শক্তিশালী প্রবৃদ্ধিতেও বেকারত্ব ঝুঁকি ভারতীয় তরুণদের

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের মুম্বাইয়ের একটি বস্তি এলাকা ছবি: রয়টার্স

১৪০ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হয়ে উঠেছে ভারত। জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে। দেশটিতে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ অনেক বেশি। তবে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের অভাবে ভারতের লাখ লাখ যুবগোষ্ঠী অর্থনীতির বোঝায় পরিণত হচ্ছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। 

কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ভারতে শহুরে বেকারত্ব বেড়ে যায়। বিশেষ করে ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মজুরি হ্রাসসহ দেশটির শহরগুলোয় বেকারত্বের হার বেড়ে সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছে। যদিও মহামারীর সময়ের তুলনায় বেকারত্বের হার কিছুটা কমেছে, তবে পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ এখনো কম। 

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অধিক সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী তরুণ আশার আলো দেখতে না পেয়ে কম মজুরির কাজ খুঁজছেন। এমনকি গ্রহণযোগ্য বা আস্থাশীল নয়, এমন অনেক কাজে বাধ্য হয়ে সম্পৃক্ত করছেন নিজেদের। বিপরীতে ক্রমে সম্প্রসারণ হচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের মার্চে সমাপ্ত আর্থিক বছরে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বিশ্বের অন্যান্য বড় অর্থনীতির তুলনায় অনেক বেশি।

ভারতীয় অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনসের (আইসিআরআইআর) ফেলো রাধিকা কাপুর বলেন, ‘বেকারত্ব হিমশৈলের একটি প্রান্ত মাত্র, যার তলে লুকিয়ে রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব এবং ছদ্মবেশী বেকারত্বের মতো গুরুতর সংকট।’ 

এ ঝুঁকি ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি দুষ্ট চক্র। কেননা বেকারত্ব সমস্যা ও মজুরি হ্রাস ভারতের তরুণ ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে বাধাগ্রস্ত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।

ভারতীয় অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ দেশের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশকে ‘টিকিং টাইম বোম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক শিক্ষিত লোক রয়েছেন, তারা চাকরির জন্য নিজের বা পরিবারের অর্থ ব্যয় করেছেন, কিন্তু জুতসই চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না, যা ভয়ানক। এটি কেবল অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতির প্রশ্ন নয়। বরং এভাবে একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে।’ 

গ্রামের তুলনায় ভারতের শহরগুলোয় বেকারত্বের হার তীব্র। কেননা শহরগুলোয় জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি। তাছাড়া গ্রামীণ এলাকার মতো শহরে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ বা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়নি। যদিও গ্রামীণ বেকারদের অনেকেই চাকরি খুঁজতে শহরে ছুটে আসে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে পূর্ণকালীন কর্মসংস্থানসহ শহুরে কর্মীর সংখ্যা ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে। মহামারী শুরুর আগে থেকেই নিম্নগামী প্রবণতা ছিল। আনুমানিক প্রায় ১৫ কোটি শহুরে কর্মশক্তির মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৩ কোটির পূর্ণকালীন চাকরি রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের ঘোষ অ্যান্ড সিপি চন্দ্রশেখরের গবেষণা অনুসারে, এপ্রিল-জুন ২০২২ প্রান্তিকে স্বনির্ভর লোকদের আয় কমে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৬২ রুপি বা ১৭৮ দশমিক ৬৭ ডলার, ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে যা ছিল ১৫ হাজার ২৪৭ রুপি। 

ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পার্লামেন্টে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০২২-২৩ সালের এপ্রিল-মার্চ নাগাদ ১০ হাজারের বেশি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আগের বছরে এ ধরনের ছয় হাজারের বেশি উদ্যোগ বন্ধ হয়। কিন্তু ওই সময়গুলোয় নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগ গঠিত হয়েছে কিনা তা সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। 

মে মাসের শুরুর দিকে একটি নোটে এইচএসবিসির প্রধান ভারতীয় অর্থনীতিবিদ প্রাঞ্জুল ভাণ্ডারী লেখেন, আগামী ১০ বছরে ভারতকে ৭ কোটি নতুন চাকরি তৈরি করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে মাত্র ২ কোটি ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে, অবশিষ্ট ৪ কোটি ৬০ লাখ কর্মশক্তি বেকার থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন