‘‌বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইনস্ট্রুমেন্টাল অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং’

ছবি: বাপ্পা মজুমদার

দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার বাপ্পা মজুমদার। তার কণ্ঠে যেমন শোনা গেছে অনেক জনপ্রিয় গান, তেমনি অনেক প্রশংসিত গানের সুর-কথার স্রষ্টা তিনি। ওস্তাদ বারীন মজুমদার ও ইলা মজুমদারের ছেলে বাপ্পা ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ সুরকারের মর্যাদা পেয়েছেন। ২৫ মে তার ইউটিউব চ্যানেলে ইনস্ট্রুমেন্টাল ট্র্যাক ‘রাগাস্কেপ’ প্রকাশ পেয়েছে। গান ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাপ্পা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুমন দে

কিছুদিন আগেই বলেছিলেন মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্টের প্রতি আপনার আগ্রহের কথা। ‘রাগাস্কেপ’ কি তারই প্রতিফলন?

আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, কেবল গান গাওয়াই তো আমার কাজের একমাত্র জায়গা নয়। আমি মনেপ্রাণে একজন মিউজিশিয়ান, কম্পোজার, গীতিকার। সব মিলিয়ে আমার নিজের এক ধরনের চাওয়া থাকে। যে চাওয়াটা সবসময় শ্রোতাকেন্দ্রিক নয়। যেকোনো ক্রিয়েটারের নিজের মনের একটা ভাবনা থাকে, কিছু আইডিয়া থাকে। রাগাস্কেপ সে আইডিয়ার একটা প্রতিফলন। আমি এর আগেও কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে কাজ করেছি, তবে সেটা এত বিশদ আকারে নয়। নিজের ভাবনাগুলোকে সামনে নিয়ে আসার জন্যই এটা করা। ওরিয়েন্টাল মিউজিকের সঙ্গে ওয়েস্টার্ন মিউজিকের মেলবন্ধন কতটুকু করা যায়, এ ভাবনার জায়গা থেকে কাজটা করা এবং সামনে আমি আরো কিছু কাজ নিয়ে আসছি। আমি একটা ইনস্ট্রুমেন্টাল অ্যালবামের কাজ শুরু করেছি। এখন থেকে চেষ্টা করব গানের পাশাপাশি ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে এমন কাজ করার। 

দেশে নতুন গানের একটা সংকট দেখা যাচ্ছে, সেখানে ইনস্ট্রুমেন্টাল কাজ করছেন। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দুই বিষয় নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাচ্ছিলাম।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গানই অনেক কঠিন বিষয়, সেখানে ইনস্ট্রুমেন্টাল আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। আসলে মানুষ মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে কিনা, সেটা এখন আমাদের সবার কাছে অনেক বড় প্রশ্ন। আর ভালো গান হচ্ছে না, এটা আমি কখনই বলব না। দেশে ভালো গান হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভালো গানের পাশাপাশি অনেক বেশি শ্রবণের অযোগ্য গানও হচ্ছে। ফলে ভালো গানের থেকেও মানুষের ফোকাস সরে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা যেসব কনটেন্ট পাচ্ছি সেগুলোকে কোনোভাবেই গান বলা যায় না। আমি কারোর নাম উল্লেখ করতে চাই না। কিন্তু সেসব গান কিংবা সেসব ব্যক্তিকে ক্রমাগতভাবে শেয়ার করে, কমেন্ট করে আমরা তাদের এত বেশি গুরুত্বপুর্ণ করে ফেলেছি, তাতে মানুষের সিরিয়াস গানের প্রতি মনোযোগটাই চলে গেছে। আমার কাছে মনে হয় এ মনোযোগ ফিরিয়ে আনা জরুরি। এটা কীভাবে হবে আমি জানি না। আমার মনে হয় সবাইকে মিলে সে চেষ্টা করতে হবে। 

ভালো গানগুলো ভিউ পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে শ্রোতাদের কাছে ভালো গানগুলো আসছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কী ভূমিকা রাখতে পারে শ্রোতাদের কাছে গানগুলো পৌঁছে দিতে ?

আসলে ভালো গানগুলোকে যে মনোযোগ দিয়ে দেখার দরকার, মানুষ তা দেখছে না। অন্যদিকে যে গানের মধ্যে কিছু নেই, শুধু চটকদার, সেগুলো মানুষ দেখছে আর ভিউ বাড়ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই অ্যালগরিদম ওই সব গান সামনে নিয়ে আসছে। এটা আসলে পুরোটা এআইনির্ভর হয়ে গেছে, তাই যেটায় ভিউ বেশি সেটাই সামনে আসে। এক্ষেত্রে শ্রোতারা যারা গান ভালোবাসেন, তাদের উচিত ভালো গানগুলো প্রমোট করা যেন সেগুলো অ্যালগরিদমে সামনে চলে আসে। 

নিয়মিত চলচ্চিত্রের গানে কাজ করছেন। সর্বশেষ লিডার আমি বাংলাদেশে কাজ করলেন, যার একটি গান বেশ সাড়া ফেলেছে। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র ও ওটিটি প্লাটফর্মে গানের যে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে সেটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

আমাদের দেশে চলচ্চিত্রে গান করার এখন প্রচুর সুযোগ আছে। বাংলাদেশে বর্তমানে সব মাধ্যমেই প্রচুর গানের কাজ হচ্ছে। চলচ্চিত্রে এখন বেশ ভালো গান হচ্ছে। আমার মনে হয়, চলচ্চিত্রে এখন সিরিয়াস গান নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুনরা অনেক ভালো কাজ করছে, এক্সপেরিমেন্টও করছে। আমার তাদের কাছে আহ্বান থাকবে, তারা যেন গান নিয়ে আরো একটু সিরিয়াসলি ভাবে। আমি বিশ্বাস করি, তাহলে অনেক ভালো গান তৈরি হবে।

সামনে নতুন কোনো কাজ নিয়ে আসছেন কি?

আমি নিয়মিতভাবে কাজ করছি। তবে শিশুদের জন্য একটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করছি। শিশুদের নিয়ে গান তৈরি করছি, যেটা তারাই গাইবে। বেশকিছু ট্র্যাক এরই মধ্যে করেছি। আমি খুব দ্রুত ঘোষণা দেব যে শিশুরা গান করতে পারে তাদেরকে দিয়ে গানগুলো করানোর। কাজটা সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে করছি। 

শিশুদের নিয়ে কাজ করার ভাবনাটা কীভাবে পেলেন?

আমাদের শিশুদের জন্য তো তেমন গান নেই। শিশুরা গানের মধ্যে দিয়ে প্রকৃতিকে যেন ভালোবাসতে শিখতে পারে, সে ভাবনা থাকেই এটা করা। পাতা ছিঁড়তে হয় না, গাছের প্রাণ আছে; রাস্তার কুকুর বৃষ্টিতে ভিজলে তাকে আশ্রয় দেয়া। এ রকম মানবিক গুণগুলোর দিকে ফোকাস করা খুব জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন