আর কোনো অশান্তি-সংঘাত চাই না —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল বিআইসিসিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশ আর কোনো সংঘাত চায় না, বরং জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি চায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আর কোনো অশান্তি ও সংঘাত চাই না। মানুষের জীবনকে উন্নত করতে চাই এবং আমরা সর্বদা এটি কামনা করি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন থেকে অব্যাহত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে।’ 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দারিদ্র্যের হার এবং মাতৃমৃত্যু হ্রাস করতে, শিক্ষার হার এবং মানুষের গড় আয়ু বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। দেশে বিরাজমান টেকসই ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশই বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক অগ্রগতির একমাত্র কারণ। একটি শান্তিপূর্ণ টেকসই পরিবেশ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে সহায়ক এবং সবাইকে এটি মনে রাখতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী তার আলোচনার মাধ্যমে সব বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন, বাংলাদেশ যে কাজটি ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন কেন এ অস্ত্র প্রতিযোগিতা (চলছে)? এর জন্য যে অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ক্ষুধার্ত শিশু ও মানুষের জন্য ব্যবহার করা হবে না কেন? এ অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য হাজার হাজার শিশু ও নারী বিশ্বজুড়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে।’ এ সময় তিনি রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, যারা নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল, যা আমাকে ১৯৭১ সালের পরিস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা চাই পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসুক, যেখানে কোনো ধরনের অশান্তি থাকবে না।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, সারা জীবন শান্তির বাণী প্রচার করেছেন, কিন্তু তাকে জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যে মানুষটি সারা জীবন শান্তির কথা বলেছেন, তাকে তার জীবন দিতে হয়েছিল। যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, তারাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। এখনো প্রতি মুহূর্তে তাদের (স্বাধীনতাবিরোধীদের) বাধা অতিক্রম করতে হচ্ছে।’ 

দেশ-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করছেন, তাদের স্বীকৃতি দিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শান্তি পুরস্কার’ প্রবর্তনেরও ঘোষণা দেন সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের মধ্যে নেই। তবে আমরা চাই যে তার দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে উঠুক। পাশাপাশি আমরা শান্তি চাই এবং অবশ্যই আমরা শান্তির পথে এগিয়ে যাব।’ 

‘জনগণই শক্তি, জনগণই শক্তির উৎস’—বঙ্গবন্ধুর এ উক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী এবং সেই বিশ্বাস নিয়েই আমার পথচলা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষায় অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এক নম্বর দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বজুড়ে শান্তি বজায় রাখছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য ছিল ৪১ শতাংশ, কিন্তু আজ সরকার তা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। দরিদ্রের সংখ্যা যেখানে ছিল ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, তা আজ ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এ দেশে কোনো মানুষ দরিদ্র, গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষ অন্তত তাদের মৌলিক অধিকার—খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান পাবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’ বাংলাদেশের আজকের এ আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশের অবদান বলে উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এবং মূল বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও গবেষক মোনায়েম সরকার। মূল বক্তব্যের ওপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতি মুজাফফর হোসেন পল্টু। শুরুতেই বঙ্গবন্ধু ও তার জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তির ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট ও প্রথম দিনের কভার উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দিবসটি উপলক্ষে একটি সুভেনির প্রকাশনার প্রচ্ছদও উন্মোচন করেন। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। একই সঙ্গে সেটি ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ফিদেল কাস্ত্রো, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, সালভাদর আলেন্দে, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা, জওহরলাল নেহরু, মার্টিন লুথার কিং ও লিওনিদ ব্রেজনেভের মতো বিশ্বনেতারাও এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। 

বিশ্ব শান্তির সংগ্রামে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী মেরি কুরি ও পিয়েরে কুরির অবদানকে স্মরণ করতে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মানবিক কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৫০ সাল থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থাকে জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার দিয়ে আসছে। এ পুরস্কার বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। মহান এ অর্জনের ফলে বঙ্গবন্ধু থেকে তিনি পরিণত হন বিশ্ববন্ধুতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন