২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.২ শতাংশ

জ্বালানি সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন ব্যাহত: বিশ্বব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপের কারণে চাপে পড়েছে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাত। কর্মসংস্থানে উন্নতি হলেও খানা আয় এখনো কভিডপূর্ব অবস্থায় ফিরতে পারেনি বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষা এবং আমদানির নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগের পূর্বাভাসই বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। যদিও সরকার চলতি ও আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য ব্যাহত হওয়া ও বিনিময় হারের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশসহ নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা আমদানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। এর ফলে এসব দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতিতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ কারণে এসব দেশে আমদানি নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হচ্ছে।

আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেশকিছু খাদ্যপণ্য রফতানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম কমে এসেছে। তা সত্ত্বেও এসব দেশ বিদ্যমান খাদ্য রফতানি নিষেধাজ্ঞা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বহাল রাখতে পারে।

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, উচ্চমাত্রায় খেলাপি ঋণ, পুঁজি ও ব্যাংক খাতে সুশাসনের দুর্বলতার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের আর্থিক খাতে উচ্চঝুঁকি রয়ে গেছে। এসব দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশে করপোরেট খাতে সুশাসনের দুর্বলতা ও পুঁজি সংকটের কারণে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বেড়েছে। 

এছাড়া বেশি পরিমাণে সরকারি ও বৈদেশিক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং আর্থসামাজিক পরিস্থিতির কারণে এসব অঞ্চলে আর্থিক সংকটের ঝুঁকি বাড়ছে। এসব সংকট শেষ পর্যন্ত দেশের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে বলেও বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। 

বিশ্বব্যাংক আরো বলেছে, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে আর্থিক নীতির কঠোরতা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিগত সুদহার বাড়িয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে সীমা আরোপিত থাকায় অর্থনীতিতে তার সুফল পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাংক আশা করছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আর্থিক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২৪ সালে তা আরো কমে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। প্রতিবেদনে ভারতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, ভারতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এটি গত জানুয়ারিতে করা পূর্বাভাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কম। 

সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ, জলোচ্ছ্বাস, খরা এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। এটি মোকাবেলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তার জন্য মূল্য দিতে হতে পারে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন