উন্নয়ন বাজেট সর্বোচ্চ বরাদ্দ পরিবহন ও যোগাযোগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা দেশের উন্নয়নে ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ উন্নয়ন ব্যয়ের ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ টাকাই পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্মাণাধীন একাধিক মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), চার লেনের মহাসড়ক উন্নীতকরণ, নতুন রেলপথ নির্মাণ, যমুনা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ, নৌপথ ও নৌবন্দর, বিমানবন্দর উন্নয়নসহ নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এ টাকায়।

প্রস্তাবিত উন্নয়ন বাজেটে খাতওয়ারি বরাদ্দ বিভাজন নতুন প্রবর্তিত ১৫ খাতে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা খাতে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে মোট উন্নয়ন বাজেটের ৮ শতাংশ; কৃষি খাতে ৬; স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৯; সাধারণ সরকারি সেবায় ৫ দশমিক ৩; বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫ দশমিক ২; গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধায় ৫; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদে ৩ দশমিক ৪; সামাজিক সুরক্ষায় ৩ দশমিক ২; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ২ দশমিক ৪; জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ১ দশমিক ৪; বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মে ১ দশমিক ৩ এবং প্রতিরক্ষা খাতে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর এ খাতের উন্নয়নে ৩১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এটি সংশোধন করে ২৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মহাসড়ক বিভাগের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে দ্রুতগতির গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। টাঙ্গাইল-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো উন্নীত করা হচ্ছে চার লেনে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘ঢাকায় মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে গণপরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।’

এদিকে পদ্মা সেতু চালু হলেও প্রকল্পটি এখনো চলমান। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প ছাড়াও ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় একাধিক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণসহ একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সেতু বিভাগের মাধ্যমে ৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি বছর সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। এটি সংশোধন করে অর্থমন্ত্রী ৭ হাজার ৬৭ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন।

অন্যদিকে বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তা মিলিয়ে ৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পদ্মা সেতুর জন্য প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ রেলপথ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ, ঢাকা-চট্টগ্রামে ডাবল লাইন রেলপথ, বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে নতুন রেল সেতু নির্মাণসহ দেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাইপলাইনে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম দ্রুতগতির রেলপথ, ঢাকা সার্কুলার রেলসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। আগামী অর্থবছর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেয়ার জন্য ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছর ১৪ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় রেলপথ মন্ত্রণালয়, যা সংশোধন করে ১২ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

একইভাবে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৫৪২ কোটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জন্য ১ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যোগাযোগ খাতে আমরা সব মাধ্যমে অর্থাৎ সড়ক, সেতু, রেল, নৌ ও আকাশপথের সমন্বিত উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপদ, টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে বর্তমানে চলমান কার্যক্রমগুলোর সময়ানুগ বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নোত্তর মান সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন