চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস

ভ্যাট আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি

রাশেদ এইচ চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

বৈশ্বিক মন্দা ডলার সংকটের কারণে সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করার পথেই হেঁটেছে সরকার। বেসরকারি পর্যায়েও বিনিয়োগ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে এসেছে ধীরগতি। এতে এনবিআরের সব বিভাগেই কমেছে রাজস্ব আহরণ। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ভ্যাট বিভাগ। কাস্টমস শুল্ক আয়কর দুই খাতের কোনোটিতেই চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে শতাংশ প্রবৃদ্ধিও ছুঁতে পারেনি, সেখানে এককভাবে ভ্যাট থেকেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশের বেশি। এককভাবে হিসাব করলে দেশে ভ্যাট আহরণে প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়েছে চট্টগ্রামে।

এনবিআরের তথ্যমতে, দেশের মোট ১২ কমিশনারেট থেকে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ভ্যাট আহরণ হয়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট থেকে আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৩০ কোটি টাকা। যেটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে চট্টগ্রাম থেকে ভ্যাট আহরণ হয়েছিল হাজার ৬০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হিসাব করলে চট্টগ্রামের পর পরই যথাক্রমে খুলনা কমিশনারেট ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ, ঢাকা (পশ্চিম) ১৯ দশমিক ৮৩, ঢাকা (উত্তর) ১৯ দশমিক ১৪, সিলেট ১৬ দশমিক ৬৭, ঢাকা (দক্ষিণ) ১৪ দশমিক ৬৭, ঢাকা (পূর্ব) ১৩ দশমিক ৪০, এলটিইউ ১০ দশমিক ৭৭, কুমিল্লা দশমিক ৮১, রাজশাহী দশমিক ৬২, রংপুর দশমিক ১৭ যশোর কমিশনারেট প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে দশমিক ২৯ শতাংশ

অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে ভ্যাট আহরণের প্রবৃদ্ধি এনবিআরের রাজস্ব আহরণের হিসাবে বড় ভূমিকা রাখলেও নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। এনবিআরে পরপর দুটি রাজস্ব সভায় একাধিক সিনিয়র সদস্য রাজস্ব হিসাব দেয়ার সময় অবশ্যই যেন আইবাসের সঙ্গে গ্যাপ না থাকে এবং অতিরঞ্জিত রাজস্ব না দেখার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন কর্মকর্তাদের।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৯০ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করলেও সরকারি কোষাগারে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারি সিঙ্গেল হিসাবে জমা হয়েছে মাত্র ৬৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ যথাসময়ে ট্রেজারিতে জমা না হওয়াটা স্বাভাবিক হিসেবে মনে করা হচ্ছে না। আদায় হওয়া রাজস্ব সরকারি কোষাগারে যথাসময়ে জমা না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে এখন কাজ করছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এনবিআরের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান কর বিশেষজ্ঞ . মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আদায় জমা করা টাকার এত বেশি ফারাক হওয়ার সুযোগ নেই। প্রকৃত চিত্র উদঘাটন জরুরি।

এনবিআরের রাজস্ব আহরণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে মূসক (ভ্যাট) থেকে ৯৮ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আহরণ হয়েছে এনবিআরের হিসাবে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ভ্যাট আহরণ হয়েছিল ৮৪ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ হিসেবে গত অর্থবছরের তুলনায় ভ্যাট আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাট আদায়ের হারও বেড়েছে। তবে রাজস্ব আয় সরকারি কোষাগারে জমার ব্যবধানটা যথার্থভাবে খুঁজে বের করতে হবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, রাজস্ব আয়ে ভ্যাট খাতে জোর দিতে আইএমএফ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রাজস্ব আয়ের কৌশল নির্ধারণেও যেটা গুরুত্ব পেয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন