পাবনায় নদীভাঙনে হুমকির মুখে বিদ্যুতের সাবস্টেশন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, পাবনা

পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার পুরানভারেঙ্গা এলাকায় যমুনা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ওই এলাকায় কল্যাণপুর খেয়াঘাটের পাশে অবস্থিত পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন। বর্তমানে স্থানীয়দের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজলার চর কল্যাণপুর থেকে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় এক মাস আগে থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় এ ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। নদীপােরর বাসিন্দারা তাদের উঠতি ফসল কেটে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। 

গত তিন বছর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি। এক মাস ধরে শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন। এ সাবস্টেশনটি ভাঙন থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে। সাবস্টেশন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সাইনবোর্ডও টানিয়ে দিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে একাধিকবার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) অবগত করা হলেও ভাঙন রোধে কোনো  ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিেযাগ তাদের।

কাশিনাথপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নগরবাড়ী নৌবন্দর এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ হাজার কেভি জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন রয়েছে। এ লাইনের কারণে চরাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের আলো পেয়েছে। ২০২১ সালে বেড়া ও মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পায়, কিন্তু এখন ভাঙনের ফলে সাবমেরিন কেবলের তার মাটির নিচ থেকে বের হয়ে এসেছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল আউয়াল ও আব্দুস সালাম বলেন, ‘‌সব মিলিয়ে আমরা প্রায় ১০ বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাদেরকে শেষ করে দিয়েছে এ নদী। সবশেষে এখানে বাড়ি করেছি, এটাও হয়তো আর ১০-১৫ দিন থাকবে। কোথায় গিয়ে ঘর তুলব? এ দুশ্চিন্তায় দিন কাটে। সরকারের কাছে আবেদন নদীতে যেন জিও ব্যাগ ফেলে আমাদের রক্ষা করেন।’

পুরানভারেঙ্গা এলাকার আরেক বাসিন্দা পলাশ হোসাইন বলেন, ‌‌‘আমাদের এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশনটি পানিতে তলিয়ে গেলে এসব মানুষের আবার অন্ধকারে দিন কাটাতে হবে।’

পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ ২-এর জেনারেল ম্যানেজার মজিবুল হক জানান, ‘৪০ কোটি টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন। সেটা বর্তমানে হুমকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে বারবার চিঠি দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক সভায়ও আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া পাবনা-১ ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্যরা ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছেন। কী কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না এটা আমরা জানি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে কল্যাণপুর খেয়াঘাট এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে না পারলে ওখানকার পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে ১৩ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়বেন।’

বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘‌এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরাও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজ কবির বলেন, ‘‌নদীভাঙন দেখা দেয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। হুমকির মধ্যে রয়েছে সেখানকার পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশনটি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন