আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে —মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের মানুষ যে সংগ্রাম-লড়াই শুরু করেছে, সেই লড়াই এখন তীব্র গতিতে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে।’

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জীবনভিত্তিক বইমেলা ও চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে বিএনপি। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনারা লক্ষ করেছেন এরই মধ্যে ১৭ জন মানুষ রাজপথে রক্ত দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গুম হয়েছে, তার পরও মানুষ থেমে নেই। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। আজকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আমাদের সেখানে আবার মনে করতে হবে। 

যখন এ মানুষটির ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি দিশাহারা জাতি উঠে দাঁড়িয়েছিল, যুদ্ধ করেছিল। আজ তাকে মনে করে তারেক রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। উঠে আমরা দাঁড়িয়েছি, সেটা সংগঠিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত যে গত ’১৪ ও ’১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে তাতে এ সরকার জালিয়াতি করেছে, চুরি করেছে এবং জনগণের মতামতকে সেখানে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। প্রমাণিত হয়েছে বলেই আজকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য—আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি বাংলাদেশে কোনো দিনই অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না যদি আওয়ামী লীগের এ সরকার ক্ষমতায় থাকে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, অবিলম্বে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সেটাই রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ। এ জাতিকে রক্ষা করার একমাত্র পথ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দেশের অগ্রদূত হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন। যখনই ক্রান্তিকাল দেখা দিয়েছে তখনই তিনি মানুষের হয়ে বেরিয়ে এসেছেন। জাতি যখন দিক হারিয়ে ফেলে, তখনই তিনি মানুষের জন্য অগ্রনায়ক হয়ে এসেছেন। সেটা হলো ’৭৫-এর পরবর্তী সময়। যখন দেশের মধ্যে অরাজকতা চলছিল। দায়িত্ব নিয়ে তিনি দেশের মানুষকে নিয়ে কাজে নেমে পড়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে বলে অখ্যাত। ঠিকই কিন্তু এ অখ্যাত মানুষটাই দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেন। সাহসী কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, আমি মেজর জিয়া বলছি। উই রিভোল্ট।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‌আজ বিশ্বের কাছে এ সরকারের ভোট চুরির কর্মকাণ্ড প্রমাণিত হয়েছে। আজ তারাও এদের বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। বিশ্ব জানে এ সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এটা আশা করা যায় না। তাই এদের পতন করিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার যে চূড়ান্ত লক্ষ্য, তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লা আমানের সভাপতিত্বে ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, প্রফেসর ড. তাজমেরী এসএ ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে হামলার ঘটনাকে কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জে দোয়া মাহফিলের মতো শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে গুলিবর্ষণ ও নেতাকর্মীদের আহত করার ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হয় যে সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে বলেই তারা দলীয় সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের ওপর ভর করেছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা ধরে রাখতে দলীয় ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কখনই স্তব্ধ করতে পারবে না সরকার। আইনের শাসন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে বলেই সন্ত্রাসীরা স্বাধীনভাবে অনাচারে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এদের। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর চলমান দুঃশাসন রুখে দিতে জনগণকে আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন