খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম দুই বছরের সর্বনিম্নে

বণিক বার্তা ডেস্ক

মে মাসে এফএও মূল্যসূচক কমে ১২৪ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমেছে ছবি: রয়টার্স

খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম কমে দুই বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে উদ্ভিজ্জ তেল, দানাদার খাদ্যশস্য ও দুগ্ধপণ্য। তবে চিনি ও আমিষ পণ্যের দাম বেড়েছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

এফএও প্রতি মাসেই খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া খাদ্যপণ্য। মে মাসে মূল্যসূচক কমে ১২৪ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমেছে। এর আগের মাসে গড় সূচক ছিল ১২৭ দশমিক ৭ পয়েন্ট।

মে মাসের স্কোর ২০২১ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। গত বছরের মার্চে এ সূচক বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দামে এমন উল্লম্ফন দেখা দেয়। সে তুলনায় গত মাসে সূচক কমেছে ২২ শতাংশ।

এদিকে নতুন করে কৃষ্ণসাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তি সম্প্রসারণের মুখ দেখায় আশার সঞ্চার ঘটেছে। ফলে ইউক্রেন থেকে শস্য রফতানি আরো বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে সরবরাহ বাড়ারও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরা। এ বিষয়গুলো দানাদার খাদ্যশস্যের দাম কমাতে রসদ জুগিয়েছে। এফএও মূল্যসূচক অনুযায়ী, গত মাসে এসব পণ্যের বৈশ্বিক দাম আগের মাসের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।

২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন ইতিহাসের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি)। খাদ্যশস্যের বাজার শীর্ষক এক প্রতিবেদনে আইজিসি নতুন করে খাদ্যশস্যের উৎপাদন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। আগের মাসের পূর্বাভাসের তুলনায় উৎপাদন আরো ৩০ লাখ টন বাড়বে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। মোট উৎপাদনের পরিমাণ ধরা হয়েছে ২২৯ কোটি ৪০ লাখ টন, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। ২০২২-২৩ মৌসুমে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২২৯ কোটি ১০ লাখ টন। 

দানাদার খাদ্যশস্যের গড় দাম কমলেও মে মাসে চালের দাম বেড়েছে। কয়েক মাস ধরেই পণ্যটির বাজারদর ঊর্ধ্বমুখী। এফএও বলছে, শীর্ষ দেশগুলো থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। এর আগের মাসেই শস্যটির সরবরাহ সংকট ও দাম বাড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এফএও।

এদিকে ২০২৩-২৪ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৫২ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি। আগের মাসের মতোই এটির পূর্বাভাস অপরিবর্তিত। বাণিজ্য পূর্বাভাসও ৫ কোটি ৪০ লাখ টনে অপরিবর্তিত। তবে শস্যটির ব্যবহার ১০ লাখ টন বেড়ে ৫২ কোটি টনে উন্নীত হতে পারে।

এফএওতে উদ্ভিজ্জ তেলের মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় ৯ শতাংশ কমেছে। এর অর্থ সব ধরনের তেলবীজ সরবরাহ চাঙ্গা। বিপরীতে পাম অয়েলের চাহিদা দিন দিন কমেছে। অন্যদিকে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক দাম ৩ শতাংশ কমেছে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় মৌসুমি উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের বাজারদর নিম্নমুখী।

এল নিনো আবহাওয়া পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে চিনি সরবরাহ হুমকির মুখে বলে মনে করছে এফএও। এতে অন্যান্য পণ্যের দাম কমলেও এটির বেড়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ মাসের মতো দাম বাড়ল। গত মাসে চিনির মূল্যসূচক বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে চিনির বাজারের জন্য স্বস্তির খবর ব্রাজিলের আবহাওয়া পরিস্থিতি ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নিম্নমুখী দাম। এক মাসের ব্যবধানে বাড়লেও রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দাম কমে এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন