গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

ই-বর্জ্য ডেকে আনতে পারে মানবিক সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর এক হোটেলে গতকাল ‘‌ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অতিথিরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

প্রতি বছর দেশে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ টন ই-বর্জ্য।  ২০২৫ সাল নাগাদ কোটি টনের ই-বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে বিলিয়ন ইউনিট স্মার্ট উৎপাদন হবে। কম্পিউটার পিসিবি-ভিত্তিক ধাতু রূপান্তর ব্যবসায় সম্প্রসারিত হবে, যা ডেকে আনতে পারে মানবিক সংকট। এ সংকট নিয়ন্ত্রণে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের সঙ্গে দেশ থেকে দেশে প্রবেশ করা রিফার্বিশ ইলেকট্রনিকস পণ্য আমদানি বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।

গতকাল বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের (বিআইজএফ) উদ্যোগে রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘‌ই-বর্জ্যের কার্বন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: কারণ ও উত্তরণের পথ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।  

কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘‌ই-বর্জ্যের কোনো গাইডলাইন নেই। অভিভাবকহীন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা তৈরি করা দরকার। আগামী ১৪ অক্টোবর আমরা দেশজুড়ে আন্তর্জাতিক মানের ই-বর্জ্য সচেতনতা দিবস পালন করব। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা একটি ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হ্যাকাথন করতে চাই।’ 

স্বাগত বক্তব্যে ই-বর্জ্যের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় বিআইজেএফের নেয়া এ উদ্যোগ আগামীতে আরো জোরদার করা হবে বলে জানান বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সার্ক সিসিআইয়ের (বাংলাদেশ) নির্বাহী কমিটির সদস্য শাফকাত হায়দার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘‌ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। এজন্য সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার।’ 

র‌্যাবের আইন ও মিডিয়া শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘‌সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ই-বর্জ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।’ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) উপপরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘‌ব্যাটারিচালিত গাড়ি থেকে দেশে ভয়াবহ মাত্রায় সিসা ছড়াচ্ছে। তাই সবার আগে উৎপাদকদের দায়বদ্ধতার মধ্যে আনতে হবে।’

স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‌ই-বর্জ্যকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ই-রিসোর্সে  রূপান্তর ব্যবসায়িক ভায়াবল নয়। আমাদের ইন্টারনাল ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবছি। তখন বাইরের দেশ থেকে ই-বর্জ্য বাংলাদেশে ডাম্পিং করা হচ্ছে। পাকিস্তানভিত্তিক কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ কাজ করছে। প্রতি মাসে ১৫-১২ হাজার রিফার্বিশ ল্যাপটপ বাজারে ঢুকছে। এতে করে সরকার ৩০-৩১ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল বলেন, ‘‌আজকের ইলেকট্রনিকস পণ্যেই আগামী দিনের ই-বর্জ্য। ল্যাপটপ-কম্পিউটারের চেয়ে কি-বোর্ড, মাউস থেকে ই-বর্জ্য বেশি হচ্ছে। তাই এগুলো কোথায় ফেলতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।’

গোলটেবিল আলোচনায় আরো অংশ নেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সিইআরএম পরিচালক রওশন মমতাজ, বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের উপপরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুল আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব সাঈদ আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি শহীদ উল মুনির, গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড চেয়ারম্যান আব্দুল ফাত্তাহ, জেআর রিসাইক্লিং/সলিউশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হোসেন জুয়েল, এইচপি বাংলাদেশ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার (ভোক্তা পিএস) কৌশিক জানা, আসুস বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রডাক্ট ম্যানেজার আসাদুর রহমান সাকি, লেনোভো ভারতের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক ব্যবসা) সুমন রায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজমুস সালেহীন, ইউসিসির হেড অব সেলস শাহীন মোল্লা, স্মার্ট টেকনোলজিসের সেলস ডিরেক্টর মুহাহিদ আল বেরুনী সুজন। গোলটেবিল বৈঠকে খাতসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন