কবি ও শিল্পীর যুগলবন্দি

সঞ্জয় চক্রবর্তী ও রুহিনা ফেরদৌস

কবি শামসুর রাহমান ও আমিনুল ইসলামের প্রিন্ট ফোলিও

শিল্প আর সাহিত্যের সম্পর্ক অনাদিকালের। যার কারণে পৃথিবীর প্রাচীন সব সভ্যতায় আমরা দেখি পুরনো সাহিত্যের উপস্থাপন হয়েছে কখনো নগর সভ্যতার দেয়ালে খোদাই বা চিত্রকর্মে অথবা কখনো নিত্যব্যবহার্য শিল্পবস্তুতে। কিন্তু সাহিত্য আর শিল্পে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে উপস্থাপনের নজির মনে হয় ইতিহাসে বিরল। পুরাকালে এমন নজির আমরা দেখি চৈনিক সভ্যতায়। কবিতা আর চিত্রকর্মকে পাশাপাশি রেখে সম্ভবত প্রথম ওরাই কাজ করে। দশম শতাব্দীতে কবি ও চিত্রকর সু সি-কে (Su Shih) এমন উদ্যোগের পুরোধা ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়। উত্তরের সুঙ ডাইনেস্টির এ দার্শনিক ‘কবিতার মধ্যে ছবি অথবা ছবির মধ্যে কবিতা’ দর্শনের প্রবক্তা। প্রকৃতির অনুভূতিকে ছবির মধ্যে আরো নির্দিষ্টভাবে উপস্থাপনের জন্য কবিতাকে চিত্রের অংশ করার প্রবণতা এ সময় থেকে শুরু হয়। তাওবাদি দার্শনিক লাউৎজের দর্শনচর্চা এ নির্দিষ্ট ধরনের চিত্ররচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, একই সঙ্গে চীনের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক কনফুসিয়াসেরও ভূমিকা ছিল চাইনিজ ক্যালিগ্রাফি চিত্ররচনায়। লাউৎজের দর্শন যেমন আধ্যাত্মিকতাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিপরীতে কনফুসিয়াসের দর্শনের কেন্দ্রে রয়েছে শৃঙ্খলা। আর এ দুইয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয় চিত্ররচনা। এ কারণে চীনের রাজাদেরও রাজ্যপরিচালনার শিক্ষা লাভের পাশাপাশি চর্চা করতে হতো চিত্রবিদ্যা।

পদ্য বা কবিতা পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতিতে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ছিল। কারণ প্রাচীন সকল সাহিত্য মূলত পদ্যের ঢঙে লেখা হতো। এর মূল কারণ ছিল পদ্য ছন্দে গাঁথা আর ছন্দে গাঁথা পদ্যকে মুখস্থ করা যেত। আর এসব পদ্য যখনই পাণ্ডুলিপিতে লেখা হয়েছে তখন তা অলংকৃত হয়েছে নানা বর্ণের ছবি দিয়ে। পশ্চিমের এমন উদাহরণ যেমন আমরা দেখি ম্যানুস্ক্রিপ্ট পেইন্টিংয়ে, আবার পূর্বে আমরা দেখি শাহনামা বা পাল পুঁথিচিত্রে। রেনেসাঁ-উত্তরকালে কবিতার ঢঙে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। পাশ্চাত্য সমাজে লিবারেল আর্টসের অংশ এ কবিতা সাহিত্য সম্ভ্রান্ত সমাজে ছিল বড় আদরণীয়। এ কারণেই রেনেসাঁর শিল্পী ভাস্কর মাইকেলেঞ্জেলোকে আমরা চিত্রশিল্পীর পাশাপাশি কবি হিসেবেও পাই। একই সমসাময়িক সময়ে আমরা কাব্যগুণসম্পন্ন চিত্র উদাহরণ পাই পারস্যের শিল্পী বিহযাদের সাফাবি শৈলীতে। পারস্যের পদ্য শাহনামা আর সাফাবি শৈলীতে তখন বিভোর ভারতের মোগল বাদশাহরাও। আসলে এ সময় বাংলা সাহিত্যেরও গৌরবময় মধ্যযুগ চলছে। যে মধ্যযুগে আমরা আলাওল, দৌলত উজির, সৈয়দ সুলতানের মতো বিখ্যাত কবিদের পাচ্ছি। এ সময়েই রচিত হচ্ছে বৈষ্ণব পদাবলি আর মঙ্গলকাব্য। রচিত হচ্ছে ইউসুফ-জুলেখা, নবী বংশ, রসুল চরিত প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ। মধ্যযুগের কাব্যগ্রন্থগুলো হাতে লেখা হতো আর অলংকৃত হতো নানা বর্ণের চিত্রশিল্পে, যার কিছু নমুনা এখনো সংরক্ষিত আছে নানা লাইব্রেরি ও জাদুঘরে।

জীবনের সঙ্গে শিল্প-সাহিত্যের যে যোগাযোগ ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের জ্ঞানচর্চায়। পূর্বে অর্থাৎ ভারতবর্ষে জীবনের প্রায় সব কর্মকাণ্ডকে কলা বা শিল্প হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। প্রাচীন ভারতের সৌভাগ্যভাস্কর, নারদশিল্পশাস্ত্র, শুক্রনীতিসার প্রভৃতি গ্রন্থে চৌষট্টিকলার কথা উল্লেখ রয়েছে, যাতে চিত্র, গীত, বাদ্য, নাট্য, কাব্য, প্রসাধন, রন্ধন প্রভৃতি নানা ধরনের শিল্পের বিষয়ে উল্লেখ আছে যা সমাজে চর্চা হতো। তবে পাশ্চাত্যে বিদ্যাচর্চায় কিছু বিভেদ লক্ষণীয়। কায়িক শ্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত বিদ্যাচর্চা সমাজের অভিজাত শ্রেণীতে চর্চা হতো না। সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলে-মেয়েরা যেসব বিদ্যাচর্চা করতে পারত সেগুলোকে বলা হতো মুক্তবিদ্যা বা লিবারেল আর্টস, যার মধ্যে ছিল গণিত, যুক্তিবিদ্যা, ছন্দশাস্ত্র বা কাব্য, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও সংগীত। ছবি আঁকা, ভাস্কর্য রচনা, ছুতোর কাজ, কাপড় বোনা ইত্যাদি ইতর কাজ বলে বিবেচিত হতো। এসব ভাবনা থেকে রেনেসাঁর সময় সৃষ্টিশীল মানুষদের আমরা বেরিয়ে আসতে দেখি। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছিল শিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো, যিনি সম্ভ্রান্ত বংশীয় হওয়ার পর চিত্র ও ভাস্কর্য রচনা করেছেন কবিতা রচনার পাশাপাশি। পাশ্চাত্য সমাজে রেনেসাঁর এই প্রভাব পরবর্তী সময়ে আমরা রোমান্টিক শিল্পী উইলিয়াম ব্লেকের ক্ষেত্রেও লক্ষ করি। ব্লেক কাব্য ও চিত্ররচনায় ছিলেন সমান পারদর্শী। তিনি শিল্প ইতিহাসে যেমন একজন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী, তেমনি সাহিত্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি। ১৮১৩ সালে রোমান্টিক ভাবধারায় কবি ওয়ালটার স্কটের ‘রোকবি’ কবিতার বইয়ে যেমন আমরা ইলাস্ট্রেশন করতে দেখি শিল্পী উইলিয়াম টার্নারকে। ব্রিটিশ ভারতে কবিতা ও চিত্রের যুগলবন্দির এক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ দেখতে পাই ঠাকুর পরিবারের লেখক ও চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথের ‘কৃষ্ণলীলা’ সিরিজের ক্ষেত্রে। অবনীন্দ্রনাথ ‘কৃষ্ণলীলা’ সিরিজের ছবিতে ব্যবহৃত কবিতার পঙ্‌ক্তি নিয়েছিলেন বাংলার মধ্যযুগের কবি গোবিন্দ দাসের (১৫৩৭-১৬১২) রচনা থেকে। তার এ সিরিজের ছবিগুলোয় চিত্র ও কাব্যের জন্য প্রায় সমপরিমাণ জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে। আধুনিক ভারতীয় শিল্প ইতিহাসে চিত্র ও শিল্পের এমন উদাহরণ বিরল। তবে বাংলার ইতিহাসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি শিল্প-সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, আধুনিক বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির সূতিকাগার এ ঠাকুর বাড়িই। এ বাড়ি যেমন শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক তৈরি করেছে আবার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সমানভাবে। রবীন্দ্রনাথকে যেমন আমরা দেখছি একদিকে কবি হিসেবে আবার জীবনের শেষভাগে তাকে দেখতে পাই চিত্রকর হিসেবে। বাংলাসহ সমস্ত ভূভারত তখন ঠাকুরবাড়ির শিল্প-সাহিত্যের চর্চার মুখাপেক্ষী।

বাংলা লোকসাহিত্যের কবি জসীমউদ্‌দীন তাঁর ‘ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়’ স্মৃতিকথায় লিখে গেছেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির গল্প। জানতে পারি তার রচনা সম্পর্কে অবনীন্দ্রনাথের আগ্রহের বিষয়ে। সাহিত্য আর শিল্পে এ সময় আরেকটি পরিবারের নাম উঠে আসে আর সেটি হলো রায়চৌধুরী পরিবার। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একাধারে লেখক ও চিত্রশিল্পী। তার পুত্র সুকুমার রায় চৌধুরীও তাই। সুকুমার রায়চৌধুরীর ‘আবোল তাবোল’ বা ‘হ-য-ব-র-ল’ বাংলা সাহিত্যের অনন্য সৃষ্টি। যেখানে একইজনকে আমরা কবি ও শিল্পীর ভূমিকায় পাই। তবে এসবের ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আধুনিক বাংলা সাহিত্যে কাব্য ও চিত্রের যে সহাবস্থান তা এসবের ধারাবাহিকতায় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে বটতলার পুঁথি সাহিত্যের বিষয়টিও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হয়। 

কলকাতার আর্ট কলেজ ঔপনিবেশিক ভারতে শিল্পচর্চার পাশাপাশি সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সমান ভূমিকা রেখেছিল। কলকাতার সাহিত্যপাড়ায় আর্ট কলেজের শিল্পীদের যোগাযোগ ছিল প্রত্যক্ষ। কবি জসীমউদ্‌দীন যেমন ওই সময় ঠাকুরবাড়িতে যাতায়াত করেছেন, ঠিক তেমনি সমসাময়িক সময়ে আর্ট কলেজে শিল্পশিক্ষা গ্রহণ করেছেন ময়মনসিংহের জয়নুল আবেদিন। বাংলার লোকসংস্কৃতির শিল্প-সাহিত্যে এ দুজন পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জসীমউদ্‌দীন রচিত ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ বইয়ে পরবর্তী সময়ে ছবি আঁকেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান ওই সময়ে যারা আর্ট কলেজে ছিলেন তারা সবাই কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন করেছেন। আবার তাদের ড্রয়িং নিয়মিত ছাপা হতো বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এভাবে সাহিত্যের সঙ্গে, কবিতার সঙ্গে শিল্পীদের যোগসূত্র রচিত হচ্ছিল। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১-এর মধ্যে আমাদের যে বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ, সেখানে কবি, সাহিত্যিক, চিত্রকর যূথবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন। শিল্পী রশিদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর যেমন ছবি আঁকায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন, ঠিক তেমনি ভীষণ ভালো কবিতাও লিখতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত ‘ঊনসত্তুরে ছড়া’ শিল্প ও সাহিত্যের ছিল এক অনন্য যুগলবন্দি। যেখানে রফিকুন নবী ছবি এঁকেছেন এবং ছড়া লিখেছেন রশীদ চৌধুরী, শওকত ওসমান, সিকান্দার আবু জাফর, সুফিয়া কামাল, সরদার জয়েনউদ্দীন, বুলবন ওসমান, শামসুর রাহমান, শাহরিয়ার কবিরসহ স্বনামধন্য কবি ও সাহিত্যিকরা। স্বাধীনতা-উত্তরকালে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শকে বারবার আঘাত করেছে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। আর তা প্রতিহত করতে বারবার সজাগ হয়েছে বাংলার কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পী সমাজ। ১৯৮৬ সালে সাহিত্যিক আবুল হাসনাত সম্পাদিত ‘শান্তির জন্য পঙ্‌ক্তিমালা’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় একটি কবিতার বই। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছিলেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। বিভিন্ন কবির কবিতা নিয়ে প্রকাশিত বইটি রেখাচিত্র দিয়ে অলংকৃত করেছিলেন সমসাময়িক সময়ের স্বনামধন্য শিল্পীরা।

 কবি ও শিল্পীদের এ ধরনের প্রকল্প একেবারে এক কালোত্তীর্ণ শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে যায় ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত কবি শামসুর রাহমান ও আমিনুল ইসলামের একটি প্রিন্ট ফোলিও প্রকাশের ক্ষেত্রে। লেখক, সাংবাদিক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির প্রকল্পটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তার ভাষ্যমতে, আনুমানিক ৫০টির মতো এ ফোলিও প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেছিলেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম। প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় ১০টি কবিতা ও আমিনুল ইসলামের ১০টি ছবি একই পৃষ্ঠায় পাশাপাশি কাগজে সিল্কস্ক্রিনে প্রিন্ট হবে। কবিতাগুলো ছিল আসাদের শার্ট, শৈশবের বাতি-অলা আমাকে, মাঘের দুপুরে, এখানে দরজা ছিল, কোন দৃশ্য সবচেয়ে গাঢ় হয়ে আছে?, পান্থজন, পিতা, কৃতজ্ঞতা স্বীকার, প্রেমের কবিতা এবং কখানো আমার মাকে। কবিতা ও চিত্র একই কাগজে ছাপা হওয়ার পর সে সময় বনানীর ‘লা গ্যালারি’-তে (অধুনালুপ্ত) একসঙ্গে কবি ও শিল্পী বসে বিভিন্ন রঙের কলম দিয়ে প্রিন্টগুলোর ওপর স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রিন্ট ফোলিওটি তৈরিতে ‘এডাব’ সহযোগিতা করেছিল।

কবিতার রয়েছে বিমূর্ত অনুভূতি, তা উপলব্ধি করেই করা হয় ইলাস্ট্রেশন। এখানে ইলাস্ট্রেশন মানে কবিতাকে আরো সম্প্রসারাণ করা, অব্যক্ত ভাব, অনুভূতিগুলোকে তুলে ধরা। বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পীরা যূথবদ্ধ হয়ে এ কাজগুলো করেছেন। কবিতার ভিজ্যুয়াল ক্যানভাসে, কাগজে ফুটে উঠেছে। ‘শামসুর রvহমানের প্রিয় ১০টি কবিতা, আমিনুল ইসলামে ছবি’ তাই কবিতা ও চিত্রশিল্পের যুগলবন্দির অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে|। কবি ও শিল্পীদের এ যুগলবন্দি বলে কবিতার সঙ্গে চিত্রশিল্পের প্রাচীন ও গভীর যোগসূত্রের কথা।

সঞ্জয় চক্রবর্তী: শিল্পী ও গবেষক, শিক্ষক; শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রুহিনা ফেরদৌস: সাংবাদিক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন