
চীনের রাষ্ট্র মালিকানাধীন উদ্যোগগুলোকে (এসওই) হাই-টেক খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম থেকে বের হয়ে রোবোটিকস, ফার্মাসিউটিক্যালস, মাইনিং ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতগুলোয় মনোনিবেশ করতে বলা হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানকে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ফিচের তথ্যানুসারে, চলতি বছর এসওই প্রতিষ্ঠানের মূলধন ব্যয় (ক্যাপএক্স) বাড়বে। এ রকম হলে তা ক্রেডিট মেট্রিক্সকে প্রভাবিত করতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো যদি ঋণের মাধ্যমে অর্থায়িত হয়, তবে মুনাফা কয়েক গুণ বাড়বে।
ফিচের এশিয়া-প্যাসিফিক করপোরেটসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াং ইয়িং জানিয়েছেন, সরকারের এ আহ্বানে বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নিকট ভবিষ্যতে মূলধন ব্যয় কিছুটা বাড়িয়ে তুলবে। কেননা মূল খাতে বিনিয়োগগুলো নির্দিষ্ট হবে। নির্দিষ্ট রিটার্নের মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। যদি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক লক্ষ্যমাত্রা বেছে নিতে এবং সমন্বয় করতে সক্ষম হয়, ঝুঁকিগুলো কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে পারে, তবে ফলাফল সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য ইতিবাচক হবে। পাশাপাশি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যও সেটি সহায়ক।
ওয়াং ইয়িং বলেন, ‘চীনের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি সীমিত হতে পারে। বিশেষ করে যদি বিনিয়োগগুলো আংশিকভাবে শেয়ারের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়।’ যেহেতু বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই ওয়াং বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর রেটিং চীনের সার্বভৌম রেটিংয়ের সঙ্গে সমান করে বা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে এসব প্রতিষ্ঠানে শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় সহায়তার সম্ভাবনা প্রতিফলিত হয়।’
মুডিজ ইনভেস্টরস সার্ভিসের করপোরেট ফাইন্যান্স গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র অ্যানালিস্ট মাইক ঝু মনে করেন, ক্রমাগত একত্রীকরণ ও পুনর্গঠনের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর সংখ্যা ২০০৩-২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ১৯০ থেকে অর্ধেক কমেছে। তিনিও বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এসব প্রতিষ্ঠানের মূলধনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত মুডিজ অ্যান্ড সিসিএক্সআই চীনা ক্রেডিট আউটলুক কনফারেন্সের বক্তব্যে মাইক ঝু বলেন, ‘অনেক পিছিয়ে পড়া উৎপাদন কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ সময়ে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর বাজার হিস্যা বেড়েছে। সরকারি উদ্যোগগুলো যেহেতু সরকারের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রেটিংসও বাড়বে। বেইজিংয়ের নির্দিষ্ট হাই-টেক শিল্পের ওপর জোর দেয়ায় এলাকাগুলোয় চাহিদা বাড়াবে এবং খাতটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আয় ও নিট মুনাফা বাড়াবে।’
বিনিয়োগ ব্যাংক চায়না ইন্টারন্যাশনাল ক্যাপিটাল করপোরেশন বা সিআইসিসি বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মূল্যায়নে সংশোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা এসব সংস্থার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের তুলনায় তাদের উল্লেখযোগ্য ছাড় দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং, নির্মাণ এবং জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে।
প্রতিবেদন বলছে, চীনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ ২৪ হাজার ৪১৫ কোটি ডলার। যেখানে জেপি মরগানের মূলধন ৩৯ হাজার ৯৫৯ কোটি ডলার। একইভাবে চীনা রাষ্ট্রীয় কনস্ট্রাকশনের মূলধন ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার এবং ফরাসি নির্মাণ কোম্পানি ভিঞ্চি এডিআরের মূলধনের পরিমাণ ৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার। সিআইসিসি বলছে, প্রযুক্তি খাতের কিছু শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি রয়েছে যাদের মূলধন স্বল্প কিন্তু সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এসব রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিচালিত কোম্পানি ও শক্তিশালী নগদ প্রবাহের কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের লক্ষ্য করা উচিত।