আলোকপাত

বাংলাদেশের জিডিপির হিসাবে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

উন্নয়ন অর্থনীতিতে আমি গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট ওরফে জিডিপি একটি বহুল উচ্চারিত ও উৎকলিত শব্দসমষ্টি, নন্দিত এবং এমনকি বিনম্র শ্রদ্ধার পাত্র। আগে ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদনে ‘বিনম্র’তার উপস্থিতি ছিল না মনে করেই ইদানীং বিনম্র শব্দ জুড়ে দেয়ার চল চালু হয়েছে। ব্যাপারটাকে আমার কাছে অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ বলে মনে হয়। মুরব্বিকে সালাম কালাম দেয়ার মধ্যে আন্তরিকতা যখন থেকে কমা শুরু করল তখন এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তা বাড়ানোর পথ রচনার সূত্রপাত। ইতিহাসে কোনো ঘটনার আকিকার আগেই তাকে ‘রচনা’ কিংবা ‘নির্মাণে’র দিকে ঝোঁক যেমন বাড়ছে আমি বেচারা জিডিপি, আমাকে উন্নয়নের নিরীহ মাপকাঠি বানানোর নাম করে আমাকে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে মোটাতাজাকরণের প্রয়াস শুরু হওয়ায় প্রবৃদ্ধি ও উন্নতিকে ‘উন্নয়ন’-এর পদাবলি সাব্যস্তকরণের দিকে ঝুঁকছে সবাই। আমার নাম-পরিচয় ভালো করে জানে না, বোঝে না, এমন আতিপাতিরা প্রতিবেশী দুই-তিন সংসারের আকার-অবয়বের অর্থাৎ জিডিপির যোগফলের চেয়ে তাদেরটা নাকি বেশি বলে নিজেদের সম্মান এবং স্থায়িত্বের দাবি করতে কসুর করেন না। আমি জীবদ্দশায় কারো আত্মতুষ্টির এ ধরনের প্রশংসার পাত্র বা উপলক্ষ হব, ভাবতেই পারিনি। 

আমি ‘উন্নয়নের’ শনৈঃ শনৈঃ অগ্রগতির ‘রোল মডেলে’র মতো মেডেল প্রাপ্তির জন্য যত্রতত্র ব্যবহৃত হচ্ছি। নেতিবাদীরা আমার এ অপব্যবহারে কিংবা অ-উন্নতি (কোনো সম্মানীয় পদবির আগে ‘ভুয়া’ শব্দের পরিবর্তে অ-প্রত্যয় যোগের সদয় নির্দেশনা যেমন দেয়া হয়) দেখে আনন্দও যেমন পান, ভিন্নতায় বিষাদে আপতিত হন। ইতিবাদীরা যেন আমার প্রতি আস্থা ও নির্ভরশীল হচ্ছেন অবিরত। ‘বিশেষজ্ঞ’ পদবিধারীদের নেতিবাদীরা ব্যাকরণের সন্ধি-সমাসের উপধারা উল্লেখ করে ‘বিশেষভাবে অজ্ঞ’ কিংবা ‘অতিরিক্ত’ পদবিধারীদের নিম্নমানের কক্ষ-চেয়ার-টেবিল দেয়া দেখে অতিমাত্রায় রিক্ত (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস) বলে ভাবতে থাকে। নেতিবাদীদের কাছে শুধু আমার কেন কারোরই কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ে না। তাদের চোখে ছানি পড়লেও পড়তে পারে। কিন্তু তা পরিষ্কার করার ওষুধেও ভেজাল, প্রক্রিয়ায় (প্রসিডিউর) বিভ্রান্তি এবং প্রয়োগকারীদের রামকানাইয়ের মতো নির্বোধ মনে হয়। আর হবেই বা না কেন ইতিবাদীদের অতিপ্রচার ও অপ্রতিরোধ্য সাফল্যের ধাঁধায় নেতিবাদীদের চোখ কচলানি বাড়ছে বৈকি। ফলে এত উন্নতি তাদের চোখে দাঁড়াবারই পারে না। ইতিবাচক চশমার পাওয়ার বাড়ছে, ফ্যাকো মেশিনে তার জ্বলজ্বলন্ত রূপ ধরা পড়ছে। ‘উন্নয়ন’ এখন তাই উচ্চকণ্ঠ হতে পারছে। উন্নয়নের নাম ভাঙিয়ে যেকোনো (লোভনীয় কিংবা লাভজনক নির্বিশেষে) পদ, পথ পাওয়ার পথ বেরিয়ে আসছে। 

আমি জিডিপি আগে এতটা সমাদর ও সুনজরে আসার অবকাশ পাইনি। যখন বিদেশী ঋণ অনুদান নিয়ে উন্নয়ন এমনকি অনুন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন চলত তখন আমি জিডিপি ছিলাম অতিনগণ্য। কিন্তু যখন থেকে নিজেদের অর্থায়নের সক্ষমতা একটু একটু করে বাড়তে শুরু করল, নিজের সুস্বাস্থ্য শক্তি ও সামর্থ্য দেখানোর প্রশ্নকে সামনে আনা হলো তখন থেকে আমার বহুল ব্যবহার শুরু হয়ে গেল। আমিই হয়ে গেলুম উন্নয়নের মাপকাঠি। আমার প্রকৃত পরিচয় যেন সেই ‘বাহ্বা বেশ বেশ’-এর স্বরবৃত্তের মধ্যে আটকিয়ে গেল। এখন সবাই আমাকে ব্যবহার করে আপাতত উন্নয়ন-অর্থনীতির উথাল-পাতাল অবস্থা ঠাওর করানোর ক্ষেত্রে। উথাল-পাতালকে স্পষ্টীকরণের জন্য বছর বছর আমার গ্রোথ অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার দেখানো শুরু হয়ে গেল। আমি জিডিপি যথাযথ হিসাবায়িত হতে পারলাম কিনা সেদিকে না তাকিয়ে বছর থেকে বছরে আমার ঊর্ধ্ব-অধঃগতির শতকরা কিংবা অনুপাতে তারতম্য দেখানোর মুনশিয়ানার চর্চা শুরু হয়ে গেল। প্রচারসর্বস্ব কোনো কোনো উন্নয়ন-অর্থনীতিতে আমার হিসাবের ভিত্তি বছরের নিকাশ নির্মাণের জন্য নথি চালাচালি বেড়ে গেল। কাজির খাতায় দেখানো হলেও গোয়ালে গরুর হিসাব মেলানো যায় না তা সত্ত্বেও। গোটা দেশের দরিদ্র, হতদরিদ্র, ধনী, অতিধনী, সিনিয়র ধনী সব মানুষকে আমার উন্নতির গড় হিসাবে বের করার চেষ্টা চলল। সে সুবাদে হঠাৎ করে দেখা গেল উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে যাওয়ার পথ খুলে গেল। মাথা পিছু আয় টাকার অংকে জ্যামিতিক হারের চেয়েও বেশি বেগে বাড়তে শুরু করল। যে দেশে মুদ্রাস্ফীতি মূল্যস্ফীতিকে যেমন আয়ত্তে আনতে পারে না, সে দেশের মাথাপিছু আয়ের হিসাব বাস্তবে পকেটে থিতু হওয়া অংকের সঙ্গে মেলানো কঠিন হলেও প্রচার প্রশংসায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে, ডলারে এটা ধরে নিয়েই উন্নয়ন-অর্থনীতির বিজয় নিশান পতপত করে উড়তে শুরু করল। সাধারণ জনগণ তার পকেট ও পাতের প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে তার শামিল না পেয়ে ‘আমার বলার কিছু ছিল না—শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম’ গানের মধ্যে হারিয়ে গেল। ঋণ করে ঘি খাওয়ার মতো অর্থনীতির শরীরে উন্নয়নের চর্বি ও সুগার বেড়ে, বৈষম্যের ডায়াবেটিস বেড়েই চলছে। সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় মেটাবলিক ডিজঅর্ডার শুরু হওয়ার আশঙ্কায় অশনিসংকেত বাড়তেই আছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার মুখ মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে সুবিবেচনার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানাতেই হয়। 

সবাই না অনেকেই জানে আমি গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট বা জিডিপি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সাধারণত এক বছর) একটি দেশের মধ্যে উৎপাদিত এবং বাজারে বিক্রি হওয়া সব পণ্য ও পরিষেবার মোট আর্থিক মূল্যের পরিচয় বা প্রতিনিধিত্ব করি। আমি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরিমাপ হলেও কোনো দেশের আর্থিক বৈষম্যের পরিমাপ জানাতে পারি না; ঐ যে বললাম না আমি অর্থনীতির আকারের একটা হিসাব মাত্র।

এটাও বলা দরকার, আমি কোনো দেশের সামগ্রিক বিষয় জানার জন্য কোনো ইনডেক্স বা সূচক নই। আমি পরিবেশের ডাটাও না, এমনকি সাইকোলজিক্যাল কোনো ডাটাও না যে আপনাদের সুখের পরিমাপ করা যাবে। অথচ অনেকেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আমার তুলনা করে থাকেন। নোবেল পুরস্কার পাওয়া বাঙালি অর্থনীতিবিদ ঠিকই বলেছেন আমি বাইবেল, কোরআন, রামায়ণ বা মহাভারতের মতো অতটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নই। চেতনার ধারণা বা অর্থনীতির আকার বা সূচক, যেভাবেই বলা হোক না কেন, ভবিষ্যতে হয়তো আমার কোনো প্রাসঙ্গিকতাই থাকবে না। হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকতে অন্ধ। 

সেই বিদ্বান বাবু মনে করেন আমাকে নিয়ে নাক সিঁটকানো মানুষ দুই প্রকার। এক প্রকার হলো চিপায় পড়ে, অন্য প্রকার হলো না বুঝে। তিনি জানান, ১৯৩৪ সালের আগে আমার মতো কেউ নাকি কিছু ছিল না। তবে গত শতাব্দীর প্রায় পুরোটা সময় একটি দেশের অর্থনৈতিক মূল্যায়নে আমার গুরুত্ব বেড়ে যায়। অর্থনীতির সূচক নিয়ে ঔপনিবেশিক আমলে সেভাবে গুরুত্ব দিয়েও বিবেচনা করা হয়নি। 

কঠিন করে নয়, সহজ করেই বলি—আমার হিসাব পরিমাপের সাধারণ সূত্র হলো: জিডিপি = ব্যক্তিগত খরচ + মোট ব্যক্তিগত বিনিয়োগ + সরকারি বিনিয়োগ + সরকারি ব্যয় + (রফতানি-আমদানি)। আমি শুনেছি আমার হিসাবটা মূলত তিনটি পদ্ধতিতে করা হয়। ১. এক্সপেন্ডিচার মেথড বা খরচ হিসাব করে। ২. আউটপুট বা প্রডাকশন মেথড ও ৩. ইনকাম বা আয় মেথড। সারা বিশ্বে এক্সপেন্ডিচার বা খরচের হিসাব করে জিডিপি বের করার পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করা হয়। এতে একটা সূত্র আছে: GDP = C + G + I + nex। এখানে ‘সি’ মানে হলো ‘কনসাম্পশন’। মানে একটি দেশে যত মানুষ আছে সবাই ভোগের জন্য যে খরচ করে সেটা। আপনি চাল-ডাল কেনা, ডাক্তার দেখানো, ছেলেমেয়ের শিক্ষার পেছনে ব্যয় থেকে শুরু করে, সারা বছর যত ধরনের খরচ করেছেন সেটা। ‘জি’ মানে হলো ‘গভার্নমেন্ট এক্সপেনডিচার’। ব্যক্তির হিসাব বাদ দিয়ে সরকার যে খরচ করে, যেমন অবকাঠামো নির্মাণ, বেতন দেয়া, পেনশন দেয়া, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনাসহ যত খরচ করে সব। ‘আই’ মানে হলো ‘ইনভেস্টমেন্ট’। সারা দেশে ব্যক্তিগত ভোগ বাদে বিভিন্ন খাতে যত সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ হয় তার সমষ্টি। আর সর্বশেষ এনইএক্স হলো ‘নিট রফতানি’। যদি রফতানি, আমদানির চেয়ে বেশি হয়; তবে জিডিপিতে বেশি অংশ যোগ হয়; এর বিপরীত হলে বিয়োগ হয়। অর্থাৎ আমার মাধ্যমে একটি দেশে ঘটে যাওয়া আর্থিক লেনদেনের সাইজ জানা যায়। আর এর মাধ্যমেই বোঝা যায় কোন দেশের অর্থনীতি কতটা বড়। অনেকে মনে করেন, আমাকে দিয়ে সবকিছু করে ফেলবেন। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি, মনে রাখা দরকার, জিডিপি-এর হিসাবের ওপর অতটা প্রত্যাশা না করাই ভালো।

এখন আসা যাক আমার প্রবৃদ্ধি কী? পণ্ডিতরা বলেন জিডিপি প্রবৃদ্ধি বলতে নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশের অর্থনীতিতে পণ্য ও সেবার উৎপাদন বৃদ্ধিকে বোঝায়। সাধারণত কোনো দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির শতকরা হারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ মহান দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আসে প্রধানত পাঁচটি খাত থেকে। সেগুলো হলো- উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, পরিবহন, নির্মাণ ও কৃষি। ইদানীং জিপিডিতে সংযুক্ত নতুন খাতগুলো হলো—মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, গরু ও হাঁস-মুরগি, নার্সারি, লটকন, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, মাশরুম, আবাসন, কেবল টেলিভিশন, ইন্টারনেট, হেলিকপ্টার। বোঝেন ঠ্যালা, আমি ছিলাম কৃষ বা বোকা এখন হলাম মোটা বা বুদ্ধিমান। 

এটা ঠিক, আমার মাধ্যমেই একটি দেশের অর্থনীতির আকার এবং শক্তি প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এটাই অর্থনৈতিক সামর্থ্য বা শক্তি নির্ধারণের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমানে আপনাদের দেশে যে পদ্ধতিতে আমাকে নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা অসংগতিপূর্ণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অযৌক্তিকও বটে। কারণ এভাবে হিসাবকৃত জিডিপির মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। আমি আগেও বলেছি, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের সরকারই তার অর্থনৈতিক সাফল্য প্রদর্শনের জন্য আমার আকারকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে থাকে। কিন্তু আমার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার সত্যিকার প্রতিফলন ঘটে না। এজন্য সংশ্লিষ্টরা অনেকেই মনে করেন, আমি মুখ্য (অপাঙ্‌ক্তেয় অর্থে, ‘প্রধান’ মনে করবেন না) সুখ্য সূচক মাত্র, আমার নিজের থেকে বেশি কিছু বলা সাজে না, তাই আমি পণ্ডিতদেরকে কোট করছি, ‘সাধারণ মানুষের জীবনমান সত্যিকারভাবে প্রতিফলিত করার জন্য জিডিপি নির্ধারণের বর্তমান পদ্ধতির সংস্কার-আধুনিকায়ন, প্রয়োজনে পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি দিয়ে একটি দেশের উন্নয়ন পরিমাপ করার অর্থনৈতিক যুক্তি ভীষণভাবে দুর্বল হয়েছে বহু আগেই। অথচ সাম্প্রতিককালে এ উপমহাদেশে এখনো জিডিপি নিয়ে রাজনীতি করতে দেখা যায়! কোটেশন শেষ। সরি, আমাকে ভুল বুঝবেন না।

শুনেছি, জেনেছি যে ‘জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং সেটির ভিত্তিতে হিসাব করা মাথাপিছু আয়, উন্নয়নের নির্দেশক হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে কয়েক দশক থেকেই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক কাজ হয়েছে ২০০৮ সালে। সেই সময়ের বিশ্বমন্দার মধ্যেই ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি দুজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ ও অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিখ্যাত ফরাসি অর্থনীতিবিদ জ্যঁ পল ফিটুসিকে দায়িত্ব দেন, জিডিপিভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিমাপের সমস্যা এবং এর বিকল্প নিয়ে প্রস্তাব দিতে। ২০১০ সালে বের হয় এ তিন লেখকের গবেষণার ফল ‘মিসমেজারিং আওয়ার লাইভস: হোয়াই জিডিপি ডাজনট অ্যাডআপ’ শিরোনামের বইয়ে। বইটির শিরোনামই আমাদের বলে দেয় জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে করা অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিমাপ করার সনাতন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষের সত্যিকারে ভালো থাকার পরিমাপ নয়। তাই বিকল্প পরিমাপ পদ্ধতি জরুরি। এর ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখানোর প্রবণতা বিশ্বে এখন প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে।’ কিন্তু আপনাদের মতো দেশগুলোয় এখনো ‘সেকেলে’ চর্চাটাই চলছে। ‘ক্ষমতাসীনদের কাছে এটিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! উদ্বেগের বিষয়, নানা ধরনের পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণে একটি দেশের অর্থনীতির সব অর্জন জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে না। আমি কোট করতে সংকোচ বোধ করছি যে ‘বাংলাদেশের জিডিপির আকার ও প্রবৃদ্ধির যে হার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে, প্রকৃত জিডিপির আকার ও প্রবৃদ্ধির হার তার ধারেকাছে নেই।’

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন