বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) জন্য ব্যাটারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান প্রোলোজিয়াম উত্তর ফ্রান্সে গিগাফ্যাক্টরি তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তাইওয়ানের বাইরে এটিই হবে কোম্পানির প্রথম কারখানা। সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে বৈঠকে প্রোলোজিয়ামের প্রধান নির্বাহী ভিনসেন্ট ইয়াং এমন ঘোষণা দেন। খবর রয়টার্স।
মাখোঁ ফ্রান্সে চারটি গিগাফ্যাক্টরি স্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যেন দেশের দরিদ্র ও সাবেক খনিজীবীদের মধ্যে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আসে। কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি ফ্রান্স পরিণত হয় ইউরোপের জ্বালানি খাতের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে। এর জন্য সরকারি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বৈঠক করেন মাখোঁ। ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন ভর্তুকি সুবিধার বিষয়ে জানানো হয়। বর্তমান ঘোষণাটি সে প্রকল্পেরই আংশিক বাস্তবায়ন। তবে প্রোলোজিয়াম শুধু না, পাশাপাশি অঞ্চলেই কারখানা স্থাপন করবে চীনের এনভিশন এইএসসি, স্থানীয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ভারকর ও এসিসি কনসোর্টিয়াম।
গিগাফ্যাক্টরি তৈরিতে আগ্রহী মার্সিডিজ ও স্টেলান্টিস। চীনের বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান টেসলাও স্থাপন করবে উৎপাদন কেন্দ্র। যদিও জার্মানি ও হাঙ্গেরিতে কারখানা স্থাপিত হয়েছে, তবু প্রযুক্তির পথে ফ্রান্সের হঠাৎ দৌরাত্ম্য চোখে পড়ার মতো। বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেন, ‘ফল আকাশ থেকে পড়েনি। এ পরিস্থিতি তৈরির পেছনে আমরা ছয় বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন দুনিয়ার সামনে পরিবর্তিত হচ্ছে ফ্রান্স।’
বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোপে ঘাঁটি তৈরির জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। বিশেষ করে সরবরাহ চেইন ও ইভির ব্যাটারির প্রতি দেয়া হচ্ছে গুরুত্ব। চীনা, কোরীয় ও জাপানি কোম্পানি ইউরোপে কারখানা তৈরিতে আগ্রহী। এদিকে ইউরোপও মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার জেরে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে মরিয়া। সে সূত্র ধরেই ফ্রান্স দেশের উত্তর অংশকে পরিণত করতে চায় অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে।
মার্কিন ও চীনা প্রতিযোগিতার মধ্যে ফ্রান্সকে পৃথক অবস্থান তৈরির নিশ্চয়তা দেবে। তবে মাখোঁর জোর প্রচেষ্টায় একটা বিষয় স্পষ্ট। ইউরোপীয় সরকারগুলোর মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে প্রতিযোগিতা। কারখানা স্থাপন ও সরবরাহ চেইনে নিজেদের আধিপত্য তৈরির জন্য ভারি বিনিয়োগ করে চলছে তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরাসি কূটনীতিক ও মাখোঁর নিকটজন দাবি করেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট প্রয়োজন অনুযায়ী ইউরোপের পক্ষে লড়াই করেন। কিন্তু এটা কেবল ইউরোপের পক্ষে লড়াইয়ের বিষয় না। ইউরোপের ভেতরকার লড়াইয়ের বিষয়ও।’
ফ্রান্সে প্রোলোজিয়ামের কারখানা স্থাপিত হলে তার মাধ্যমে ৫২০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ আসবে। তৈরি হবে তিন হাজার নতুন কর্মসংস্থান। ফ্রান্স ১১০ কোটি ইউরো প্রণোদনা দেবে কারখানা চালু করার ক্ষেত্রে। যদিও ফরাসি কর্তৃপক্ষ ও প্রোলোজিয়ামের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে। ২৩০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপন করেছে ব্যাটারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এসিসি। সেখানে ফরাসি সরকার প্রণোদনা দিয়েছিল ৮৪ কোটি ইউরো। ফ্রান্সের মতো জার্মানি ও ইতালিতেও কারখানা স্থাপন করতে চায় এসিসি।