ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ৭০ জনের মৃত্যু

হতাহতের মধ্যে বাংলাদেশী থাকার আশঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

কলকাতার হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী যাত্রীবাহী একটি ট্রেন গতকাল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ছবি: এনডিটিভি

ভারতের ওড়িশায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে কলকাতার হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ৩৫০ জন। হতাহতদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশী রয়েছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও রয়টার্স। 

গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনটি কলকাতার পার্শ্ববর্তী শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের সেন্ট্রাল স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। পথে বালাসোর জেলায় একটি মালবাহী গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দ্রুতগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস গিয়ে ধাক্কা দেয় একটি মালগাড়িতে। এর ফলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের প্রথম তিনটি বগি বাদে সবক’টি (৩০টি) বগিই লাইন থেকে ছিটকে পড়ে। আর অপর ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার পর পরই উদ্ধারকারীরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে।

পিটিআইয়ের একজন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থল থেকে জানান, অনেক যাত্রী লাইনচ্যুত হওয়া ট্রেনটির নিচে আটকা পড়ে। জরুরি সেবাদাতাদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে স্থানীয় জনগণও। তবে রাতে উদ্ধার অভিযান অনেক ব্যাহত হচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। হতাহত মানুষের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বালাসোর ও এর আশপাশের সবগুলো মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। ওড়িশার মুখ্য সচিব জানান, অন্তত ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। পরে যোগ দেয় আরো ১০টি অ্যাম্বুলেন্স। ধারণা করা হচ্ছে হতাহতদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। উদ্ধার কার্যক্রমে অনেক বেশিসংখ্যক বাস সেখানে পাঠানো হচ্ছে। 

ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত ভেলোরে চিকিৎসা নিতে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বহু বাংলাদেশী নাগরিকও ট্রেনটিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে অনেক বাংলাদেশী এ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। জানা যায়, ট্রেনের গতি বেশি থাকায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির ওপর উঠে যায়।

ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেন, চেন্নাইগামী করমণ্ডল ট্রেনটির কয়েকটি বগি বালাসোর এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে যায়। এ সময় পাশের এ লাইন দিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে আসছিল কলকাতাগামী একটি ট্রেন। ট্রেনটি এসে করমণ্ডলের পড়ে যাওয়া বগিগুলোয় সজোরে ধাক্কা খায়।

দুর্ঘটনার খবর জানার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় বাংলার অনেকে আহত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে সেখানে পাঁচ-ছয়জনের একটি দল পাঠানো হচ্ছে। তারা হতাহতদের উদ্ধারে ওড়িশা সরকার এবং দক্ষিণ-পশ্চিম রেলওয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। 

এত এত যাত্রী নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের এমন দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পেছনে সিগন্যালের ত্রুটি নাকি চালকের ভুল ছিল তা এখনো জানা যায়নি। 

করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের বর্তমান অবস্থাসহ বিভিন্ন তথ্য জানতে হেল্পলাইন সার্ভিস চালু করেছে দেশটির রেল কর্তৃপক্ষ। হেল্পলাইনের নম্বরগুলো হলো হাওড়া স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২৬৩৮২২১৭, বালাসোর স্টেশনের ৮২৪৯৫৯১৫৫৯ ও ৭৯৭৮৪১৮৩২২, খড়গপুর স্টেশনের ৮৯৭২০৭৩৯২৫ ও ৯৩৩২৩৯২৩৩৯ এবং শালিমার স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ৯৯০৩৩৭০৭৪৬। এছাড়া হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গও। তাদের সেবা পেতে কল দিতে হবে ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ অথবা ২২৫৩৫১৮৫ নম্বরে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন