অগ্রিম নেয়া উৎসে কর-পরবর্তী অর্থবছরে সমন্বয়ের সুযোগ থাকা জরুরি

শাহরিয়ার জাহান রাহাত

উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেএসআরএম

ইস্পাত খাতের ব্যবসা পরিচালনা ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে আয়কর আইনের কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা জরুরি। কারণ বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন প্রতিনিয়ত। ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই বাস্তবতার নিরিখে বিদ্যমান আয়কর আইনের কোথাও কোথাও সংশোধন বা পরিবর্তন করা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই বর্তমান ব্যবসাবান্ধব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা আন্তরিকতা, যা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখবে ইস্পাত খাত।

রড বিক্রয়ের ক্ষেত্রে শতাংশ উৎসে কর এবং স্ক্র্যাপ আমদানির ক্ষেত্রে টন প্রতি ৫০০ টাকা উৎসে কর কাটার বিধান আছে। কর্তিত করকে ন্যূনতম করের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিমাণ উৎস কর কাটা হয়, তা ওই অর্থবছরের প্রদেয় আয়করের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, যা আইনানুযায়ী পরিশোধিত অতিরিক্ত কর-পরবর্তী অর্থবছরে সমন্বয় করার সুযোগ নেই। এতে ব্যবসায়ীদের প্রদেয় আয়করের চেয়ে প্রতি অর্থবছর বেশি কর পরিশোধ হয়ে যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তাই স্ক্র্যাপ আমদানির ক্ষেত্রে টনপ্রতি উৎসে কর ২০০ টাকা করা, রড বিক্রয়ের ওপর উৎসে কর প্রত্যাহার করা, আমদানি পর্যায়ে উৎসে কর ন্যূনতম করের বিধান রহিতকরণ এবং সংশ্লিষ্ট বছরে পরিশোধিত অতিরিক্ত কর-পরবর্তী অর্থবছরে সমন্বয় করার সুযোগ থাকা জরুরি। খাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ওই আইনের সংশোধন অত্যন্ত প্রয়োজন।

বর্তমান আইনের ৮২ সি ধারা অনুযায়ী ইস্পাত শিল্পের ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রয়ের ওপর লাভ না ক্ষতি যেটা হোক দশমিক শতাংশ ন্যূনতম কর (টার্নওভার ট্যাক্স) পরিশোধের নিয়ম আছে, যা প্রদেয় আয়করের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। যদিও শুধু আয়ের ওপর আয়কর পরিশোধের বিধান আছে। তাই ইস্পাত শিল্পের বিক্রয়ের ওপর টার্নওভার ট্যাক্স দশমিক শতাংশ করা যেতে পারে।

এছাড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের জ্বালানি ক্রয় মূল্য বিদেশী বিক্রেতাদের পরিশোধের ক্ষেত্রে আয়কর আইনের ধারা ৫৬ অনুযায়ী দশমিক শতাংশ উৎস কর কাটার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ তেল সরবরাহের ওপর দশমিক শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিধান আছে। কারণে বিদেশী বিক্রেতারা আমাদের জাহাজে প্রচলিত মূল্য জ্বালানি বিক্রিতে আগ্রহী নয়। তারা দশমিক শতাংশ বর্ধিত মূল্যে জাহাজে জ্বালানি বিক্রি করে। পরিস্থিতিতে আমাদের বর্ধিত মূল্যে জ্বালানি কিনতে হয় বাধ্য হয়ে। এতে জাহাজ ব্যবসা পরিচালনায় অধিক ব্যয় বহন করতে হয়। এভাবে চলতে থাকায় ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজের যাবতীয় ক্রয়ের বিপরীত বিদেশী বিক্রেতাকে মূল্য পরিশোধের সময় ধারা ৫৬ অনুযায়ী উৎসে কর প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে আয়কর আইনের ধারা ৫৩ অনুযায়ী আমদানি করা স্ক্র্যাপ ভ্যাসেলের ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে টনপ্রতি ৫০০ টাকা উৎসে কর কর্তনের বিধান আছে এবং ওই কর্তিত কর নির্দিষ্ট বছরের জন্য ন্যূনতম করের আওতাভুক্ত করা হয়েছে, যা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় আয়করের চেয়ে বেশি হয়ে যায় এবং পরবর্তী অর্থবছরে সমন্বয় করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। তাই স্ক্র্যাপ ভেসেল আমদানির ক্ষেত্রে টনপ্রতি ২০০ টাকা উৎসে কর, ন্যূনতম করের বিধান প্রত্যাহার এবং চলতি অর্থবছরের পরিশোধিত অতিরিক্ত কর-পরবর্তী অর্থবছরে সমন্বয় করার বিধান রাখা হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। তৈরি হবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ। ব্যবসায়ীরাও অধিক বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন