ওড়িশা ট্রেন দুর্ঘটনা

কেন লাইনচ্যুত হয় ভারতীয় ট্রেন?

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের ওড়িশায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন ছবি: বিবিসি

ভারতের ওড়িশায় সাম্প্রতিক ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা আট শতাধিক। কেন এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে কয়েকটি বিষয় সামনে এনেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। 

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশার একটি ছোট স্টেশনের কাছে দুটি যাত্রীবাহী ও একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে দুর্ঘটনার জন্যে সিগন্যাল ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলেই দুর্ঘটনার পেছনের আসল কারণ জানা সম্ভব হবে। এ দুর্ঘটনা আবারো ভারতের রেল খাত নিয়ে সৃষ্ট নতুন নিরাপত্তা সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে।

বিশ্বের বৃহত্তম রেল ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। দেশটির এক লাখ কিলোমিটার বা ৬২ হাজার মাইলেরও বেশি বিস্তৃত রেললাইন প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ যাত্রী বহন করে। 

রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল উপযোগী ট্র্যাকে উন্নীত করতে বেশির ভাগ রুটে সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঘণ্টায় ১৩০ ও ১৬০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল উপযোগী করা হচ্ছে।

লাইনগুলোর বাজে রক্ষণাবেক্ষণ, ত্রুটিপূর্ণ কোচ ও ভুল ড্রাইভিংয়ের মতো কারণে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হতে পারে। ‘সরকারি রেলওয়ে নিরাপত্তা প্রতিবেদন ২০১৯-২০’-এ রেল দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশের জন্য লাইনচ্যুত হওয়াকে দায়ী দেখানো হয়েছে, যা এর আগের বছরের ৬৮ শতাংশের তুলনায় বেশি। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, ট্রেনের অগ্নিকাণ্ড ও সংঘর্ষ, যা মোট দুর্ঘটনার ১৪ ও ৮ শতাংশ। পর্যালোচনাধীন বছরের প্রতিবেদনে ৪০টি লাইনচ্যুতির ঘটনায় ৩৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও সাতটি মালবাহী ট্রেনকে জড়িত দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে রেললাইনের ত্রুটির কারণে। লাইনের ফাটল বা ডেবে যাওয়া এ ত্রুটির অংশ হতে পারে। 

মেটালের তৈরি রেললাইনগুলো গ্রীষ্মে প্রসারিত হয় এবং শীতকালে তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে এগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ট্র্যাকের আলগা উপাদানগুলোকে টাইট দেয়া, স্লিপার পরিবর্তন করা এবং সুইচগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ ও লুব্রিকেটিং করার মতো কাজগুলো নিয়মিতই করতে হয়।

২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ফেডারেল অডিটরদের এক প্রতিবেদনে লাইনচ্যুতিসংক্রান্ত বেশকিছু বিপত্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, রেললাইনের ভূতাত্ত্বিক ও কাঠামোগত অবস্থার মূল্যায়ন করতে প্রয়োজনীয় ট্র্যাক রেকর্ডিং গাড়ির মাধ্যমে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে ৩০-১০০ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি ছিল। দ্বিতীয়ত, লাইনচ্যুতির ১ হাজার ১২৯টি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দুর্ঘটনার জন্য প্রায় ২৪টি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ১৭১টি ক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হওয়ার প্রধান কারণ ছিল ট্র্যাকগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তৃতীয়ত, যান্ত্রিক কারণে ১৮০টিরও বেশি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি কোচ ও ওয়াগনের ত্রুটির কারণে ঘটেছে। চতুর্থত, ‘বাজে ড্রাইভিং ও অতিরিক্ত গতি’ লাইনচ্যুতির বড় কারণগুলোর অন্যতম।

রেলওয়ের এক কর্মকর্তার মতে, ভারতীয় ট্রেনগুলোয় অ্যান্টি-কলিশন ডিভাইস বা সংঘর্ষ প্রতিরোধী যন্ত্র বসানোর বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত কেবল দুটি প্রধান রুটে (দিল্লি-কলকাতা ও দিল্লি-মুম্বাই) বসানো হয়েছে। এটা এখনো স্পষ্ট নয় যে এ ধরনের ব্যবস্থা কীভাবে লাইনচ্যুতি বা আকস্মিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

রেলওয়ের মতে, ২০২১-২২ সময়কালে ৩৪টি ধারাবাহিক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে সংঘর্ষ, লাইনচ্যুতি, ট্রেনে আগুন বা বিস্ফোরণ, লেভেল ক্রসিংয়ে যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষের মতো ঘটনায়। প্রায় একই কারণে আগের বছর ঘটেছিল ২৭টি দুর্ঘটনা। ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু গত ৩১ মে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২২-২৩ সালে এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে ৪৮ হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন