পাবলিক হেলথ

সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের সুযোগ জনস্বাস্থ্য শিক্ষায়

জনস্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় শিক্ষার্থীদের ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

পাবলিক হেলথ এডুকেশন বা জনস্বাস্থ্য শিক্ষা হলো সমাজ, সংগঠন, সরকারি এবং বেসরকারি, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মিলিত চেষ্টা এবং তথ্যাভিজ্ঞ পছন্দের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, জীবৎকাল বৃদ্ধি ও মানব স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিজ্ঞান এবং কলা। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করায় জনস্বাস্থ্য শিক্ষার অগ্রগতি ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য শিক্ষার পরিধি ব্যাপক ও বহুমাত্রিক। ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার সঙ্গে দেশটির মা ও শিশুর উচ্চ মৃত্যুহার, অপুষ্টি, সংক্রামক রোগ এবং অসংক্রামক রোগসহ বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাদের দক্ষতা, জ্ঞান এবং নেতৃত্ব প্রয়োগ করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারেন। রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে, স্বাস্থ্যের ফল উন্নত করতে এবং প্রতিকূল স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু ঘটনাগুলোর জন্য স্থিতিস্থাপক একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

বর্তমানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দুটি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। একটি হলো ব্যাচেলর অব পাবলিক হেলথ (বিপিএইচ) এবং অন্যটি হলো মাস্টার অব পাবলিক হেলথ (এমপিএইচ)। বিপিএইচ চার বছরের স্নাতক যা শিক্ষার্থীদের জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপিএইচ ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এ ডিগ্রিটি কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রদান করা হয়।

মাস্টার অব পাবলিক হেলথ (এমপিএইচ) হলো সর্বাধিক স্বীকৃত স্নাতক স্তরের পেশাদার ডিগ্রি। বাংলাদেশে এমপিএইচ প্রোগ্রামগুলো শিক্ষার্থীদের জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যা, সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনার বিকাশ, গবেষণা পদ্ধতি, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, প্রোগ্রাম পরিচালনা এবং নীতি বিকাশের একটি বিস্তৃত উপলব্ধি প্রদান করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রোগ্রামগুলোর লক্ষ্য হলো জনস্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ যেমন সংক্রামক রোগ, অপুষ্টি, অসংক্রামক রোগ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করা। বাংলাদেশে এমপিএইচ প্রোগ্রামগুলো সম্পূর্ণ হতে সাধারণত এক-দুই বছর সময় লাগে এবং শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণা প্রকল্প বা মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়।

বাংলাদেশে বিপিএইচ এবং এমপিএইচ প্রোগ্রামের স্নাতকরা বিভিন্ন খাতে ক্যারিয়ার গড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ, আইওএম, সেভ দ্য চিলড্রেন, আইসিডিডিআর,বিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় পাবলিক হেলথে স্নাতকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক চাহিদা। এছাড়া সরকারের অধীনে আইইডিসিআর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, পরিবেশ, পুষ্টি পরিকল্পনা ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে পাবলিক হেলথ গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করতে পারেন। জনস্বাস্থ্য পেশাদাররা একাডেমিক প্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের কোম্পানিতেও কাজ করতে পারেন। এমপিএইচ শেষ করার পর, স্নাতকরা গবেষণায় অভিজ্ঞতা অর্জন করে বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন।  

দেশে পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য বিষয়ে পড়াশোনার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রোগ্রামের সময়কালের ওপর নির্ভর করে। গড়ে বাংলাদেশে একটি এমপিএইচ প্রোগ্রামের খরচ দেড় লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একাডেমিক কর্মক্ষমতা, আর্থিক প্রয়োজন এবং অন্যান্য মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রোগ্রামটি ফুলটাইম কোর্স প্রদান করে এবং কিছু সাপ্তাহিক কোর্সও প্রদান করে থাকে।

বিভিন্ন সেক্টরে জনস্বাস্থ্য পেশাদারদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য শিক্ষার সম্ভাবনা আশাব্যঞ্জক। যেহেতু দেশটি জনস্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলেছে, এখানে প্রশিক্ষিত পেশাদার প্রয়োজন যারা প্রমাণভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারবেন। করোনা মহামারী বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব দেখিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম শরণার্থী শিবির রয়েছে বাংলাদেশে। এ মানবিক সংকট এবং চলমান জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে সমাধানে আমাদের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে দক্ষ জনবল দরকার। বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সহায়ক এবং একটি শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী এবং অন্যান্য সেক্টর এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বহুমাত্রিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজও করে যাচ্ছে। বিগত বছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুহার, মাতৃমৃত্যুহার এবং অপুষ্টি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য সমস্যার বোঝা এখনো যথেষ্ট রয়েছে। দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে নতুন স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যদি আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আরো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে।

ড. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার, চেয়ারম্যান, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় 

ডা. ইমতিয়াজ মাহমুদ, প্রভাষক, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন