সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি

বাজেটে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজেটে রফতানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় গতকাল এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, ‘আমরা উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব না করে ২০২১-২২ অর্থবছরের যেটি ছিল, অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলাম। কারণ এমনিতেই কভিডের কারণে আমাদের শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি, পুষিয়ে নিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একদিকে বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে, খুচরা বিক্রয় চাহিদা কমে এসেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলসহ সব কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আমাদের রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে। তবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, সেটিও এ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে ইউনিট ভ্যালু বেড়ে যাওয়ায় কারণে হয়েছে।’

ফারুক হাসান বলেন, ‘বাজেট বক্তব্যে অন্যান্য বছরের মতো রফতানি খাতগুলোর জন্য প্রণোদনা বাবদ অর্থ বরাদ্দের কোনো ঘোষণা আসেনি। যেখানে আমাদের বেশকিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল। আমাদের সামনে বিষয়টি এখনো অজানা রয়ে গেছে। আমরা দাবি করব যেন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি এলএনজি ও এলপিজির আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তার মতে, এটি করা হলে একদিকে আমাদের শিল্পে উৎপাদন খরচ কমবে, আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়বে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সেটি অর্জন সহজ হবে। 

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক বিষয়কে আমলে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটি করে না। ফলে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক কোনো পরিস্থিতির কারণে ইউরোপে রফতানি বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিও দেশটিতে রফতানির ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না।’ 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘লক্ষণীয় বিষয় হলো বর্তমান সংকটকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যখন কিনা সাম্প্রতিক রফতানি আয়, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের নিম্নমুখী, তখন সরকার আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ঘোষণা দিয়েছে, যা এ কঠিন সময়ে জাতির মনে আশার সঞ্চার করেছে। শিল্পের প্রবৃদ্ধি ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। আর জিডিপির প্রায় ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ আসে শিল্প খাত থেকে, যা ২০৪১ সাল নাগাদ ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। শিল্পের সব সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে।’

ফারুক হাসান জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩টি পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা মনে করি এর ফলে জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, ‘‌আমরা সরকারকে নন-কটন খাতে বিনিয়োগ ও রফতানি উৎসাহিত করতে এবং প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে নন-কটন পোশাক রফতানির ওপর ১০ শতাংশ (রফতানি মূল্যের) হারে বিশেষ প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছিলাম, যা বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। এ ব্যাপারে আবারো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পাশাপাশি নন-কটন বস্ত্র ও পোশাক খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি বিশেষ স্কিম গ্রহণের সুপারিশ করছি। এর মাধ্যমে আমাদের ২০২৯ পরবর্তী সময়ে ‘দুই-ধাপ উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রতিপালন করে জিএসপি প্লাসের জন্য প্রস্তুত হতে পারব।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন