
বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা স্বাধীন খসরু। বর্তমানে তিনি প্রবাসে থাকলেও অভিনয় ছাড়েননি। প্রয়াত সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদের অনেক নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয় ও ব্যক্তি জীবনের নানা বিষয় নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন স্বাধীন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিহা জামান শশী
জনপ্রিয় নাটক ‘তারা তিনজন’। এর অন্যতম একজন আপনি। এ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্পটা কেমন ছিল?
তারা তিনজন সিরিজে অভিনয় করার আগে থেকেই আমি হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বিভিন্ন প্রজেক্টে যুক্ত হয়েছিলাম। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য ‘পক্ষীরাজ’ নাটকটা আমরা করি। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের নিয়ম ছিল উনি টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক জমা দেয়ার আগে সবাইকে নিয়ে বাসায় বসে নাটক দেখতেন। ওই সময় দখিন হাওয়ায় স্যার আর আমি থাকি। স্যার ভোরে ঘুম থেকে উঠে লেখালেখি করতেন। নাটক দেখার পরদিন সকালেও যথারীতি স্যার তাই করছেন। হঠাৎ করে লেখা থামিয়ে আমাকে বললেন, ‘ডা. এজাজ, ফারুক আর তোমার মধ্যে একটা সুন্দর কেমিস্ট্রি আছে, এটা আমি কাজে লাগাতে চাই। আমাদের দেশে ওইভাবে কমেডি সিনেমা নেই। সিনেমার রিস্ক নেয়ার আগে তাই প্রথমে তোমাদের তিনজনকে দিয়ে একটা নাটক বানিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করব। ভালো হলে পরে সিনেমা। এরপর তিনি প্রথমে আমাদের নিয়ে করলেন তারা তিনজন। এরপর দেখা গেল, মানুষ এ নাটকের ডায়ালগ বলত, অনেক সাড়া ফেলল নাটকটা। আসলে এভাবেই শুরু। বিভিন্ন টাইটেলে আমরা ২০টার বেশি সিক্যুয়াল করেছি তারা তিনজনের।
হুমায়ুন আহমেদ নিয়ে কোনো স্মৃতি বলা যাবে পাঠকের উদ্দেশে?
স্যারের সঙ্গে হাজারো স্মৃতি আছে, এগুলো বলে শেষ করা যাবে না। হুমায়ুন আহমেদের মতো মানুষের সঙ্গে অভিনয় করা, তার সঙ্গে থাকার সুযোগ পাওয়াটা কল্পনার বাইরে আমার জন্য। প্রথম দিকে আমার নিজের বিশ্বাস হতো না। স্যারের সঙ্গে কাজ করার আগে তার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, তাদের কাছে আমি স্যারের গল্প শুনতাম। আর এখন সবাই আমাকে বলে আপনার সঙ্গে দেখা হলে হুমায়ুন আহমেদের কথা মনে পড়ে। এখন আমি হুমায়ুন স্যারের কথা সবাইকে বলি।
দেশ থেকে দূরে আছেন, এখন কি ড. এজাজ ও ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়?
হ্যাঁ নিয়মিত কথা হয়। দেশে না এলেও এখন ম্যাসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয় সবার সঙ্গে। ফারুক ভাই ও এজাজ ভাই দুজনের সঙ্গেই কথা বলি। এজাজ ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলেই তার প্রশ্ন, কবে আমরা তিনজন একসঙ্গে কাজ করব। এজাজ ভাইয়ের এখন নিজের প্রডাকশন হাউজ আছে। একসঙ্গে কিছু নাটক করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। অনেকেই চায় আমাদের তিনজন কাজ করি। আমাদের পরিকল্পনা আছে আমরা তিনজন কাজ করলে আমাদের নিজেদের মতো করে করব।
‘৫৭০’ সিনেমায় আপনার চরিত্র নিয়ে কিছু বলুন।
এটা আশরাফ শিশিরের গল্প নিয়ে নির্মিত সিনেমা। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাকে দাফন করার আগ পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টার ঘটনা নিয়ে এ সিনেমা। সিকান্দার পাগলা নামের একটা চরিত্র আমি করেছি। তিনি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে যেদিন দাফন করা হয়, সেদিনই তিনি পাগল হয়ে যান। সিকান্দার পাগলাকে মানুষ চিনত। সিনেমাটা আশা করছি খুব শিগগির মুক্তি পাবে।
দেশের সিনেমায় কাজ করছেন। পাকাপোক্তভাবে দেশের সিনেমায় যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছেন কি?
দেশের কাজ করার ইচ্ছা তো আছেই। কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব পাচ্ছি। আশরাফ শিশিরের ফিচারিস্টিক একটা সিনেমার কথা হয়েছে, এর নাম ‘শামুক’। এছাড়া সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ভাইয়ের বই ‘ভাটির দেশের গান’। মূলত বইটা উনি ইংরেজিতে লিখেছেন। সেটাই আমরা সিনেমা করতে যাচ্ছি। আরো তো কথা হচ্ছে। কভিড পরিস্থিতির কারণে আমি দুই বছর যেতে পারিনি। পরিকল্পনা ছিল যে আমি কয়েক মাস পর পর দেশে যাব আর কাজ করে চলে আসব। কারণ লন্ডনে ফ্যামিলি আছে। এখন যোগাযোগ কোনো বিষয় নয়। আমি নিয়মিত অভিনয় করতে চাই।
লন্ডনেও বেশি না হলেও টুকটাক কাজ করছি। দুটো ওয়েব ফিল্ম করব সৈয়দ শাহিলের। এ দুই ওয়েব ফিল্ম আসবে প্যারিসের একটা প্রডাকশন হাউজ থেকে।
আমাদের দেশের সিনেমাগুলো এখন দেশের বাইরেও দেখানো হচ্ছে। লন্ডনের প্রেক্ষাগৃহে বাংলাদেশের সিনেমা আসলে দেখা হয়?
হ্যাঁ, আমি সিনেমা দেখি। বর্তমানে আমাদের দেশের সিনেমা অনেক ভালো হচ্ছে। আমদের দেশের সিনেমার প্রতি এখানকার দর্শকের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। হাওয়া খুব ভালো চলেছে। দামাল ও মিশন এক্সট্রিম ভালো গেছে। এখানকার দর্শক বিনোদনমূলক সিনেমা দেখতে চায়, যেখানে নায়ক-নায়িকা রয়েছে। ভালো মেকিংয়ের সিনেমা না হলেও দর্শকের আগ্রহ থাকে না। হাওয়া সিনেমার কিন্তু নায়ক বা নায়িকা না থেকেও সব ধরনের দর্শক হলে এনেছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে প্রতি মাসে না পারলেও কয়েক মাস পর পর দেশের একটা হিট সিনেমা যুক্তরাজ্যে আনব, যাতে দর্শক আমাদের দেশের সিনেমা সম্পর্কে জানতে পারে।