ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজবাড়ীতে প্রস্তুত হচ্ছে ৫৫ হাজার গরু

৪০ মণ ওজনের সিংহরাজের দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা

মেহেদী হাসান, রাজবাড়ী

ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজবাড়ীর খামারগুলোতে চলছে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের সিঙ্গা গ্রামে হুঙ্কার দিচ্ছে ৪০ মণ ওজনের সিংহরাজ নামের একটি গরু, যা তোলা হবে কোরবানির হাটে। এরই মধ্যে গরুটির ২৫ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছেন এর মালিক সুচিন্ত কুমার সেন। প্রতিদিনই বিশাল আকৃতির গরুটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থী।

জানা গেছে, চার বছর আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বালিয়াপাড়া হাট থেকে ৭৫ হাজার টাকায় গরুটি কিনে আনেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের সিঙ্গা গ্রামের পান ব্যবসায়ী কৃষক সুচিন্ত কুমার সেন। ভালোবেসে যার নাম দিয়েছিলেনসিংহরাজ সেই সিংহরাজের এখন ওজন হয়েছে প্রায় ৪০ মণ। গম, ছোলা, চালের গুঁড়ো, আলু ঘাস খাইয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করা গরুটি দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা।

গরুটির মালিক সুচিন্ত কুমার সেন বলেন, ‘এরই মধ্যে জেলার সবচেয়ে বড় গরু হিসেবে নাম ছড়িয়েছে আমার সিংহরাজ। তাই অধিক আগ্রহে একনজর গরুটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। তারা বলছেন, এমন বড় গরু আগে কখনো দেখেননি। গো-খাদ্যের অনেক দাম। খুব কষ্ট করে গরুটিকে চার বছর লালন করে বিক্রির উপযোগী করেছি। তাই ন্যায্যমূল্য পেলে গরুটি বিক্রি করে দেব।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘বড় গরুতে ঝুঁকি নিতে হয় বেশি। ক্রেতাও পাওয়া যায় কম। তাই মাঝারি ছোট আকৃতির গরু পালনেই বেশি পরামর্শ দিই আমরা।

এদিকে আর মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদুল আজহা, পুরোদমে কোরবানির পশুর যত্ন নিচ্ছেন রাজবাড়ীর খামারিরা। ঈদ সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে চলছে পশু মোটাতাজাকরণ।

রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ৫৪ হাজার  ৫২৫টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ধরা হয়েছে কোটি টাকা।

সরজমিনে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর এলাকায়  গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জেএএন অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে বিশাল একটি খামার গড়ে তুলেছেন বহরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান। সেখানে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত খামারের শ্রমিকরা। শুধু জেএএন এগ্রো লিমিটেড নয়, লাভের আশায় পরম যত্নে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত রাজবাড়ীর ছোট-বড় অন্তত আট হাজার খামারি কৃষক। ঈদুল আজহার সময় একেবারেই কম, তাই কোরবানির পশুর একটু বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন তারা। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রতিটি খামারের এখন একই চিত্র।

জেএএন খামারে কর্মরত শ্রমিক আব্দুল করিম জানান, দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করা পশুর চাহিদা বেশি, তাই কোনো রকম ইনজেকশন বা কীটনাশক ছাড়া খাওয়ানো হচ্ছে, ঘাস, খড়, ভুট্টা, ধান ছোলা।

অন্য শ্রমিক আল ইমরান জানান, কোরবানির গরু যাতে সুস্থ থাকে সেজন্য নিয়মিত পরিচর্যা করা হচ্ছে, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা   নিয়মিত খাবার দেয়া হচ্ছে।

পাশেই সোনাপুর কোরবানের মোড় এলাকায় বিশাল বড় একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন বজলুর রশিদ স্বপন নামের এক ব্যবসায়ী।

বজলুর রশিদ  স্বপন বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলে ফ্রিজিয়ান  গরু দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চাহিদা বেশি থাকায় জাতের  গরুর বেশি লালন-পালন করা হচ্ছে। তাছাড়া পশুর সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে নিজেদের জমিতে লাগানো ঘাস ভুট্টা খাওয়ানো হচ্ছে। গরুগুলো স্থানীয়ভাবে বিক্রির  চেষ্টা করা হবে। না হলে ঢাকার গাবতলীসহ দেশের বিভিন্ন বড় পশুর হাটে পাঠানো হবে। আমার খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু পালন করা হয়। তাই কোরবানির জন্য এখন থেকেই গরু দেখতে খামারে খামারে আসছেন ক্রেতা দর্শনার্থী।

রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দিতে কোরবানির গরু দেখতে আসা ক্রেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে দেশীয় পদ্ধতিতে গরুর যত্ন করা হচ্ছে খবরে আমরা গরু দেখতে এসেছি। কোরবানির জন্য গরু এখান থেকেই কিনব ভাবছি।

বহরপুর এলাকার জেএএন এগ্রো লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন খান বলেন, ‘চলতি বছর খড়, ভুট্টা, ছোলা শ্রমিকের মজুরি বেশি তাই গরুর যত্নে খরচ পড়ছে বেশি। অবস্থায় পাশের দেশ থেকে গরু আমদানি করা হলে লোকসানে পড়ব আমরা। তিনি কম সুদে ব্যাংক ঋণের দাবি জানান।

রাজবাড়ী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক সরদার বলেন, ‘কোরবানির পশুর যত্নে নিয়মিত খামারিদের পরামর্শ প্রদান পরিদর্শন করা হচ্ছে। জেলার প্রস্তুতকৃত পশু জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন