ইইউর চাকরিপ্রার্থীদের কাছে আকর্ষণ হারিয়েছে যুক্তরাজ্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

বাণিজ্য কেন্দ্র দ্য সিটি অব লন্ডনে দ্য ঘেরকিন অট্টালিকা ও তার আশপাশ ছবি: দ্য টেলিগ্রাফ

ব্রেক্সিট কাণ্ডের পর ব্রিটেনের গতিপথে ঘটছে নানা পরিবর্তন। একটা সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চাকরিপ্রার্থীরা মুখিয়ে থাকতেন যুক্তরাজ্যে জুতসই কোনো কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে। ব্রেক্সিটের জেরে যুক্তরাজ্য ঘিরে কর্মী আসার প্রবাহে ভাটা পড়েছে। বরং ব্রিটেনের তুলনায় ইইউর অন্যান্য দেশ যেমন পোল্যান্ড ও পর্তুগালে ভালো কর্মসংস্থান এবং বেতন কাঠামো রয়েছে। খবর ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।

সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (ওএনএস) তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে নেট অভিবাসনের সংখ্যা ৬ লাখ ৬ হাজারে পৌঁছার রেকর্ড হওয়া সত্ত্বেও একই বছর ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যে মাত্র দেড় লাখ কর্মীর আগমন ঘটে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় অর্ধেক।

ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ও কভিড-১৯ মহামারী ব্রিটেনের অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে চলমান অস্থিরতা যোগ করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রবণতাটি মূলত ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের হাজার হাজার মানুষের ব্রিটেনমুখিতার অবসান ঘটিয়েছে। যারা বছরের পর বছর যুক্তরাজ্যকে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাময় গন্তব্যে পরিণত করে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জনে মনোযোগী ছিল।

সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান রিফর্মের উপপরিচালক জন স্প্রিংফোর্ড বলেন, ‘পূর্ব ও দক্ষিণ ইউরোপ থেকে মানুষের আসার সংখ্যা ২০১০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে কমেছে। তাছাড়া ব্রেক্সিটের প্রভাব রয়েছে, যা স্বল্পদক্ষ অভিবাসীদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। তবে ইইউ কর্মী প্রবাহ হ্রাস যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বড় ধরনের কর্মী ঘাটতি তৈরি করছে ও মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলছে। গোটা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সরকারের জনপ্রিয়তাকেও খর্ব করছে।’

তাছাড়া এটি পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার মতো দেশগুলোর ইইউতে যোগদান ও ঐতিহাসিক ঋণ সংকটের জের ধরে ইংলিশ চ্যানেলজুড়ে পরিবর্তিত অর্থনৈতিক অবস্থার দিকেও ইঙ্গিত করে। ২০০০ ও ২০১০-এর দশকে ব্রিটেন ইউরোপীয়দের আবাসস্থল হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আতিথেয়তা, খুচরা ব্যবসা থেকে শুরু করে কারখানা ও খাদ্যোৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকদের কাজের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে সমর্থ হয়। 

তবে আগে যে দেশগুলো যুক্তরাজ্যে শ্রমিক সরবরাহ করত, বর্তমানে ইউরোজোনের এমন অনেক অঞ্চলে বেকারত্বের সংখ্যা দ্রুত কমছে। পূর্ব ইউরোপজুড়ে মজুরি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির উন্নতি ঘটেছে। ফলে ইইউ নাগরিকরা বিশেষ করে যারা আগে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকত, তারা অবস্থান করছেন নিজ দেশেই।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পোল্যান্ড। দেশটি ২০০৪ সালে ইইউতে যোগ দেয়। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী পোলিশ নাগরিকের সংখ্যা ভারতকে ছাড়িয়ে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছয়। তবে সে ধারাটি এখন উল্টে গেছে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের রিসার্চ ফেলো পাওয়েল বুকভস্কি বলেন, ‘শ্রমবাজার ও পোলিশ অর্থনীতি নাটকীয় পরিবর্তনের সম্মুখীন। এদিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিশেষ ভালো করছে না। যুক্তরাজ্যের তুলনায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় চাকরি এখন নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিতে। লোকেরা কাজের সুযোগ খুঁজছে, তবে তারা সম্ভবত যুক্তরাজ্যে আসবে না।’

২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের মোট প্রবাহের মাত্র ১৩ শতাংশ ছিল ইইউর, যা ২০১৮ সালে ছিল ৫২ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ ইউরোজোন থেকে যুক্তরাজ্যে আসা কর্মীর সংখ্যা কমছে দ্রুতহারে। তাছাড়া যে কর্মীরা মহামারীর শুরুতে ইউরোপের বিভিন্ন শ্রমবাজার ছেড়ে গিয়ে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য অংশে শ্রম সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, তারা জি৭ দেশগুলোতেও মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন