যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে সরকারের মাথা ব্যথা নেই —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে নিষেধাজ্ঞা দেবে—ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। গতকাল রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বাংলাদেশ নিজের পায়ে চলবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।’ 

তিনি বলেন, ‘‌আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে গড়ে তুলব। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে—ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ৩০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করব। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরো উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরো চাঙা হবে।’

নতুন বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌আমরা বাজেট দিয়েছি, বাস্তবায়ন করতে পারব বলেই দিয়েছি। জ্ঞানী-গুণী বলছে, বাস্তবায়ন করতে পারব না কিনা। প্রতিবার বাজেটের আগে যেভাবে বলে সেভাবেই বলে যাচ্ছে। আর আমরা কাজ করি মানুষের জীবন উন্নত করার জন্য। এটা সম্ভব হয়েছে টানা সরকারে থাকার কারণে, একটা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে বলেই। স্থিতিশীলতা আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশের কোনো উন্নতি হতো না।’

তিনি বলেন, ‘‌বাংলাদেশের ইতিহাসে বোধহয় এত বড় বাজেট কেউ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প নেয় বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞায় সারা বিশ্বে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশে এই শীতে তারা রুম হিটার ব্যবহার করতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেও তাদের বিধিনিষেধ আছে। পরিবারের জন্য একসঙ্গে ছয়টির বেশি ডিম কিনতে পারে না। একসঙ্গে পাঁচটির বেশি টমেটো কিনতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রেও মানুষ হিমশিম খাচ্ছে সংসার চালাতে। এ অবস্থার মধ্যেও আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‌আমাদের গুরুত্ব ছিল গ্রামে অর্থ দিয়ে তাদের অবস্থার উন্নতি করা। এটা করতে পেরেছি। দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি, হতদরিদ্র ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ হতদরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর করে দিয়েছি। কেউ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না।’

ভবিষ্যতে গার্মেন্ট খাতের পর দ্বিতীয় রফতানিকারক খাত হিসেবে প্রযুক্তি খাতকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে এবং সে অনুযায়ী সব ধরনের অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি নেতা তারেক রহমান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‌হাজার হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। ৪০ কোটি টাকা উদ্ধার করে আমরা আনতে পেরেছি। আর এখন দেশের বাইরে বসে চোরা টাকা আর জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী মিলে আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়, ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, সত্যের জয় হবেই। ‌ভোট যারা চুরি করে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলেছে, আমি বলব যে ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দেন। সন্ত্রাসী দল হিসেবে কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে ঘোষণা দিয়েছে। দুর্নীতির দায়ে কিন্তু আমেরিকা তারেক জিয়াকে তাদের দেশে ভিসা দেয়নি। তারাই এখন তাদের কাছে ধরনা দেয়।’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিকসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন