তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানি

চালান খালাসে হুক ব্যবহারে চট্টগ্রাম বন্দরের নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা হয় কাপড়। এসব কাপড়ের চালান খালাসের সময় বন্দরের শ্রমিকরা এক ধরনের হুক ব্যবহার করেন। ফলে কাপড়ের বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন তৈরি পোশাকের মালিকরা। সমস্যাটির সমাধান চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংস্থার চিঠির পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের হুক ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়। পুনরায় হুক ব্যবহার করা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয় বন্দরের নির্দেশনায়।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, ‘তৈরি পোশাক খাতের আমদানীকৃত কাপড়ের চালান খালাসকালে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োজিত শ্রমিকরা হুক ব্যবহার করে থাকে। হুক ব্যবহারের ফলে কাপড়ের বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র সৃষ্টি হয়ে নষ্ট হচ্ছে, যা সরাসরি রফতানি কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। বন্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে আমদানীকৃত কাপড়ের প্রতি গজের হিসাব বন্ডে দাখিল করতে হয় এবং ক্রেতার প্রদত্ত ডিজাইন অনুযায়ী সহগ (কনজাম্পশন) নির্ধারণ করে কাপড় আমদানি করা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে হুক ব্যবহারের মাধ্যমে কাপড় নষ্ট হওয়ার ফলে উৎপাদন কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে এবং ক্রেতার চাহিদামতো পণ্য রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ 

১৭ মে পাঠানো ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘দেশের রফতানির বৃহত্তর স্বার্থে এবং তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানির ধারা চলমান রাখার লক্ষ্যে এ শিল্পের আমদানীকৃত কাপড়ের চালানে হুক ব্যবহার না করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

বিজিএমইএর চিঠির ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, ‘এলসিএল কনটেইনার আনস্টাফিং করার সময় এবং শেডের কার্গো ডেলিভারিতে মার্চেন্ট শ্রমিক বা ডক লেবার কর্তৃক শতভাগ রফতানিমুখী রেডিমেড গার্মেন্টসের কাঁচামাল ও এর ব্যবহৃত অ্যাকসেসরিজে হুক ব্যবহার করা হয় বলে বিজিএমইএসহ বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানা কর্তৃক অভিযোগ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১১টি সিএফএস বা শেড এ আমদানীকৃত এলসিএল কনটেইনার থেকে যেসব পণ্য আনস্টাফিংপূর্বক সংরক্ষণ করা হয় তার শতকরা ৯০ ভাগ পণ্যই বিজেএমইএর সদস্যদের। বিজিএমইএর সদস্যরা তাদের আমদানীকৃত কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাত করে চূড়ান্ত পণ্য উৎপাদনপূর্বক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এলসিএল কনটেইনারের কার্গো আনস্টাফিং করার সময় এবং শেডের কার্গো ডেলিভারিতে হুক ব্যবহার করে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, ফ্যাব্রিকস ও এর ব্যবহৃত অ্যাকসেসরিজ চিড়ে নষ্ট করে ফেলা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত, যা বিদেশে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করে তথা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে।’

বিজিএমইএর চিঠি পাঠানোর পরদিন ১৮ মে জারি করা ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, ‘এলসিএল কনটেইনার আনস্টাফিং করার সময় এবং শেডের কার্গো ডেলিভারিতে মার্চেন্ট শ্রমিক বা ডক লেবার কর্তৃক শতভাগ রফতানিমুখী রেডিমেড গার্মেন্টসের কাঁচামাল, ফ্যাব্রিকস ও এর ব্যবহৃত অ্যাকসেসরিজে হুক ব্যবহার না করার জন্য আপনাদের নির্দেশক্রমে বলা গেল। এর আগে আপনাদের বারবার পত্র দেয়া সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় আপনাদের পুনরায় সতর্ক করা গেল। অন্যথায় বন্দরের প্রচলিত বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন