আলোচনা সভায় বক্তারা

বাজেট সামষ্টিক স্থিতিশীলতার পরিবর্তে প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিবর্তে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্বের সব দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলেও দেশে রাজনৈতিকভাবে যুদ্ধকে মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আর রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। সর্বোপরি ঘাটতি বাজেট সংস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাজেটে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে গতকাল পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) আয়োজিত আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি।

বাজেটের প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা চলমান বাজেটের মতোই নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবারের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ভাবা হয়নি।’ যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ব্যাখ্যাকে তিনি রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করেন। যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দিলেও সব দেশেই তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানান তিনি।

উদাহরণ টেনে ড. সাদিক বলেন, ‘‌২০২২ সালে থাইল্যান্ডে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হলেও এ বছর তা ৬৫ হ্রাস পেয়ে ২ দশমিক ৭ পয়েন্টে নেমেছে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬, ভারতে ৪০, ইউরোপে ৩৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। অর্থাৎ এসব দেশে যুদ্ধের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং বৈশ্বিক বাজারেও জিনিসের দাম কমেছে, কিন্তু দেশে তা কমছে না।’ এজন্য তিনি সুদের হার না বাড়ানোকে দায়ী করেন। অনেক দেশ দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে সুদের হার বাড়ালেও বাংলাদেশ সেদিকে না যাওয়ার কারণ জানতে চান তিনি। 

তিনি বলেন, ‘‌রাজস্ব আদায়ও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। যদিও চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৫ শতাংশ কম আদায় হয়েছে। এমনকি গত ছয় বছরে এটা গড়ে ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়নি। ফলে প্রকৃত রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি তৈরি হতে পারে। আর কর আদায়ে এনবিআরকে সংস্কার না করলে রাজস্ব বাড়বে না। কর আদায় এবং পলিসি নির্ধারণ একই সংস্থা থেকে হতে পারে না। ভারতেও এটা সংস্কার করা হয়েছিল।’ 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘‌যুদ্ধের অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা রাজনৈতিক চাপের শিকার। স্যাংশন ব্যবহার করা হচ্ছে। অনিশ্চয়তা আছে। তবে আমরা বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াচ্ছি। এবারের বাজেটে ভর্তুকি থেকে সরে আসার একটি ঘোষণা ছিল। সামনে এটা হবে। তবে কৃষি, খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় কিছু খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। ভ্যাট আইন অবশ্যই আলোচনার ভিত্তিতে করা উচিত।’ বাজার ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রাখলে মূল্যস্ফীতি এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করছেন তিনি। তবে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে কভিড এবং যুদ্ধের চেয়েও খারাপ প্রভাব পড়বে বলে সতর্ক করেন মন্ত্রী। 

পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, ‘‌এবারের বাজেট নির্বাচনী বাজেট বলে মনে হচ্ছে না। তবে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য কী ধরনের পরিবর্তন আনা হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।’ আইএমএফের শর্ত মতে বাণিজ্য কর না বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। 

এমসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আদিব এইচ খান বলেন, ‘‌আয়কর আইনে আরো সময় নিয়ে আলোচনার জন্য সময় দেয়া প্রয়োজন। এটা ৪ জুন সংসদে উত্থাপনের কথা রয়েছে। আর বিদেশী ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে করারোপ করায় এটা ঋণগ্রহীতার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন