পর্যটন কেন্দ্রে বন্যপ্রাণী আটকে রাখার অভিযোগ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বান্দরবান

বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে খাঁচার ভেতর বন্যপ্রাণী ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে হরিণ, ভল্লুকসহ পাঁচ ধরনের বন্যপ্রাণী আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের চিড়িয়াখানায় আটক ও প্রদর্শন করা বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরে নোটিস দেয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। গত বছরের ২২ জুন ওই ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন স্বাক্ষরিত নোটিসটি দেয়া হয় বান্দরবান জেলা প্রশাসককে। কিন্তু গতকাল দুপুর পর্যন্ত কোনো নোটিস হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজী। 

জেলা প্রশাসককে দেয়া নোটিসে বলা হয়, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে বিপন্ন প্রজাতির দুটি ভল্লুক, সাতটি মায়া হরিণ, একটি বাঘডাশা, একটি বানর ও একটি অজগর রয়েছে। 

বন্যপ্রাণীগুলোর মধ্যে ভল্লুক ও অজগর বিপন্ন। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী ‘দেশীয় যেকোনো বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়, আটক, প্রদর্শন দখলে রাখা আইনত অপরাধ।’ 

এছাড়া বন্যপ্রাণী করোনাভাইরাসসহ নানা ধরনের ভাইরাস তথা জীবাণু বহন করে। বিশ্ব যেখানে করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত, সেখানে পর্যটন কেন্দ্রে আটক বন্যপ্রাণীগুলো জীবাণু বাহক হওয়ায় তা পর্যটকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ কারণে বন্যপ্রাণীগুলো স্থানীয় বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘলা চিড়িয়াখানায় বর্তমানে দুটি ভল্লুক, শাবকসহ ১১টি মায়া হরিণ, একটি চিতাবাঘ, একটি বাঘডাশা বা ক্যাট বিয়ার, বাচ্চাসহ পাঁচটি বানর রয়েছে। এছাড়া একাধিক খরগোশও দেখা গেছে। এর মধ্যে আধা দেয়ালের ওপর থেকে ছাদ পর্যন্ত তিনদিকে লোহার বেড়াবেষ্টিত একই ছাদের নিচে দুই কক্ষের খাঁচার ভেতরে দুটি ভল্লুক রাখা হয়েছে। বিশ্রামের জন্য একটি পাকা স্থাপনাসহ লোহার বেড়াবেষ্টিত কমবেশি তিন শতক জায়গায় ১১টি হরিণ রয়েছে। তবে হরিণের খাঁচাঘেঁষা পশ্চিম দিকে নোংরা পানি জমে কীটপতঙ্গের আবাসস্থলে পরিণত হতে দেখা গেছে। পৃথক দুটি লোহার খাঁচায় দুটি ভিন্ন প্রজাতির ও অন্য একটি লোহার খাঁচায় বাচ্চাসহ তিনটি মিলে পাঁচটি বানর দেখা গেছে। ভিন্ন ভিন্ন লোহার খাঁচায় বাঘডাশা বা ক্যাট বিয়ার ও চিতাবাঘ রাখা হয়েছে।

চিড়িয়াখানার সংশ্লিষ্টরা জানান, সাত বছর আগে একটি মা বানর দুটি বাচ্চার জন্ম দেয়। দুটির মধ্যে একটি মরা বাচ্চা প্রসব করে। এর কয়েকদিন পর মা বানরটি মারা যায়। মা বানরের মৃত্যুর কয়েকদিন পর অন্য বাচ্চাটিও মারা যায়। দুটি অজগর সাপ ছিল। পাঁচ বছর আগে দুটি অজগরের একটিকে কুকুর কামড় দেয়। এর কয়েকদিন পর অজগরটি খাঁচার মধ্যেই মারা যায়। অন্য অজগরটি খাঁচা থেকে পালিয়ে যায়। হরিণের সংখ্যা ৭টি থেকে বেড়ে ১১টি হয়েছে। বন্যপ্রাণীগুলোকে নিয়মিত খাবার দেয়া হয় বলে জানায় তারা।

নোটিসের বিষয়ে গতকাল জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌মেঘলা চিড়িয়াখানা সংক্রান্ত বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের দেয়া কোনো নোটিস বা চিঠি পাননি। 

জেলা প্রশাসন বিপন্ন বন্যপ্রাণীগুলোকে সংরক্ষণ করছে জানিয়ে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজী বণিক বার্তাকে আরো বলেন, ‘‌মেঘলা চিড়িয়াখানার ভালো বা মন্দ নিয়ে পর্যটকদের পাঠানো ই-মেইল গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হয়। সরকারি চিঠি আমার কাছে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু আমি পাইনি। বন বিভাগও যোগাযোগ করেনি। চিঠিসংক্রান্ত বিষয় জানা থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করতাম।’ 

নোটিস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আগের পরিচালকের সময় বান্দরবান জেলা প্রশাসককে নোটিস দেয়া হয়েছে বলে জানান বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বর্তমান পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌এক বছর সময়েও নোটিস না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন