অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাব

পাঁচ দশকে পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। গতকাল ঢাকার ইস্কাটনে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। 

অর্থনীতি সমিতির দাবি, স্বাধীনতার পরের অর্থবছর থেকে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। 

অর্থনীতি সমিতির হিসাবে, ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পাচার হওয়া অর্থের ৫ শতাংশ উদ্ধার করা গেলেও সরকার ৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা পাবে। অধ্যাপক আবুল বারকাত মনে করেন, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ উদ্ধারের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উৎস হতে পারে কালো টাকা ও অর্থ পাচারের ওই খাত।

বিশাল এ বাজেটের ব্যয় মেটাতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় থেকে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা আসবে, যা মোট বাজেটের ৯৩ দশমিক ২ শতাংশ বলে জানান অধ্যাপক আবুল বারকাত। অবশিষ্ট ৭ দশমিক ৮ শতাংশ তথা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা হবে ঘাটতি বাজেট।

আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এটি সামনে রেখেই অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ শীর্ষক এ বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত অর্থ পাচারের বিষয়টি সামনে টেনে আননে।

১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫০ বছরে দেশে কালো টাকার পরিমাণ ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‌এর মাত্র ২ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হলে সরকার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা পাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ দেশে বৈষম্য বাড়ার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘‌দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পদ, আয় ও আবাসনে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এখন পুষ্টিতেও চলে গেছে।’ তিনি আগামী বাজেটের কাঠামো বৈষম্য দূর করার নীতির ভিত্তিতে করার পরামর্শ দেন।

বাজেটে কয়েকটি খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে জানিয়ে বারকাত বলেন, ‘‌মানুষ বহুমাত্রিক কারণে দরিদ্র হয়ে পড়ছে। কভিডের কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। মধ্যবিত্ত মানুষও নিম্নবিত্তের দিকে যাচ্ছে। ‌৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত করা, বৈষম্য সর্বনিম্ন শ্রেণীতে নামিয়ে আনা, ধনিক শ্রেণীর সম্পদ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বণ্টন, উন্নয়নে দেশজ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও আলোকিত করার সুযোগ সৃষ্টি এবং মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, লাগামহীন কর্মবাজার সংকোচন, মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অভিঘাতের বিষয় মাথায় রেখে বিকল্প বাজেট তৈরি করা হয়েছে।’

বিকল্প বাজেটের রাজস্ব আহরণের হিসাব তুলে ধরে আবুল বারকাত বলেন, ‘‌এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের মধ্যে আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর অর্থাৎ আয়কর থেকে আসবে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আমাদের গবেষণা বলছে, ৪ লাখ ১৮ হাজার মানুষের কোটি টাকার ওপরে কর দেয়ার কথা। আর সম্পদ কর নেয়া হয় না। এ খাতে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আসা সম্ভব।’

দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ‘বহুমাত্রিক দরিদ্র’ মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ বারকাত বলেন, ‘‌ধনী ও অতিধনীর সংখ্যা ১ শতাংশ। বহুমাত্রিক দরিদ্রের সংখ্যা কভিডকালের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে প্রকৃত মজুরি না বাড়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সঞ্চয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। সম্পদশালীদের ওপর কর কমানো হলে বৈষম্য কমে না। এছাড়া সমাজের ৯০ শতাংশ কম আয়ের মানুষের ওপর কর কমালে তাদের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ে।’

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিকল্প বাজেট উপস্থাপনকালে বিভিন্ন স্থান থেকে অনলাইনে অনেকে যুক্ত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন