এনভিডিয়ার ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হয়ে ওঠার গল্প

বণিক বার্তা ডেস্ক

ড্রাইভ পেগাসাস রোবোট্যাক্সি এআই কম্পিউটার হাতে এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং ছবি: রয়টার্স

প্রযুক্তি দুনিয়ার বিস্তৃত পরিসরে এনভিডিয়া সম্পর্কে হয়তো সবাই অবগত নয় কিংবা শুনে থাকলেও বর্তমানে প্রযুক্তি জগতের বড় নামগুলোর পাশাপাশি মাথায় আসত না, কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) আকস্মিক উত্থানে প্রযুক্তি দুনিয়ায় বড় পরিবর্তন এসেছে। এনভিডিয়া হয়ে উঠেছে সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানির একটি।

প্রচলিত বড় কোম্পানিগুলো যেসব কারণে দাপট বিস্তার করত, এনভিডিয়া কোম্পানিটির মনোযোগ ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কোম্পানিটি বহু বছর ধরে গেমিং কনসোলের চিপ তৈরি করত, যা মূলত গেমের ভারী গ্রাফিকস নিয়ন্ত্রণে কাজ করত, কিন্তু কয়েক বছর আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা গবেষকরা গেমের জন্য বিশেষায়িত চিপগুলো দিয়ে শক্তিশালী সব অ্যালগরিদম পরিচালনা করা শুরু করেন। এতেই ঘটে যায় যুগান্তকারী ব্যাপার। 

জিপিইউগুলো একই সঙ্গে অনেক ডাটা প্রক্রিয়া করতে পারে। সেগুলোকে মেশিন লার্নিং, ভিডিও এডিটিং এবং গেমিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য উপযোগী করে তোলে৷। প্রযুক্তি জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন সংস্করণ সৃষ্টির ফলে, গত সপ্তাহে কোম্পানিটির আয় আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে এনভিডিয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আরো উন্নত এবং উচ্চতর পারফরম্যান্স ক্ষমতার নতুন চিপ নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ফলে স্টক মার্কেটে এর মূল্যমান বেড়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। 

গত সপ্তাহে ২৪ শতাংশ শেয়ার মূল্যবৃদ্ধি এনভিডিয়াকে ৯৪০ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত করে। তুলনা করলে এটি ৫৮৫ বিলিয়নের টেসলা ও ৬৪৮ বিলিয়ন ডলারের ফেসবুককেও ছাপিয়ে গেছে। এ মুহূর্তে শুধু অ্যাপল, গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন এবং সৌদির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকোর পরে অবস্থান করছে। 

১৯৯৩ সালে তিনজন কম্পিউটার চিপ প্রকৌশলীর হাত ধরে এনভিডিয়ার যাত্রা। তাদের ভাবনা ছিল কম্পিউটার উন্নত হওয়ার সঙ্গে এদের জটিলতর দৃশ্য প্রক্রিয়া করার ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। ২০০০-এর গোড়ার দিকে কোম্পানিটি মাইক্রোসফটের এক্সবক্স গেমিং কনসোলের জন্য চিপ তৈরির চুক্তি পেয়ে এনভিডিয়া বাজিমাত করে ফেলে। এরপর থেকে এনভিডিয়ার ভিডিও গেম মার্কেটের আকার বিস্ফোরকভাবে বাড়তে থাকে। ছাপিয়ে যায় সিনেমা, টেলিভিশন এবং মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকেও। 

আকস্মিক এ উত্থানের কারণে বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ও স্টার্টআপগুলো এনভিডিয়ার জিপিইউ চিপ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এ চিপগুলো বিপুল পরিমাণের ডাটা প্রসেস করতে পারে যা কিনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে উন্নত পর্যায়ের প্রোগ্রাম গুগলের পিএলএম-২ কিংবা ওপেন এআইয়ের জিপিটি-৪কে প্রশিক্ষণের জন্য দরকারি। এনভিডিয়া বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই তার এআইকেন্দ্রিক ব্যবসাকে ক্রমাগত বড় করছে, গত ছয় মাসে এর বিক্রি বেড়েছে ব্যাপক আকারে।  

এআই মডেলের প্রশিক্ষণের জন্য অধিক মেমোরিবিশিষ্ট চিপগুলোর চাহিদা রয়েছে বলে জানান আকাশ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগ ওসুরি। এদিকে এ ধরনের চিপ নির্মাণে এনভিডিয়া হচ্ছে একমাত্র কোম্পানি। কয়েক মাস ধরে, এআই প্রতিযোগিতার দৌড়ে থাকা স্টার্টআপগুলো বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেয়ার চেষ্টা করছে এনভিডিয়ার জিপিইউর কল্যাণেই। কারো কাছে জিপিইউ বেশি থাকার সঙ্গে তাই নির্ভর করছে এআইকে কাজে লাগানোর সক্ষমতা। 

৮টি এনভিডিয়া চিপের এক সেটের দাম হতে পারে ৩ লাখ ডলার। একেকটি কোম্পানি এমন কয়েক হাজার সেট কিনে থাকে। টুইটারের মালিক ইলোন মাস্ক এমন ১০ হাজার জিপিইউ কিনেছেন নিজস্ব এআই কোম্পানি চালু করার পরিকল্পনা মাথায় রেখে।  

নভেম্বরে চালু করা ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটি টুল একটি চ্যাটবট। এটি মানুষের সঙ্গে জটিল কথোপকথন করতে পারে, পেশাদার লাইসেন্সিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে এবং কম্পিউটার কোড লিখতে পারে। এর যাবতীয় বিশেষত্বগুলো প্রযুক্তি জগতের প্রতিশ্রুতিকেই এগিয়ে নেয়। সত্যিকার অর্থে এ অ্যাপ্লিকেশনটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতের আগ্নেয়াস্ত্র বলা যায়। 

এআইয়ের জোয়ারে এ বছর এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এনভিডিয়ার এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা এতই সুদূরপ্রসারী যে বড় কোম্পানিগুলো নিজস্ব চিপ উৎপাদনে কাজ শুরু করে দিয়েছে। অ্যাপল নিজস্ব চিপ উন্নয়নে কাজ করে থাকে যাতে অন্য কোম্পানির ওপর নির্ভর না করতে হয়, পাশাপাশি নিজেদের পণ্যের অনন্যতা বজায় রাখা যায়। কয়েক বছরের চেষ্টায় গুগল নির্মাণ করেছে টেন্সর প্রসেসিং ইউনিট। মাইক্রোসফট এবং অ্যামাজনেরও নিজেদের চিপ ডিজাইন করার প্রকল্প রয়েছে। তবে যা-ই হোক, এভারকোর ইনকরপোরেশনের বিশ্লেষক মনে করেন, এনভিডিয়ার আধিপত্য অব্যাহত থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন