ভালো ব্যাংক যদি খোঁজেন মধুমতিতে আসবেন

মধুমতি ব্যাংক লিমিটেডের এমডি ও সিইও মো. সফিউল আজম ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মধুমতি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে প্রায় সাত বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন মো. সফিউল আজম। এর আগে ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদও সামলেছেন। ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকটির এক দশক পূর্ণ হচ্ছে আজ। প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকে ব্যাংকটির কার্যক্রম, অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এ শীর্ষ নির্বাহী কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাছান আদনান

প্রতিষ্ঠার এক দশক পূর্ণ করছে মধুমতি ব্যাংক। এ সময়ে ব্যাংকটি কতটুকু সম্প্রসারিত হতে পারল?

মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড ২০১৩ সালের ৪ জুন প্রতিষ্ঠা পায়। সে হিসাবে আজ এ ব্যাংকের এক দশক পূর্ণ হয়েছে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিষ্ঠার প্রথম দশকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে বিতর্কমুক্ত থেকে করপোরেট গভর্ন্যান্স অক্ষুণ্ন রেখে সম্প্রসারিত হওয়া যেকোনো ব্যাংকের জন্য বড় সাফল্য। মধুমতি ব্যাংক প্রথম দশকে সেটি শতভাগ অর্জন করতে পেরেছে। এ সময়ে আমাদের ব্যাংক নিয়ে নেতিবাচক কোনো সংবাদ সংবাদমাধ্যমে দেখিনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে মধুমতি ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এ সময় পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকা আমানতের স্থিতি ছিল ৭ হাজার ১৮৭ কোটি টাকার বেশি। আমরা গ্রাহকদের মাঝে ৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছি। ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য তথা আমদানি-রফতানি ও রেমিট্যান্সের নেটওয়ার্ক ও ব্যবসা যথেষ্ট বিস্তৃত হয়েছে। সারা দেশে আমরা ৪৮টি শাখা খুলেছি। প্রায় ৬০০ এজেন্ট আউটলেটও রয়েছে আমাদের।

সমসাময়িক অন্য দু-তিনটি ব্যাংকের তুলনায় প্রথম দশকে মধুমতির অবয়ব ছোট বলেই মনে হয়। সেটি কেন?

শুরু থেকে মধুমতি ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল গুণগত মানের বিচারে একটি ভালো ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ। আমরা চেয়েছি ব্যাংকের পরিধি বাড়বে ধীরস্থিরভাবে। ব্যাংকের ব্যালান্সশিট ও অবয়ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে কারো প্রতিযোগী হব না। প্রতিষ্ঠার সময়ের সে লক্ষ্যের ওপর আমরা এখনো অবিচল রয়েছি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এটি দেশের ব্যাংক খাতে সর্বনিম্ন খেলাপির হার। প্রথম দশকে মধুমতি ব্যাংকের অর্জন নিয়ে আমরা পরিতৃপ্ত।

মধুমতি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৭৫ শতাংশ ৮৪টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ। এটিকে কীভাবে দেখছেন?

এটি সত্য করপোরেটের বড় গ্রাহকদের কাছে মধুমতি ব্যাংকের বেশির ভাগ ঋণ। তবে এক্ষেত্রে আমরা একেবারেই বেছে বেছে ভালো করপোরেটকে ঋণ দিয়েছি। আমরা যে ভালো গ্রাহকদের ঋণ দিয়েছি খেলাপি ঋণের সর্বনিম্ন হারেই তার প্রমাণ। তবে ১০ বছরের মাথায় এসে ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নিয়েছি। সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা এখন ছোট ঋণ বিতরণ করছি। মধুমতি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের বিপণন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রিটেইল ঋণ, ব্যক্তি ঋণ, গৃহ ঋণ, গাড়ি ঋণের মতো ছোট ঋণের বিতরণ বাড়ানো হচ্ছে। নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী প্রান্তিক কৃষকদেরও ঋণ দিচ্ছি আমরা। মধুমতি ব্যাংক থেকে কৃষি খাতে যেটুকু ঋণই দেয়া হচ্ছে পুরোটাই নিজস্ব নেটওয়ার্কে। অর্থাৎ কৃষকদের হাতে আমরা সরাসরি ঋণ পৌঁছে দিচ্ছি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে কৃষিসহ ছোট ঋণ পৌঁছাতে মূলত আমরা মধুমতি ব্যাংকের ৬০০ এজেন্টকে কাজে লাগাচ্ছি।

এজেন্ট ব্যাংকিং হলো তৃতীয় পক্ষের হাতে ব্যাংকের অংশীদারত্ব তুলে দেয়া। তাদের যেকোনো দুর্নাম সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের জন্যও ক্ষতিকর। তাই আমরা শুরু থেকে এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিলাম। এক্ষেত্রে সরকারের এটুআই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদেরই এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিই। বিশেষ ধারার এ ব্যাংকিংয়ের জন্য দক্ষ জনবল, সফটওয়্যারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গত দুই বছরে আমরা বাইরের কিছু প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। এখন পর্যন্ত তাদের মাধ্যমে মধুমতি ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকার আমানত এসেছে। এজেন্টদের উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর হিসেবেও আমরা গড়ে তুলছি। 

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মধুমতি ব্যাংক কী করছে?

ইউএনডিপি (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) ও একটি স্থানীয় এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, পটুয়াখালীর মতো সাতটি প্রান্তিক জেলায় আমরা একেবারে গ্রাম পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য অর্থায়ন করছি। এক্ষেত্রে তহবিল সরবরাহ করছে ইউএনডিপি। এটি কোনো ঋণ নয়, অনুদান হিসেবে এ টাকা দেয়া হচ্ছে। তবে সেটি হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত নীতিতে। টাকাটি যাতে অপচয় না হয়, এনজিওর পক্ষ থেকে সেটির নিবিড় তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিতরণকৃত তহবিলের পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তার সংখ্যাও প্রায় ৩০ হাজার। মধুমতি ব্যাংকে হিসাব খোলার মাধ্যমেই উদ্যোক্তারা এ তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পাচ্ছেন। 

দেশে এত ব্যাংক থাকতে গ্রাহক হিসাবে আমি কেন মধুমতি ব্যাংকে যাব?

ব্যাংকিংয়ের মূল বুনিয়াদ বা বিশ্বাস হলো ট্রাস্ট। এ ট্রাস্ট কখনো মুখের কথায় অর্জিত হয় না। এটি যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত হয়। আমরা গত এক দশকে তা অর্জন করতে পেরেছি। মধুমতি ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা ৪ লাখ ৫২ হাজার। 

ট্রাস্ট বা আস্থা তখনই অর্জিত হয় যখন কোনো ব্যাংকে ভালো পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা থাকে। একই সঙ্গে দক্ষ কর্মী বাহিনী দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। মধুমতি ব্যাংকে এসব বৈশিষ্ট্যের সবক’টিই রয়েছে। আমাদের পরিচালনা পর্ষদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া নীতিমালার শতভাগ অনুসরণ করে। ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে পর্ষদের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করা হয় না। আমরা ব্যাংক পরিচালনায় সম্পূর্ণ স্বাধীন। আপনি যদি একটি ভালো ব্যাংক খোঁজেন তাহলে অবশ্যই মধুমতি ব্যাংকে আসবেন।

ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির শর্ত ছিল। কিন্তু ১০ বছরেও মধুমতি ব্যাংক তালিকাভুক্ত হয়নি, সেটি কেন?

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রায় সব প্রস্তুতিই আমরা সম্পন্ন করেছি। কিন্তু কভিডসৃষ্ট দুর্যোগসহ নানা কারণে এটি করা সম্ভব হয়নি। তালিকাভুক্তির জন্য আমরা একটি ভালো সময়ের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যেই মধুমতি ব্যাংক পুঁজিবাজারে যুক্ত হতে পারবে।

প্রতিষ্ঠার দশক পূর্তির এ সময়ে গ্রাহকদের কী বার্তা দিতে চান?

যেসব গ্রাহক গত ১০ বছরে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। একটি নবীন ব্যাংকের জন্য গ্রাহকদের আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জন সবসময়ই চ্যালেঞ্জের। আমাদের গ্রাহকরা সে চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়ার পথ সহজ করে দিয়েছেন। এজন্য মধুমতি ব্যাংকের সব গ্রাহকের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সবসময়ই তাদের প্রযুক্তিনির্ভর সর্বাধুনিক ব্যাংকিং সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা পাঁচটি নতুন প্রডাক্ট চালু করতে যাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন