তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় শিল্পে প্রণোদনা না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নে কোনো প্রণোদনা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সংগঠনটি বলছে, সরকার কিছু শিল্পের স্থানীয় উৎপাদকদের ওপর ভ্যাট আরোপ করেছে। এসব শিল্পের মধ্যে রয়েছে স্মার্টফোন উৎপাদনকারী, সফটওয়্যার উন্নয়ন-সংশ্লিষ্টসহ বেশকিছু শিল্প। তাদের জন্য কোনো ধরনের প্রণোদনা না দিয়ে উল্টো ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা জানায় সংগঠনটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। 

এফআইসিসিআইয়ের মতে, বাজেটে প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তার পরও এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হলে অর্থনীতিতে একটি নতুন যাত্রা শুরু হবে। অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করায় দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ইতিবাচক ধারা তৈরি করবে। কিন্তু শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। বাজেট বরাদ্দ ব্যয়ে সরকারের আরো বেশি গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসা উচিত। গুণগত এ পরিবর্তন কর্মক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া ঋণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর মাধ্যমে দেশে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে থাকবে। 

বাজেটের ছয়টি দিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এফআইসিসিআই বলছে, করহারে সংশোধনীর ক্ষেত্রে আগের করহারের প্রভাবকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে করহার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিত হয়নি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ আয়করের সুবিধা প্রাপ্তির সঙ্গে নগদে লেনদেন না করা সংক্রান্ত জটিল শর্তের অবসানের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এ জটিল শর্তের অবসান না হওয়া উদ্বেগজনক। বিষয়টির সমাধান এবং আইপিওর পাশাপাশি আরপিওর (রিপিট পাবলিক অফারিং) ক্ষেত্রেও হ্রাসকৃত করের এ সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করেছে এফআইসিসিআই। করপোরেট করের এ ধরনের চর্চা, শর্ত পৃথিবীর কোথাও নেই। করপোরেট ট্যাক্সের বিষয়টিকে যুক্তিযুক্ত করতে হবে। গতবারের বাজেটে এটা ছিল, প্রস্তাবিত বাজেটেও এ নিয়ে কিছু করেনি। আগের মতোই রেখে দিয়েছে। 

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ছেড়েছে, সেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ২০ শতাংশ। আর যেসব কোম্পানি আইপিওতে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের কম শেয়ার ছেড়েছে, তাদের ক্ষেত্রে করপোরেট করহার সাড়ে ২২ শতাংশ। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট করহার সাড়ে ২৭ শতাংশ। একক ব্যক্তির কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করহার নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ। তবে বিদ্যমান এসব করহার আড়াই শতাংশ করে বাড়বে, যদি কোম্পানিগুলো আরোপিত শর্ত পরিপালন না করে। আড়াই শতাংশ কম করপোরেট কর দিতে হলে কোম্পানিগুলোকে নগদ লেনদেনের শর্ত পালন করতে হয়। এ শর্ত হচ্ছে কোনো কোম্পানি একক লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকার বেশি এবং বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি নগদে লেনদেন করতে পারবে না। যদি কেউ এ শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত করপোরেট করের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি কর দিতে হবে।

প্রযুক্তি খাতের বিষয়ে বলা হয়েছে, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বিত প্রযুক্তি কৌশল, ই-ইনভয়েসিং প্রবর্তনের জন্য বলা হয়। রাজস্ব আদায়ে আরো বেশি স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া শুল্ক মূল্যায়ন আইন-২০০০-এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রেখে শুল্ক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এফআইসিসিআই, সে বিষয়েরও কোনো সমাধান করা হয়নি। 

বাজেটের কিছু সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করেছে এফআইসিসিআই। তারা বলছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই করসীমা বাড়ানোর হার ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে উচ্চমূল্যস্ফীতির এ সময়ে করসীমা বৃদ্ধির হার পর্যাপ্ত নয়। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করতে, তা না করলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় রেখে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। 

গাড়ির ওপর কার্বন কর আরোপ করার বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলা হয়, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য একাধিক গাড়ির মালিকদের ওপর কর নির্ধারণ ইতিবাচক ফলাফল দেবে। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে এ করের বাইরে রাখার সুপারিশ করেছে তারা। এ বিষয়ে তারা বলেছে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একাধিক গাড়ির প্রয়োজন হয়ে থাকে।

এদিকে নতুন আয়কর আইন-২০২৩কেও স্বাগত জানায় সংগঠনটি। তারা প্রত্যাশা করছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভিশন ২০৪১ সালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ আইন করা হবে। তবে বাজেটে আইনটি প্রকাশ না করায় তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সংগঠনটি। একই সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়নের জন্য আইনের একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের তাগিদ জানায় তারা। 

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ‘‌এসবই আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এখনো পর্যন্ত আমরা বিস্তারিত কোনো কিছু বলিনি। জাতীয় সংসদে আয়কর আইন-২০২৩ উত্থাপিত হলে বাজেট নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে পারব।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন