কয়লা সংকটে বন্ধ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়লা সংকটে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্র। এতে চলমান লোডশেডিং আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল পায়রার। মূলত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলসহ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করত এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত ২৫ মে কয়লা সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। এর ১২ দিনের মাথায় কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধ হয়ে গেল। 

এক মাস ধরেই পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় ছিল। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও কেন্দ্রটি বন্ধের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘জ্বালানি সংকটের কারণে ৫ জুনের পর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সাময়িকভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।’

জ্বালানি আমদানি বাবদ বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকাই মূলত কেন্দ্রটি বন্ধের মূল কারণ। ডলারের সংস্থান না হওয়ায় পায়রার কয়লার বিল বকেয়া পড়ে ৩০ কোটি ডলারের মতো। যদিও ১০ কোটি ডলার কয়েক দফায় পরিশোধ হয়েছে বলে জানায় বিসিপিসিএল। নতুন করে কয়লার এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে। তবে এ কয়লা আমদানি করতে ২০-২৫ দিনের মতো সময় প্রয়োজন। তাই চলতি মাসজুড়ে কেন্দ্রটির উৎপাদন জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।

তীব্র তাবপ্রবাহের কারণে সারা দেশে যখন অসহ্য গরম চলছে এমন সময়েই বন্ধ হলো এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বর্তমানে বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৮৬৯ মেগাওয়াট। এ সময় লোডশেডিং ছিল ২ হাজার ৭০৪ মেগাওয়াট। এছাড়া গতকাল দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং ছিল আড়াই হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। 

পায়রার প্রথম ইউনিট বন্ধ হওয়ার আগ থেকেই দেশে লোডশেডিং বেড়ে যায়। বিতরণ কোম্পানিগুলো তা সামলাতে গিয়েও বেশ হিমশিম খায়। এখন এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখা আরো চ্যালেঞ্জ হবে বলে জানান তারা।

তবে পরিস্থিতি সামলাতে বিকল্প প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌‌পায়রা বন্ধ হওয়ার আগেই লোডশেডিং পরিস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আবার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে না আসা পর্যন্ত ওই অঞ্চলে যেসব তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে সেগুলো চালানো হবে। লোডশেডিং যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা।’

এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলে মোট ২০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে এসব কেন্দ্রের সক্ষমতা প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। যদিও এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেকগুলো উৎপাদনে না থাকায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন