সময়ের ভাবনা

বিশ্বব্যাংক, নগরের সৌন্দর্য এবং কাটা গাছের লাশ

পাভেল পার্থ

‘সৌন্দর্যবর্ধনের’ নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘আনিকা এন্টারপ্রাইজ’ কয়েকশ দেশীয় গাছ কেটেছে ঢাকার ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে। ৩১ জানুয়ারি থেকে সাত মসজিদ সড়ক বিভাজকে গাছ কাটা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও গাছ কাটা নিয়ে সিটি করপোরেশন প্রায় চার মাস পাবলিক পরিসরে কোনো কথা বলেনি। গাছ রক্ষা আন্দোলনের কারণে প্রমাণ হয়েছে যে এভাবে সড়কের পাবলিক গাছ কাটার কোনো অনুমোদন ছিল না। গাছ কাটায় নিয়োজিতরা ঢাদসিকের সঙ্গে তাদের একটি কার্যনির্দেশপত্র (স্মারক নং- ৪৬.২০৭.০১৪.০৯.০০.২২২.২০২২, তারিখ-২৮/৯/২০২২) সরবরাহ করেছেন। নির্দেশপত্রে ‘UCCL-Business Objects-Anika Enterprise (JV)’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০/৯/২০২২ থেকে ৩০/৬/২০২৩ মেয়াদকালের একটি কাজের বিষয় উল্লেখ আছে। কার্যনির্দেশপত্র অনুযায়ী কাজটির নাম, ‘‌পূর্ত-৫০: Development of different infrastructure including beautification of Island, Footpath, Road Median and Construction of public urinal under Dhaka South City Coprporation’। কাজটির চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৬২ লাখ ৩২ হাজার ৮১২ টাকা। কার্যনির্দেশপত্রে কোথাও গাছ কাটার কথা উল্লেখ নেই। তার পরও সব মিলিয়ে এ সড়কের প্রায় কয়েকশ নানা বয়সী নানা প্রজাতির ছোট-বড় সুস্থ, সবল, পরিণত ও সতেজ গাছ কাটা হয়েছে। 

সিটি করপোরেশন নগরের ‘সৌন্দর্যবর্ধন’ করতে চেয়েছে এবং কার্যনির্দেশপত্রে গাছ কাটার বিষয়টি উল্লেখ না থাকার পরও সড়ক বিভাজক খননের কারণে গাছ কাটা হয়েছে। তাহলে গাছ কাটার এ সিদ্ধান্ত কি কোনো অনুমোদন ছাড়া একতরফাভাবে এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়েছে? এর কোনো উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। গাছ কেটে তপ্ত এ নগরের তথাকথিত ‘সৌন্দর্যবধনের’ পরিবেশঘাতী পরিকল্পনা কারা করেছেন তা এখনো অজানা। এমনকি রাষ্ট্রীয় একটি উন্নয়ন প্রকল্পের নাম কেন কেবল ইংরেজিতে ব্যবহার হচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়। সাত মসজিদ সড়কে গাছ কেটে সৌন্দর্যবর্ধনের এ পরিবেশঘাতী প্রকল্পটি কি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নাকি এখানে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে? নগরবাসী হিসেবে এসব জানার অধিকার আমাদের আছে। দেশীয় গাছ কেটে সড়ক বিভাজকের গভীরতা বালি-কংক্রিটে ঢেকে কয়েকটি ফুলের চারা ও ডাল পুঁতে দিয়ে কীভাবে নগরের পরিবেশ সুরক্ষা সম্ভব? ‘একটি গাছের জায়গায় তিনটি গাছ লাগানোর’ কথা বলে বরং তারা বৃক্ষ ও বাস্তুতন্ত্র বিষয়ে তাদের অস্পষ্ট অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে। কাটা হয়েছে ২০ বছরের বটগাছ, এর বদলে কি তিনটি বাগানবিলাসের ডাল পুঁতলে হবে? এমনকি একটি প্রজাতির শূন্যতা কি কোনোভাবেই অন্য আরেক প্রজাতি দিয়ে হয়? 

গাছ রক্ষা আন্দোলনের মাঝেই জানা গেল, ঢাদসিক বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহযাগিতায় নগর উন্নয়নের এক বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ‘ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টের (ডিসিএনইউপি)’ শীর্ষক প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। ওই প্রকল্পের ক্রয়সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রতিবেদন (প্রকিউরমেন্ট পলিসি) থেকে জানা যায়, প্রকল্পটিতে মূলত বহু কমিউনিটি সেন্টার তৈরি হবে। পাশাপাশি বাসাবো খেলার মাঠ, শাহজানপুর ঝিল, ধোলাইখাল সবুজবলয়, বুড়িগঙ্গার তীর সুরক্ষার কিছু কর্মসূচিও রাখা হয়েছে। লালকুঠিসহ পুরান ঢাকার কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণেও এ প্রকল্পে কাজ করা হবে। বণিক বার্তা এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় ছেপেছে। বণিক বার্তা জানায়, প্রকল্পটির অধীনে বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণ করতেও নাকি কাটতে হবে বহু গাছ। ঢাদসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আরেকটি বড় প্রকল্পের তথ্য ঢাদসিকের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। ‘নিউ ক্লিন ঢাকা মাস্টার প্ল্যান ২০১৮-২০৩২’ যা বাস্তবায়ন হচ্ছে জাপানের আর্থিক সহযোগিতায়। এছাড়া ঢাদসিক ৮৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল উন্নয়নের কাজ করছে। এ খাল সংস্কার করতে গিয়েও কাটতে হবে আশপাশের বহু গাছ। যদিও সাত মসজিদ সড়কের গাছ কাটা প্রকল্পটি ‘ডিসিএনইউপি’-এর অংশ নয়। কারণ সাত মসজিদ সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি বিষয়ে ঢাদসিকের ওয়েবসাইটে কোনো বিবরণ বা নথি এখনো দেখা যায়নি। 

কোনো বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ভেতর দিয়ে প্রকল্পটির ফলে কোনো এলাকার পরিবেশগত, প্রতিবেশগত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা যাচাই করা জরুরি। এতে বহুমাত্রিক প্রভাবের ধরনগুলো যাচাই করা না হলেও পরিবেশগত সমীক্ষা ও যাচাই যেকোনো প্রকল্পের পূর্বে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী পরিবেশগত সমীক্ষা যাচাই প্রতিবেদন এবং পরিবেশগত অনুমোদন যেকোনো বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে থাকতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে পরিবেশগত যাচাইয়ের মান অনুসারে ‘‌এ’, ‘‌বি’, ‘‌সি’ এবং ‘‌ই’ এমন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। ‘এ’ শ্রেণীভুক্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিবেশগত অনুমোদন প্রয়োজন, তবে এসব প্রকল্প কোনো পরিবেশগত পরীক্ষার ভেতর দিয়ে মূল্যায়িত হবে না। তবে ‘বি’ শ্রেণীভুক্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে দুটি ভাগে বিন্যস্ত করা একটি হলো ‘বি-১’ এবং অন্যটি ‘বি-২’। ‘বি-১’ প্রকল্পগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশগত সমীক্ষা করতে হবে। তবে ‘বি-২’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিবেশগত সমীক্ষার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে ডিসিএনইউপি প্রকল্পটিকে পরিবেশগতভাবে ‘বি’ শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও আমাদের জানা নেই এ গৃহীত প্রকল্পটি ‘বি-১’ নাকি ‘বি-২’ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত? এ প্রকল্পের কোনো পরিবেশগত সমীক্ষা ও প্রতিবেদন আছে কিনা সেটিও নগরবাসী হিসেবে আমাদের জানা নেই। 

‘ডিসিএনইউপি’ প্রকল্পের ‘রিসেটেলমেন্ট নীতি কাঠামো (২৮ মে ২০১৮)’ থেকে জানা যায়, ওই প্রকল্পের কারণে কোনো গাছ কাটা হলে সেই গাছ যদি কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন হিসেবে প্রমাণ হয় তবে চলতি বাজারমূল্যে এর ক্ষতিপূরণ পাবেন মালিক। ফলধারী গাছের ক্ষেত্রে এক মৌসুমের ফলের দাম এবং কাঠের ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ কাঠমূল্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিশোধ করা হবে। কাজটি করবেন ‘সম্পদ যাচাই ও মূল্যনির্ধারণ কমিটি (পিএভিসি)’ এবং ঢাদসিক। সড়ক বিভাজক বিষয়ে আলাদা নীতিমালা না থাকলেও সিটি করপোরেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘সড়ক খনন নীতিমালা’ আছে। সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস গ্যাস, তিনটি মন্ত্রণালয় এবং সাতটি সংস্থার মতামত, সুপারিশ ও পর্যালোচনা শেষে ২০১৯ সালে এ নীতি চূড়ান্ত হয়। এ নীতির মাধ্যমেই সিটি করপোরেশন নগরের কোনো সড়কের খনন বিষয়ে চুক্তি, প্রকল্প ও কর্মসূচি পালন করে। সড়ক খননকাজে কোনো কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণের বিধান আছে নীতিমালাটিতে। ওই নীতির ১.৭.২ ধারায় বলা হয়েছে, খননকালে যদি ফুটপাত, সারফেস ড্রেন, রোড ডিভাইডার, গাছ এবং অপরাপর সংস্থার সুবিধাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বরাবর ক্ষতিপূরণের বিল পরিশোধ করতে হবে। যৌথ পরিমাপের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের বিল নির্ধারণ হবে। উন্নয়নের নামে যখন তখন গাছ কাটা হলে এর যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা কেবল কিছু টাকার বিনিময়ে কোনো ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। কারণ একটি গাছ বড় হতে সময় লাগে। একটি গাছ কাটা হলে পাখি, পতঙ্গ ও মানুষের স্মৃতি হারিয়ে যায়।

কোনো ধরনের অনুমোদন কিংবা কার্যনির্দেশপত্রে গাছ কাটার বিষয়টি উল্লেখ না থাকা এবং সরব নাগরিক আন্দোলনের পরও ঢাদসিক গাছ রক্ষা করেনি। সেখানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ডিসিএনইউপি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েও কি আবার গাছ কাটা হবে? এটি কি বিশ্বব্যাংকের পরিবেশগত নীতির সঙ্গে যায়? নাকি বিশ্বব্যাংক তার স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট খবরদারির অংশ হিসেবে নগর উন্নয়ন প্রকল্পের অছিলায় ঢাকার উন্মুক্ত বলয়ে তার কর্তৃত্ব এবং নয়া উদারবাদী বাণিজ্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়? 

বিশ্বব্যাপী প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রতিবেশ প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাংকসহ বহপক্ষীয় ব্যাংকের অবস্থান খুবই বিতর্কিত এবং কর্তৃত্বপরায়ণ। কাগজ ও মণ্ড কারখানা, করপোরেট গার্মেন্ট বাণিজ্য, লবণঘের, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বৃহৎ বাঁধ, বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের, ইটের ভাটা, করপোরেট কোম্পানির গ্যাস ও কয়লাখনন, বৃহৎ স্থাপনা, ঘাঁটি, ইকোপার্ক ও অবকাশ কেন্দ্র, আগ্রাসী গাছের বাণিজ্যিক বাগানের কারণে বিশ্বব্যাপী অরণ্য, জলাভূমি ও প্রাণ-প্রজাতির অস্তিত্ব ও সুরক্ষা আজ এসব কারণেই কিন্তু হুমকির মুখে। এসব প্রকল্প কারা বৈধতা দেয় কিংবা অর্থায়ন করে? অক্সিডেন্টাল যখন আমাদের লাউয়াছড়া বন পুড়িয়ে দিয়েছিল কিংবা নাইকো টেংরাটিলা বিস্ফোরিত করেছিল তখন বিশ্বব্যাংক কিংবা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ক্ষতিপূরণ আদায়ে বাংলাদেশের পক্ষে একটি কথাও বলেনি। দেশের অঙ্গার হওয়া প্রাণ-প্রজাতির পাশে একটিবারের জন্য দাঁড়ায়নি। অথচ কক্সবাজারের চকরিয়ার প্রাচীন প্যারাবন ধ্বংস করে বাণিজ্যিক চিংড়িঘেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এসব বহুপক্ষীয় ব্যাংক। মধুপুর শালবন কেটে রাবার কিংবা একাশিয়া আগ্রাসী বাগান গড়ে তোলা হয়েছে এডিবির অর্থায়নে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে শুরু হয়েছিল ‘স্ট্রেংদেনিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন প্রজেক্ট (এসআরসিডব্লিউপি)। ২০১১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ২০১১-১২ থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্প ২০১৫-১৬ সালে শেষ হয়। মোট ২৭৬ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার বাজেট বরাদ্দ হয় (সূত্র: বাংলাদেশ বন বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ওই প্রকল্পের পরিচিতি নির্দেশিকা)। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও জ্ঞান বাড়িয়ে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য রোধ এবং বিপন্ন বন্যপ্রাণীর বসতি রক্ষায় সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা তৈরি ছিল প্রকল্পটির লক্ষ্য। ভাওয়াল, মধুপুর, লাউয়াছড়া, সাতছড়ি, রামসাগর, হিমছড়ি, কাপ্তাই, মেধা-কচ্ছপিয়া, নিঝুম দ্বীপ, খাদিমনগর, বারইয়াঢালা, হাতিবান্ধা, জাফলং ও আলতাদীঘি এ ১৪টি জাতীয় উদ্যানসহ মোট ৩৫টি অঞ্চলে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পটির কার্যক্রম চলেছিল। কিন্তু এর ফলাফল কী? বাংলাদেশে কি বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য রোধ হয়েছে? বন্যপ্রাণীর ব্যবসা কি বাংলাদেশের কোনো হাটবাজারে হয়? আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণীর বাজার ও অবৈধ মুনাফার ক্ষমতাকে প্রশ্ন না করে এভাবে গৃহীত এসব প্রকল্প বরং বনের সঙ্গে স্থানীয় বননির্ভর মানুষের বহুমুখী বিবাদ ও সংঘর্ষ উসকে দিয়েছে। ওই প্রকল্পের কারণে নওগাঁর আলতাদীঘি শালবনে অজগর সাপ ছেড়ে সেখানকার আদিবাসীদের সঙ্গে এক নতুন কৃত্রিম দ্বন্দ্ব তৈরি করা হয়েছিল। কিংবা বিশ্বব্যাংকের চলমান ‘সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড প্রজেক্টের (সুফল)’ পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক অবদান কতখানি? এসব প্রশ্ন আমাদের করা জরুরি। 

আমাদের বৃক্ষ, আমাদের সবুজবলয়, আমাদের নগর আমাদের জাতীয় সুরক্ষার অংশ। এসব সুরক্ষা ও উন্নয়নে আমরাই যথেষ্ট। আর সেই প্রমাণ বাংলাদেশ দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের পদ্মা ঋণচুক্তি প্রত্যাহারের পরও বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে সে প্রমাণ রেখেছে। তাহলে আজ ঢাকা শহরের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের ঋণ গ্রহণ করে আমাদের গাছ কেটে নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পরিবেশঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন? আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী, উদ্ভিদবিদ, উদ্যানবিদ, সংস্কৃতিকর্মী আছেন। আমরা নগরবাসী হিসেবে আমাদের ঢাকাকে আমাদের প্রাণ-প্রজাতি ও সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে আমাদের পরিকল্পনা ও অংশগ্রহণে সাজাব। ‘ডিসিএনইউপি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি আবারো সাত মসজিদ সড়কের মতো গাছ কাটা শুরু হয় তবে এর ভবিষ্যৎ প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কি ঢাদসিক কোনো ধারণা করতে পারে? সাত মসজিদ সড়কসহ ‘ডিসিএনইউপি’ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও আর কোনো গাছ কাটা চলবে না। বরং গাছ ও সবুজ উন্মুক্ত বলয় রক্ষা করে কীভাবে এ সুস্থ ও পরিবেশসম্মত নগরের বিকাশ সম্ভব সে বিষয়ে ঢাদসিককে আরো বেশি মনোযোগী ও জনবান্ধব হতে হবে। 

পাভেল পার্থ: গবেষক ও লেখক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন