আমাকে অনুপ্রাণিত করেন ‌নভেরা

নভেরা ডেস্ক

রূপান্তর-২

জেসমিন আকতার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ‘‌রূপান্তর-২’ নামের স্থাপনা শিল্পের জন্য সম্প্রতি ২৫তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার ২০২৩’ গ্র্যান্ড প্রাইজ অর্জন করেছেন

শৈশব শিল্প: ছোটবেলা থেকেই আঁকতে ও পুতুল গড়তে ভালো লাগত। ১০ বছর বয়সে বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে প্রথম একাডেমিকভাবে শিল্পশিক্ষার সুযোগ হয়। সেখানেই চিত্রকলার নানা মাধ্যম সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করি। শৈশবে ভাস্কর্যের শুরুটা হয়েছিল একটু অন্যভাবে। ছোটবেলায় মাকে দেখেছি বই পড়তে। একদিন মায়ের একটি বইয়ের প্রচ্ছদ আমাকে আকৃষ্ট করল। সেখানে ছিল কাদামাটির তৈরি কয়েকটি ভাস্কর্যের ছবি। এখান থেকেই আমি স্কুলজীবনে ভাস্কর্য নির্মাণে অনুপ্রাণিত হই এবং গ্রামের পুকুর থেকে কাদামাটি তুলে এনে অনুরূপ একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করি, যার ধারাবাহিকতা বেশ কিছুদিন অব্যহত ছিল। 

রূপান্তর-২: ব্যক্তিজীবনে নানা অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, সংকট, আকাঙ্ক্ষা, কামনা, বাসনার অস্তিত্ব অনিবার্য সত্য। কিন্তু ব্যক্তির এ সত্যগুলো অবদমন করে তার সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের মানদণ্ডগুলো। এমন পরিস্থিতিতে আমার মন তার অবদমিত অনুভূতির প্রকাশ ঘটায় স্বপ্নে, কল্পনায়, অবচেতনে বা স্বতঃস্ফূর্ততায়। তাই স্বপ্নের নানাবিধ অনুষঙ্গ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি অবচেতনকে খুঁজেছি স্বপ্নের অভ্যন্তরে। স্বপ্ন আমাদের কিছু অধিজাগতিক অভিজ্ঞতা দেয়, যা বাস্তবিক অভিজ্ঞতার চেয়ে ভিন্ন। স্বপ্নজগতের মতোই ফর্মের রূপান্তর যেন বৈশিষ্ট্য হিসেবে বেলুনের সঙ্গেই মেলে। বেলুন থেকে মানব অবয়ব অথবা মানব অবয়ব যেন আপাত ওজনশূন্য বেলুনের দিকে রূপান্তরিত হয়ে সেই অধিজাগতিক স্বপ্নজগতের একটি প্রকাশ দর্শকের কাছে হাজির করতে পারে তারই প্রচেষ্টা আমার এ স্থাপনা শিল্পে।

স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যম: ভাস্কর্যের ঐতিহ্যগত উপাদানের (কাদামাটি, কাঠ, পাথর, ধাতু ইত্যাদি) পাশাপাশি দৈনন্দিন ব্যবহৃত অবজেক্ট (খড়, সুতা, কাপড়, বাঁশ, কাগজ, পলিথিন ইত্যাদি) ও অবস্তুগত উপাদানও পছন্দ করি। অর্থাৎ নানা মাধ্যমে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আমার বেশির ভাগ শিল্পকর্মই মিশ্র মাধ্যমে করা। 

প্রিয় শিল্পী ও কাজ: প্রিয় শিল্পীর মধ্যে অন্যতম হলেন ভাস্কর নভেরা আহমেদ। ভাস্কর্যের পথিকৃৎ এ শিল্পীর কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে তার ঢাকা পর্বের ভাস্কর্যে দেখতে পাই, পাশ্চাত্যের সঙ্গে দেশীয় লোকঐতিহ্যের সমন্বয়, গড়নের সরলীকরণ। এছাড়া প্রাধান্য পেয়েছে নারীর অভিজ্ঞতা, যা নারী হিসেবে আমাকেও ভিন্নভাবে ভাবায়। 

প্রদর্শনী-পুরস্কার: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী ২০১৯-তে ভাস্কর্যমাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, প্রথম বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী ২০১৮-তে ভাস্কর্যমাধ্যমে সম্মানসূচক পুরস্কার, ১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন