পর্যালোচনা

ইউরোপের গ্যাসের কৌশল এখন পর্যন্ত ইতিবাচক

সৈয়দ আবুল বাশার

ইদানীং যদিও ইউরোপের জ্বালানি সংকট নিয়ে বেশি আলোচনা লক্ষ করা যায় না, কিন্তু জ্বালানি (এনার্জি) অর্থনীতি নিয়ে যারা গবেষণা বা অন্বেষণ করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের এনার্জি অবকাঠামোর ওপর কী প্রভাব ফেলেছে তা বিশ্লেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকের এ লেখায় গত এক বছর ইউরোপ তার জ্বালানি খাতকে কীভাবে সামলেছে তা নিয়ে কিছু আলোকপাত করব। 

গত বছর রাশিয়ান গ্যাস নিষেধাজ্ঞার পর ইউরোপের দেশগুলো দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করে। এক. গ্যাস সরবরাহের বিকল্প উৎস সন্ধানে জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো অনেক বিনিয়োগ করে। এখন থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ইউরোপ প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, এ বিনিয়োগগুলোর মধ্যে রয়েছে এলএনজি এবং হাইড্রোজেন রূপান্তর করার জন্য ভাসমান গ্যাস ডিকম্প্রেশন স্টেশন ইত্যাদি। ফ্রান্সের যেহেতু প্রচুর পারমাণবিক শক্তি আছে এবং স্পেনের প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির বেশ কয়েকটি উৎসের পাশাপাশি সঞ্চালনের শক্তিশালী অবকাঠামো আছে—এ দুটি দেশ তুলনামূলক কম বিনিয়োগ করেছে। দুই. এসব বড় বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপ জ্বালানি দক্ষতা (এফিসিয়েন্সি) বাড়ানোর জন্য নবায়নযোগ্য ও হাইড্রোজেনের শক্তির ভূমিকার ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।

ইউরোপ জানে যে এ কাঠামোগত বিনিয়োগের বেশির ভাগ ফল আসতে সময় লাগবে। তাই ইউরোপীয় দেশগুলোও তাদের ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোর জন্য জ্বালানি ভর্তুকি চালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। শুধু গত এক বছরে ইউরোপ জ্বালানি ভর্তুকিতে প্রায় ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করেছে (যা বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় দুই গুণ)। পাশাপাশি জোর করে গ্যাসের চাহিদা কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। যেমন ২০২১-এর তুলনায় ২০২২ সালে ইউরোপ প্রায় ১৩ শতাংশ কম গ্যাস ব্যবহার করেছে। 

রাশিয়ান গ্যাস ছাড়া ইউরোপ কি প্রথম বছরটা কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছে? জ্বালানি সংকটের জন্য যদিও বেশ কয়েকটি দেশে মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী ছিল, কিন্তু লক্ষণীয়ভাবে ইউরোপ একটি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে, যা যুদ্ধের শুরুতে ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল। এর পেছনে জ্বালানি ভর্তুকির একটি বড় ভূমিকা ছিল। এর সঙ্গে শীত শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশে গ্যাস স্টোরগুলো সফলভাবে ভরাট করে ফেলেছিল। ২০২২ সালের শেষ দিকে যখন গ্যাসের দাম কমতে শুরু করে, এ গ্যাসের আধারগুলো অনেকাংশে ভরাটই থেকে গেছে। গ্যাসের চাহিদা কমানোর পাশাপাশি ইউরোপের এলএনজি আমদানিও যথেষ্ট বেড়ে যায়। ইউরোপের সৌভাগ্য যে চলমান জ্বালানি সংকটের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল উদ্বৃত্ত নিয়ে বসে আছে, যার পেছনে ২০১০ দশকের গোড়ার দিকে শেল গ্যাস বিপ্লব অবদান অন্যতম। গত ১০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্বৃত্ত গ্যাস বিদেশে পাঠানোর জন্য এলএনজি অবকাঠামোতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিশেষ করে এশিয়ায় গ্যাসের দাম অনেক চড়া। গত দশকে এশিয়ার দেশগুলো এলএনজির বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় তিন-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী।

২০২১ সাল পর্যন্ত চীন বিশ্বের বৃহত্তম এলএনজি ভোক্তা ছিল। আর ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর, জাপান তার জ্বালানি মিশ্রণে বৈচিত্র্য আনতে এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দেয়। চীন আর জাপানের এলএনজি আমদানির ধারা ঠিক থাকলে বিশ্ববাজারে এলএনজি পাওয়া ইউরোপের জন্য হয়তো আরো কঠিন হতো। কিন্তু ২০২১-এর শেষের দিকে চীনের এলএনজির চাহিদা প্রায় ২০ শতাংশ কমে যায়। ২০২২-এ চীনের কঠোর লকডাউনটি ইউরোপের জন্য একদিক থেকে শাপেবর ছিল, যা বৈশ্বিক এলএনজি সরবরাহ-চাহিদা ভারসাম্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। এছাড়া চীন গত বছর থেকে কয়লার ওপর তাদের নির্ভরতা আগের থেকে বাড়িয়ে দেয় এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়ান গ্যাসের সরাসরি সরবরাহের কাজটিও করে ফেলে। এসব কিছুর পেছনে ভূরাজনীতি একটা বড় ফ্যাক্টর, কারণ চীন জানে যে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশে মধ্যপ্রাচ্য বা অন্য এলএনজি রফতানিকারী দেশ চীনে জ্বালানির জোগান বন্ধ করে দিতে পারে। এসব কিছুর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল, তাই ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাসের প্রবাহ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের রফতানি বাড়িয়ে দেয় এবং ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলএনজি সরবরাহকারী হয়ে ওঠে।

ইউরোপের এলএনজির চাহিদা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানিকারক দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের গ্যাস রফতানি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি উপভোগ করেছে। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস রফতানি ১৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের এলএনজি আমদানির প্রায় অর্ধেক। এটি একটা অসাধারণ ব্যাপার, কারণ ২০১৬ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এলএনজি রফতানির ক্ষমতা ছিল না। গত বছর ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রাকৃতিক গ্যাস কিনেছে। কাতার বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলএনজি রফতানিকারক এবং ইউরোপের কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হয়ে গেল? এর একটা বড় কারণ হলো, কাতার এশিয়ার বেশকিছু দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আবদ্ধ। আর মার্কিন এলএনজি রফতানিকারকরা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় (পাশাপাশি আগামী বছরগুলোয়) অনলাইনে আসা একাধিক এলএনজি রফতানি সুবিধা স্টেশনে অনেক বিনিয়োগ করছে, যা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপকৃত হয়েছে। শেল গ্যাসের কারণে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট ক্রয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত ছিল। এছাড়া একই সময়ে বিদ্যমান পাইপলাইনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও আলজেরিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ইউরোপে আগের তুলনায় বাড়িয়ে দেয়। গত শীতে যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপের জ্বালানি-আমদানির মূল অংশীদার করে তুলেছে, এ আসন্ন শীতেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বজায় থাকবে। আমি কিছু ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষককে এও দাবি করতে শুনেছি যে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্বৃত্ত গ্যাস বিক্রির জন্যই এ যুদ্ধে ইন্ধন জুগিয়েছে। কথাটা কতটা ঠিক তা ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দিই। 

ইউরোপীয় সরকারগুলো ২০২২ সালে শক্তি ভর্তুকিতে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে, যা তাদের কাঠামোগত বিনিয়োগ পরিকল্পনার চেয়েও বেশি। এরই মধ্যে বলেছি, শুধু এক বছরে ইউরোপ শক্তি ভর্তুকিতে প্রায় ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করেছে। ইউরোপ এত টাকা কোথায় পেল? ভর্তুকির সব টাকাই বন্ড মার্কেট থেকে ধার করে নেয়া। ২০২১-এর তুলনায় কিছুটা কম হলেও ২০২২ সালে ইউরোপীয় সরকারগুলো সার্বভৌম বন্ড ইস্যু বাড়িয়ে দেয় এ ভর্তুকি ফাইন্যান্স করার জন্য এবং এর ফলে বেশির ভাগ প্রধান ইউরোপীয় অর্থনীতির ঋণ-টু-জিডিপি অনুপাত এরই মধ্যে ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানিসম্পর্কিত এ বৃহৎ রাজস্ব ব্যয় ভবিষ্যতে অনেকটা বোঝা এবং অবাঞ্ছিত হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং অন্যান্য খরচের বরাদ্দ যেমন নিম্ন-আয়ের গোষ্ঠীর জন্য আবাসন ভর্তুকি কমে যেতে পারে।

মাত্র কয়েক মাস আগে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ) সতর্ক করে যে এ বছর রাশিয়ান সরবরাহ কমার ঝুঁকি আরো বেশি। গত বছরের তুলনায় ইউরোপে এবার প্রচণ্ড শীত পড়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি চীনের এলএনজি ব্যবহার পুনরায় বেড়ে যেতে পারে। এজন্য ২০২৩-২৪ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোকে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ সুরক্ষিত করতে বেশি কসরত করতে হবে। যেহেতু জ্বালানির কাঠামোগত বিনিয়োগের কংক্রিট ফলাফল আসতে এখনো বেশকিছু বছর লাগবে, ২০২২-এর পুনরাবৃত্তি এড়াতে ইউরোপকে অনেক বিচক্ষণতা দেখাতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ঝুঁকি বিবেচনা করলে বিশ্বব্যাপী গ্যাসের দামের অস্থিরতা এবং ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তা উদ্বেগগুলো সম্ভবত গত বছরের তুলনায় কম চরম হবে। প্রথমত, বাজারে এখন প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত দেড় বছরের সর্বনিম্ন স্তরের কাছাকাছি ট্রেড করছে, তাই ইউরোপ তার স্টোরেজ ইউনিটগুলো সহজেই পূরণ করতে পারবে। উপরন্তু ইউরোপীয় গ্যাস স্টোরেজের মাত্রাও ঐতিহাসিকভাবে বছরের এ সময়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে ইউরোপের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। যখন ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাকৃতিক গ্যাসের সবচেয়ে বড় ভোক্তা জার্মানির এলএনজি ডিকম্প্রেসার ছিল একদম খালি। কয়েক মাস ধরে এবং আগামী মাসগুলোয় বিশ্ববাজার থেকে সরাসরি এলএনজি আমদানি করতে জার্মানিতে একাধিক ভাসমান ডিকম্প্রেসার টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে (এবং হবে)।৷ তিনটি এরই মধ্যে অনলাইনে এসেছে এবং অন্তত আরো দুটি এ বছর অনলাইনে আসবে।৷ গত এক বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে মোট আটটি নতুন ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট যুক্ত করা হয়েছে, যা এ অঞ্চলের আমদানি টার্মিনালগুলোর সংখ্যা ২৩-এ উন্নীত করেছে। তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার রফতানি ক্ষমতা বাড়াতে আরো প্রস্তুত, নতুন টার্মিনাল উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে এবং ফ্রিপোর্ট হিসেবে অগ্নিকাণ্ডের কারণে এ বছর বন্ধ হয়ে যাওয়া প্লান্টের কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। চতুর্থ চীন পুনরায় চালু হওয়া সত্ত্বেও এটা লক্ষ করা গেছে যে চীন পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক গ্যাস সংগ্রহ করছে এবং আশা করা যায়, এ প্রবণতা ২০২৩ সালেও অব্যাহত থাকবে। 

উল্লিখিত পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে গত বছরের তুলনায় জ্বালানির দাম এ বছর অনেকটা কম থাকবে। জ্বালানি বাজারের পুনঃভারসাম্যতা ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক গ্যাসের দামের অস্থিরতাকে (ভোলাটিলিটি) কমিয়ে দেবে। ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি কমাতে অবদান রাখার পাশাপাশি উদীয়মান দেশগুলোর জন্যও বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের এ ফিরে আসা বেশ স্বস্তির। ইউরোপের সব প্ল্যান এ পর্যন্ত কাজ করলেও দুটি বিষয়ের ওপর সংক্ষেপে না বললেই নয়। ২০২২ সালে গ্যাসের কৃচ্ছ্রসাধনের একটি চড়া মূল্য দিতে হয়েছে মানুষের জীবন দিয়ে। দি ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের এক সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে যে জ্বালানির দাম বাড়ার জন্য ইউরোপে প্রায় ৬৮ হাজার অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে, কারণ ঠাণ্ডা অবস্থায় মানুষের কার্ডিয়াক এবং শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বেড়ে যায়। একই সঙ্গে জ্বালানি ভর্তুকি ২৬ হাজারের বেশি জীবন রক্ষা করে। দ্বিতীয়ত, জ্বালানির সাশ্রয় ইউরোপের শিল্প খাতকে আরো সংকুচিত করে দিতে পারে। অদূরভবিষ্যতে ইউরোপের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক ব্যাপ্তির জন্য এটা একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

(লেখাটির জন্য আমি এসএলজে ইউরিজোন হেজ ফান্ডের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের প্রতি কৃতজ্ঞ) 

সৈয়দ আবুল বাশার: অর্থনীতির অধ্যাপক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন