তাপপ্রবাহে গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনাজপুরের লিচু

আসাদুল্লাহ্ সরকার, দিনাজপুর

তাপপ্রবাহ ও গরম বাতাসে দিনাজপুরে গাছেই নষ্ট হচ্ছে লিচু ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

তীব্র তাপপ্রবাহ ও পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ বা লু হাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়েছে দিনাজপুরের লিচুবাগানে। শত শত বাগানের লিচু পুড়ে গাছেই শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। অতি তাপমাত্রায় লিচুর গায়ে ফোসকা পড়ে যাচ্ছে। ফলে লিচু ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

গতকাল দিনাজপুরের বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন লিচুবাগান ঘুরে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ভরা মৌসুমে এ ধরনের দুর্যোগের চিত্র সামনে এসেছে। 

বিরল উপজেলার মাধববাটি, রবিপুর, মহেশপুর, পাকুড়া, রামপুর, রামচন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, শত শত লিচু গাছে থোকায় থোকায় লিচু ফোসকা পড়ে গাছেই ঝুলছে। বিরল উপজেলার উত্তর মহেশপুর গ্রামের লিচুবাগান মালিক মাওলানা ওয়াকিল আহমেদ বলেন, ‘আমার নিজের বাগানের শতাধিক গাছের লিচু বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে শুকিয়ে গেছে।’

একই এলাকার লিচু ব্যবসায়ী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ও তার এক বন্ধু মিলে চারটি লিচুবাগানের ফল চার বছরের জন্য কিনে নিয়েছেন। আর মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে লিচু নামানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করা ছিল। কিন্তু তার আগেই গত তিনদিনের বৈরী আবহাওয়ায় মাদ্রাজি জাতের লিচু পুরোপুরি এবং বোম্বাই জাতের লিচু ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এ ধরনের আবহাওয়া আরো তিন দিন থাকলে গাছ থেকে লিচু পাড়ার প্রয়োজন হবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

খানসামা উপজেলার কাচিনিয়া ইউনিয়নের লিচু ব্যবসায়ী সহসত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলার সদর ছাড়াও কাহারোল, বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলায় তার কমপক্ষে ২০ লাখ লিচু গাছেই ঝলসে নষ্ট হয়ে গেছে।’ তার ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

লিচুবাগান মালিক ও মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৩১ মে পর্যন্ত প্রতিটি গাছে লিচু ভালো ছিল। কিন্তু ১ জুন থেকে টানা চারদিন জেলার তাপপ্রবাহ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে গরম বাতাস প্রবাহিত হয়। ফলে একদিকে তাপপ্রবাহ অন্যদিকে গরম বাতাসের প্রভাবে গাছের পাকা ও আধপাকা লিচু গাছেই শুকিয়ে যাচ্ছে। লিচুর গায়ে ফোসকা বা পুড়ে যাওয়া দাগ হতে শুরু করেছে।

স্থানীয় রবিপুর এলাকার লিচুবাগান মালিক আব্দুল জলিল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ায় ঝলসে যাওয়া বিবর্ণ লিচু স্থানীয় বাজার ছাড়া জেলার বাইরে পাঠানো সম্ভব নয়। কেউ নেবে না। জেলার স্থানীয় বাজারে নিয়ে গিয়ে ১০০ লিচু ৫০ টাকা দরেও ক্রেতারা কিনতে চান না। ফলে এসব লিচু গাছ থেকে পাড়তে গেলে যে খরচ হবে তাতে না পাড়াই লাভজনক হবে।’

লিচুবাগান মালিক মো. হামিদুল হক বলেন, ‘গাছ থেকে লিচু পেড়ে, বেছে পরিষ্কার করে গুনে থোকা বা আঁটি বেঁধে খাঁচা বা ক্যারেটে সাজিয়ে দিতে কর্মীরা প্রতি হাজারে ২০০ টাকা করে নেন। ৫০০ লিচুর একটি খাঁচার দাম ১০০ টাকা এবং ১ হাজার লিচুর একটি খাঁচার দাম ১৫০ টাকা। আর ৫০০ লিচু ধরে এমন একটি প্লাস্টিকের ক্যারেটের দাম ১৩০ টাকা। লিচু বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে আড়তদারদের কমিশন, পরিবহন খরচ সব মিলিয়ে এক হাজার লিচুতে কমপক্ষে ৭০০ টাকা খরচ হয়। অথচ বৈরী অবহাওয়ায় শুকিয়ে যাওয়া এক হাজার লিচু ৫০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। তাই অনেক বাগান মালিক গাছ থেকে লিচু পাড়তে যাবেন না।’ 

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘উপজেলায় ২ হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান আছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে উপজেলার ৫০ ভাগ বোরিং থেকে পানি উঠছে না। বৃষ্টি না হওয়ার সুফল যেমন আমরা বোরো ধানে পেয়েছি তেমনি এর বিপরীত চিত্র পাচ্ছি লিচুতে। প্রচণ্ড তাপে হাজার হাজার গাছের লিচু ফেটে ফোসকা পড়ে গেছে। বৃষ্টির মতো করে সন্ধ্যার পর প্রতিটি গাছে পানি স্প্রে করতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন