চট্টগ্রাম রেলওয়ে

সেবা ও নিরাপত্তা তদারকিতে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে কার্যক্রম পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনকে ঘিরেই। বন্দরনগরী ও চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে রেলপথের যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেলের অপরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা তদারকি কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনায় যাত্রীসেবার মান নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে প্রতিদিন ১০ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ছয়টি ট্রেনই উভয়মুখে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে। এছাড়া এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে, দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে এবং এক জোড়া ট্রেন চলাচল করে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে। 

আন্তঃনগর ছাড়াও চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে একাধিক মেইল, লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। তবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনকেন্দ্রিক অব্যবস্থাপনায় ও নিরাপত্তা কার্যক্রম নিয়ে উদাসীনতায় যাত্রীসেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। 

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ হাজার মানুষের যাতায়াত। এ রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে অনিরাপদ স্থাপনা, রেলপথ ঘিরে অবৈধ কার্যক্রম, অপরিচ্ছন্ন সেবা কার্যক্রমের কারণে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাহাড়তলী পর্যন্ত রেলপথের উভয় পাশে রেলভূমির দখল ও বিভিন্ন ছোট-মাঝারি কারখানা স্থাপনের কারণে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি ও রেলপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের সন্নিকটে কদমতলী রেলওয়ে ক্রসিংয়ে যানবাহন চলাচলে অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে পাহাড়তলী পর্যন্ত রেললাইনের উভয় পাশে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠনের অস্থায়ী অফিস ঘর এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার কারণে রেল চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে রি-মডেলিং প্রকল্পের কাজ শেষে উদ্বোধন হয় ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল। জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রেল স্টেশনটিকে আধুনিকায়ন করা হয়। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএ প্রকল্পের নির্মাণকাজের গাফিলতিতে স্টেশনের প্রথম চারটি প্লাটফর্ম ও সংস্কার করা ট্র্যাক নষ্ট হয়ে যায়। মূলত রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন সড়কের ড্রেনেজ সিস্টেমের ত্রুটি ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য স্টেশনসংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ট্র্যাক নষ্ট হয়ে রেলওয়ে স্টেশনের ক্ষতি হলেও রেলওয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এছাড়া স্টেশনের সন্নিকটে প্রথম এলসি (লেভেল ক্রসিং গেট) গেটের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না রাখায় মাদকসেবী ও মাদক বেচাকেনায় জড়িতরা রেলওয়ে স্টেশনের অভ্যন্তরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেশনের বিভিন্ন প্রান্তে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রীর রি-সাইক্লিং কারখানা ছাড়াও ক্ষুদ্র কারখানার বিভিন্ন কাঁচামাল রেললাইনের অভ্যন্তরেই রোদে শুকানো হচ্ছে। পুরনো রেলওয়ে স্টেশনের সম্মুখের অংশ দখলে নিয়ে চট্টগ্রামের একমাত্র চোরাই পণ্যের মার্কেট স্থাপন করেছে ব্যবসায়ীরা। স্টেশনকে ঘিরে বস্তি, উন্মুক্ত খাবারের দোকান ছাড়াও ব্যবসায়ীদের পণ্য রাখা হয়েছে চলাচলের পথ বন্ধ করে। রেলওয়ে স্টেশন অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু মানুষের বসবাসের আবাস তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্বাঞ্চল) সুজন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকার বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু উচ্ছেদের পর পরই অজানা কারণে নতুন করে স্থাপনা তৈরি হয়। রেলওয়ের পক্ষ থেকে নতুন করে অভিযান পরিচালনা করা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় স্টেশন এলাকা জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে রেলওয়ের একার পক্ষে এ অব্যবস্থাপনা দূর করা সম্ভব নয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন