সংবাদ সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এবারের বাজেট নির্বাচনের বাজেট হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম ও সিপিডির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‌‌এবারের বাজেট নির্বাচনের বাজেট হয়নি। রাজনৈতিক উপাদানবিবর্জিত আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাজেট তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনের বছরের বাজেটে খরচযোগ্য তদারকিহীন টাকা বরাদ্দ থাকে। যদি নির্বাচন করতে চান, তাহলে সামাজিক সুরক্ষা ও জনতুষ্টিতে বেশি বরাদ্দ দেয়ার কথা। ওএমএসের মতো সামাজিক সুরক্ষায় বেশি বরাদ্দ থাকার কথা। এসব নেই।’

ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম ও সিপিডির যৌথ আয়োজনে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষগুলো কী পেল?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। 

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‌নির্বাচনের বছরে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা কর দেয়ার প্রস্তাব কেউ দেয়? এতে বড়জোর ৩০০-৪০০ কোটি টাকা আসবে। এটি রাজনীতিহীন নির্বাচনের বছরের বাজেট হয়ে গেছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হলে অনেকেই এমন করের প্রস্তাবে রাজি হতেন না। কিন্তু এ নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়নি, রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা হয়নি। বাজেট প্রণয়নে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগত অসংগতি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আগের মতো বাজেটের গাম্ভীর্য নেই। বাজেট এখন প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক জবাবদিহি না থাকলে বাজেট সঠিকভাবে প্রস্তুত করা যায় না। বাস্তবায়নও করা যায় না। রাজনৈতিক উত্তরণের বছরে অর্থনৈতিক সংকটের উত্তরণ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।’

সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও নাগরিক প্লাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সিপিডির ফেলো ও নাগরিক প্লাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক ড. দিবালোক সিংহ, নাগরিক প্লাটফর্মের কোর গ্রুপের সদস্য আসিফ ইব্রাহিম, ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (ব্র্যাক আইইডি) প্রোগ্রাম হেড সমীর রঞ্জন নাথ এবং সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, ‘‌শিক্ষা বাজেট গত বছরের তুলনায় কমেছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। শিক্ষা খাতে এ অর্থবছরে কী কী বাস্তবায়ন করা হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।’ ড. দিবালোক সিংহ বলেন, ‘‌দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। চারজন সেবিকা ও পাঁচজন ডাক্তার ১০ হাজার রোগীর জন্য কাজ করছেন, কিন্তু দরকার ২৩ জন। স্বাস্থ্যে এখনকার বাজেটের চেয়ে তিন গুণ বাড়াতে হবে।’

তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘এবার বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তায় গুরুত্ব কম দেয়া হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার বিস্তারিত তথ্য নেই। কার কাছে যাবে? কী পরিমাণ যাবে? ২০২২-এ কত খরচ হয়েছে সে তথ্যও তারা দিতে পারেনি।’ ড. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘‌নারী বাজেট শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এটি সান্ত্বনা বাজেট। নারীদের জন্য বাজেট কীভাবে খরচ হচ্ছে, কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে, যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেটি মনিটরিংয়ের জন্য একটি বিভাগ করতে পারলে ভালো হতো।’

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‌আমরা সুশাসনের সঙ্গে ব্যয় করতে পারছি কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ। বাজেট বাস্তবায়নের সঙ্গে বর্তমানের যে সংকট তার একটি আন্তঃসম্পর্ক আছে। সরকারের ১ হাজার ২৫০টি প্রজেক্টের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ ওভার রান করেছে। খরচ বাড়ছে। সুশাসনের অভাব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রজেক্টগুলো বারবার রিভিউ করা হচ্ছে, বাজেট বাড়ানো হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন