ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন ২.৪ শতাংশ কমেছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

এপ্রিলে সব মিলিয়ে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ১৪ লাখ টনে ছবি: রয়টার্স

চলতি বছরের এপ্রিলে অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। এবারো উৎপাদন কমার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে চীন। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতি মাসেই ইস্পাত উৎপাদন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড স্টিল। ৬৩টি দেশের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। মূলত এসব দেশই বিশ্বের সিংহভাগ ইস্পাত উৎপাদন করে। এপ্রিলে সব মিলিয়ে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ১৪ লাখ টনে। গত বছরের একই সময় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি ২৭ লাখ টন।

শীর্ষ উৎপাদক চীন এপ্রিলে ৯ কোটি ২৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। মার্চে দেশটি উৎপাদন করেছিল ৯ কোটি ৫৭ লাখ টন। ওই মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছিল।

এদিকে ভারতে উৎপাদন ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭ লাখ টনে। তবে মার্চের তুলনায় এটি কিছুটা কম। ওই সময় উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১৪ লাখ টন।

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কমেছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ১ ও ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ৭২ লাখ ও ৬৬ লাখ টন। অন্যদিকে রাশিয়ার উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৬৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় উৎপাদন ৩ শতাংশ বেড়ে ৫৭ লাখ টনে পৌঁছেছে। জার্মানির উৎপাদন ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩২ লাখ টনে নেমেছে। ব্রাজিলের উৎপাদন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ টনে। তবে ইরানে উৎপাদন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৩১ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। 

এদিকে জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত বছরের প্রথম চার মাসে ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদন দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬২ কোটি ২৭ লাখ টনে। 

অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ইস্পাতের বৈশ্বিক চাহিদা চলতি বছর ২ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারখানার কার্যক্রমে পুনরুদ্ধার চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।

ওয়ার্ল্ড স্টিল গত বছরের অক্টোবরে দেয়া পূর্বাভাসে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, শিল্প ধাতুটির চাহিদা ১ শতাংশ বাড়বে। এদিকে পূর্বাভাস বাড়ালেও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর ইস্পাতের বৈশ্বিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হবে। বছর শেষে ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৮২ কোটি ২০ লাখ টনে। গত বছর ব্যবহার ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছিল। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন জানায়, কারখানার ঊর্ধ্বমুখী কার্যক্রম চাহিদা পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দেবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর উচ্চসুদহার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ওয়ার্ল্ড স্টিল ইকোনমিক কমিটির চেয়ার ম্যাক্সিমো ভেডোয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‌গত বছর বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদহার বাড়ায় রেকর্ড মাত্রায়। ফলে বিশ্ব অর্থনীতি কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠলেও ওই বছর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইস্পাত খাত। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীনে অব্যাহত লকডাউন পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। ফলে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ইস্পাত ব্যবহারের খাতগুলোর কার্যক্রম শ্লথ হয়ে পড়ে।

চলতি বছরও মূল্যস্ফীতির চাপ ও সুদহার বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত থাকবে। তবে কিছু ইতিবাচক বিষয় ইস্পাতের চাহিদা ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। চীন জিরো কভিড-১৯ নীতি থেকে সরে আসায় দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। জ্বালানি সংকটের ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠেছে ইউরোপ। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেইনের প্রতিবন্ধকতাও শিথিল হচ্ছে। এসব বিষয় ইস্পাতের চাহিদা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন।

তথ্য বলছে, চলতি বছরের তুলনায় চাহিদা ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ ইস্পাত ব্যবহার হয় তার অর্ধেকই করে চীন। চলতি বছর দেশটিতে এ ধাতুর ব্যবহার ২ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে আগামী বছর তা অপরিবর্তিত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল। এদিকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মতো অগ্রসর অর্থনীতিগুলোয় গত বছর কমলেও এ বছর ইস্পাতের চাহিদা ১ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

আগামী বছর এসব অঞ্চলে চাহিদা বাড়বে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ইস্পাতের চাহিদা ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তবে এ বছর তা ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়তে পারে। আগামী বছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ার প্রত্যাশা করছে ওয়ার্ল্ড স্টিল।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদক। চলতি বছর দেশটিতে এটির চাহিদা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়তে পারে। আগামী বছর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালেও দেশটির ইস্পাত খাত মূল্যস্ফীতির ধাক্কা খুব ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। ওই বছরও চাহিদায় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ইতিবাচক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন