ঝালকাঠিতে পেয়ারার ফলন কম হওয়ার শঙ্কা

অলোক সাহা, ঝালকাঠি

অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে ঝালকাঠির পেয়ারা বাগানে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায়  বরিশাল অঞ্চলে পেয়ারা গাছে ফুল এলেও তা অনেকটা ঝরে গেছে। ফলে এ বছর পেয়ারার ফলনও অনেক কম হয়েছে। মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছের পরিচর্যায় প্রচুর অর্থ ও শ্রম ব্যয় হলেও আশানুরূপ ফলন না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন পেয়ারাচাষীরা। 

জানা গেছে, ঝালকাঠি, বরিশালের বানারীপাড়া ও  পিরোজপুরে স্বরূপকাঠি উপজেলার ৫৫ গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছে পেয়ারা জীবিকার অবলম্বন। আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় এসব এলাকার নদী-খালজুড়ে ভাসমান হাটে দেখা যায় পেয়ারার সমারোহ। 

চাষীরা জানান, এ বছর পেয়ারা গাছে দেরিতে ফুল এলেও বৃষ্টি না হওয়ায় সে ফুল অনেকটাই ঝরে গেছে।  জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়েও পেয়ারা কুষিতেই রয়েছে। এখনো পরিপক্ব হয়ে বিক্রি করার সময় হতে আরো মাসখানেক লাগবে। তাই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে কৃষককে। ঝালকাঠির ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠি, জগদীশপুর এলাকার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বরিশাল বিভাগের কম-বেশি সব জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পেয়ারার চাষ হলেও বরিশাল জেলার বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি ঘিরেই মূলত পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার ১৬ গ্রামে ৯৩৭ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলার ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে, স্বরূপকাঠির ২৬ গ্রামের ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এসব এলাকার মধ্যে ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা, ভিমরুলী, শতদশকাঠি, খাজুরিয়া, ডুমুরিয়া, কাপুড়াকাঠি, জগদীশপুর, মীরকাঠি, শাখাগাছির, হিমানন্দকাঠি, আদাকাঠি, রামপুর, শিমুলেশ্বর গ্রামে বৃহৎ অংশজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। 

এসব গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকের পাশাপাশি পেয়ারা পরিবহন ও বাজারজাতেও রয়েছে কয়েক হাজার মৌসুমি ব্যাপারী ও শ্রমিক। এ সময় অন্তত ২০টি স্থানে পেয়ারার মৌসুমি মোকামের সৃষ্টি হয়। এগুলো হলো ভিমরুলী, আতাকাঠি, ডুমুরিয়া, গণপতিকাঠি, শতদশকাঠি, রাজাপুর, মাদ্রা, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, বর্ণপতিকাঠি, আটঘর, কুড়িয়ানা, আন্দাকুল, রায়ের হাট, ব্রাহ্মণকাঠি, ধলহার, বাউকাঠি। এসব মোকামে মৌসুমে প্রতিদিন পাঁচ-সাত হাজার মণ পেয়ারা কেনাবেচা হয়।

কৃষক পংকজ বড়াল বলেন, ‘মাঘ-ফাল্গুন মাসে পেয়ারা গাছের গোড়া পরিষ্কার করে সার দিতে হয়েছে। এরপর কাদামাটি দিয়ে গোড়া ঢেকে দিয়েছি। এতে প্রতিটি গাছের গোড়ায় গড়ে ৩০০ টাকা ব্যয় হয়েছে। পেয়ারা গাছে যে পরিমাণ ফুল এসেছিল পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় তা অনেকটাই ঝরে গেছে। লাভ তো দূরের কথা, আসল খরচের টাকাই ওঠে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলায় ১৩ গ্রামে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়। পেয়ারা মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। তবে এবার বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে ফুল কিছুটা ঝরে গেছে। তবু যা আছে তা ঠিকমতো টিকে থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন