত পানি নিয়ে আসবে। এতে আরো বলা হয়, শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের জন্য সব জানালা ও দরজা সম্পূর্ণ খোলা রাখা এবং কক্ষে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক পাখা সক্রিয় রাখতে হবে।

গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের দুটি জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৫৭টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের ওপর দিয়ে চলমান এ তাপপ্রবাহ আরো পাঁচ-ছয়দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গত ২৯ মে থেকে তাপপ্রবাহের মুখে পড়ে দেশ। এতে তীব্র গরম বাড়ার পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ধান, পাট, কলা, আম, লিচুসহ নানা ফসল। 

দেশে ঘন ঘন তাপপ্রবাহের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ভারতীয় উপমহাদেশ পুরোটাই এখন উত্তপ্ত। যদি মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকত এবং যথাসময়ে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হওয়া আরম্ভ করত, তাহলে ভারতীয় উপহাদেশ তথা দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, মেঘালয়, মিয়ানমার, অরুণাচল, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড এসব অঞ্চলের আকাশে সারি সারি মেঘ তৈরি হতো এবং থেমে থেমে বৃষ্টি হতো। যেহেতু সময়মতো সৌসুমি বায়ু আসছে না, সে কারণে বৃষ্টিপাতের অপ্রতুলতা দেখা দিচ্ছে। বিদ্যমান তাপপ্রবাহের এটাই একমাত্র কারণ।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‌ভারতীয় উপমহাদেশের আকাশ এখন একেবারেই মেঘমুক্ত। ফলে সূর্যের প্রখর আলো সূর্য উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত আসতে থাকে। ফলে আমাদের এ অঞ্চল দিনের পর দিন বেশ উত্তপ্ত হয়। তাছাড়া বাতাস যদি জোরে প্রবাহিত হতো তাহলেও একটু ঠাণ্ডা লাগত। বাতাসের গতিবেগ কম, কিন্তু জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কম। এসব কারণ এবং নিচের বাতাস ওপরে না যাওয়া এবং ওপরের ঠাণ্ড বাতাস নিচে না নামাও একটা বড় কারণ এ তাপপ্রবাহের।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন