ফুটবল ক্লাবগুলোর মূল্যমান বাড়ছেই

ক্রীড়া ডেস্ক

বিশ্বের ফুটবল ক্লাবগুলো অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি ধনী। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৩০টি ক্লাবের গড় মূল্যমান ২১৭ কোটি ডলার। এক বছর আগে শীর্ষ ২০টি ক্লাবের গড় মূল্যমান ছিল ২৫৩ কোটি ডলার। সেই তুলনায় এ বছর ২০টি ক্লাবের গড় মূল্যমান ২৮৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ শীর্ষ ২০ ক্লাবের গড় মূল্যমান বেড়েছে ১৪ শতাংশ। 

ক্লাবের এ মূল্যমান বৃদ্ধি কিন্তু কেবল রাজস্বের প্রভাবে হয়নি। এ সময়টাতে রাজস্ব বেড়েছে ঠিক ২ দশমিক ৫ শতাংশ (প্রতি দলের জন্য গড়ে ৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার)। মূল্যমান বেড়েছে মূলত ক্লাবের উচ্চ এন্টারপ্রাইজ মাল্টিপলের (এন্টারপ্রাইজ ভ্যালুকে রাজস্ব দিয়ে ভাগ করতে হবে) কারণে, যা ক্রেতারা ক্লাবগুলোকে দিচ্ছেন। 

এ বছর সবচেয়ে দামি ২০টি ক্লাবের গড় এন্টারপ্রাইজ মাল্টিপল ৫ দশমিক ৯, যা এক বছর আগে ছিল ৪ দশমিক ৮। যেমন ধরুন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড শিগগিরই ৬০০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়ে যাবে, যা তার রাজস্বের ৭ দশমিক ৭ গুণ বেশি। ফোর্বস জানতে পেরেছে, শিগগিরই ক্লাবের অল্প কিছু শেয়ার বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করবে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি), যখন ক্লাবের মূল্যমান ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে এবং সেটি হবে ক্লাবের রাজস্বের ৫ দশমিক ৭ গুণ বেশি। 

ক্রেতারা এখন ইউরোপের ফুটবল ক্লাবগুলো উচ্চ দাম দিয়ে কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। এই যেমন ম্যানইউ বিক্রি নিয়ে কথা চলছে। এখানে ক্রেতা হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কাতারি ব্যাংকার শেখ জসিম বিন হামাদ আল থানি ও ব্রিটিশ ধনকুবের জিম র‍্যাটক্লিফ। দুজনেই নিজ নিজ কোম্পানির মাধ্যমে আগ্রহ প্রকাশ করে দর হাঁকিয়েছেন। এ দুজনের মধ্যেই একজন হতে পারেন ইংলিশ ক্লাবটির পরবর্তী মালিক। 

ইউরোপের কোনো ফুটবল ক্লাব বিক্রির কথা উঠলেই এখন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা কাতারের ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পেট্রো ডলারের ঝনঝনানির কারণে ক্লাবগুলোর দামও অনেক বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি বাড়ছে খেলোয়াড়দেরও দাম। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসর বছরে ২০ কোটি ডলার দিয়ে দলভুক্ত করেছে। একই দেশের আল হিলাল নাকি বছরে ৪০ কোটি ডলার প্রস্তাব দিয়েছে মেসিকে!

ক্লাবগুলোর এত উচ্চমূল্যের কারণ কী? অনেক ক্ষেত্রে শুধু ব্র্যান্ড দেখেই কোনো ক্লাব কিনে থাকেন ক্রেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস সাময়িকী ফোর্বস এ ব্র্যান্ড ভ্যালু বিচার করে জরিপ চালিয়েছে। তাদের জরিপে ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্লাব স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ। ইংল্যান্ডে ১ নম্বরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। গত বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস। 

রিয়াল মাদ্রিদের মূল্যমান ৬০৭ কোটি ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬৫ হাজার ৩৭ কোটি টাকা), আর ম্যানইউর মূল্যমান ৬০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা)। এ প্রথম দুটি ক্লাব ৬০০ কোটি ডলারের সীমা অতিক্রম করল। আরেক স্প্যানিশ পরাশক্তি বার্সেলোনা ৫৫১ কোটি ডলার নিয়ে তালিকার তিনে অবস্থান করছে। 

এরপর লিভারপুল (৫২৯ কোটি ডলার), ম্যানচেস্টার সিটি (৪৯৯ কোটি ডলার), বায়ার্ন মিউনিখ (৪৮৬ কোটি ডলার), প্যারিস সেন্ট জার্মেই (৪২১ কোটি ডলার), চেলসি (৩১০ কোটি ডলার), টটেনহাম (২২৮ কোটি ডলার) ও আর্সেনাল (২২৬ কোটি ডলার)। অর্থাৎ শীর্ষ দামি ১০টি ক্লাবের মধ্যে ছয়টিই ইংল্যান্ডের। এছাড়া শীর্ষ ৩০-এর মধ্যে রয়েছে ওয়েস্ট হ্যাম, ক্রিস্টাল প্যালেস, নিউক্যাসেল, লেস্টার সিটি, অ্যাস্টন ভিলা ও এভারটন। 

রিয়ালের মূল্যমান গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গত নয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচবার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই শিরোপা জিতেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। এছাড়া স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য করা ২০ বছরের চুক্তি থেকে সিক্সথ স্ট্রিট ও লিজেন্ড ক্লাবটিকে দেবে ২০ কোটি ডলার। 

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল্যমান ১৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার। এ অর্থেই নতুন মালিকের অধীনে যেতে পারে রেড ডেভিলরা। অথচ ২০০৫ সালে মাত্র ১৫০ কোটি ডলারে গ্লেজার পরিবার কিনে নিয়েছিল এ ক্লাবটি। এখন তার চারগুণ বেশি দামে ক্লাবটি বিক্রি করতে চলেছে আমেরিকান মালিকরা। 

২০০৪ সাল থেকে ক্লাবগুলোর মূল্যমানের তালিকা প্রকাশ করে আসছে ফোর্বস (শুধু কভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়নি)। এ সময় শুধু রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্রতিবারই শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। এ সময়ে রিয়াল মাদ্রিদ সাতবার ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১১ বার শীর্ষস্থানে ছিল। বার্সেলোনা ফোর্বসের তালিকায় শীর্ষে ওঠে শুধু ২০২১ সালে।

তালিকায় সবচেয়ে বড় লাফ দিয়েছে ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসেল। সৌদি মালিকানায় যাওয়ার পর ও আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট নিশ্চিত করার পর নিউক্যাসেলের মূল্যমান ৫১ শতাংশ বেড়েছে। এখন ম্যাগপাইদের মূল্যমান ৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ফোর্বস ও বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন