স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি বড় অর্জন। কিন্তু কভিড অতিমারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের অস্থিরতার ফলে ভোজ্যতেল, গম, পশুখাদ্য, জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও জনকল্যাণমূলক খাতে রাষ্ট্রের যথাযথ অগ্রাধিকার ও অর্থায়নের অভাব এ সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। গত দুই-তিন বছরে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট, আয় হ্রাস, কর-ভ্যাট ও দায়-দেনার চাপ সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থার হিসাবে কভিডকালে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকট মোকাবেলায় খাদ্যতালিকা থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু বাদ দিয়েছে, সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে, ধারদেনা করে চলছ, শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণ জীবিকা ও আর্থিক সংকটে পতিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তাত্ক্ষণিক সহায়তার পাশাপাশি দরকার মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সুরক্ষা কৌশল।
১ জুন সরকার নতুন বছরের বাজেট ঘোষণা করবে। বহুমুখী সংকট মোকাবেলায় দারিদ্র্যসীমার মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠীসহ নতুন করে দারিদ্র্যঝুঁকিতে থাকা সম্ভাব্য জনগোষ্ঠীর জন্য অতিদ্রুত রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা না করলে বাংলাদেশের এরই মধ্যে যা অর্জন তা ম্লান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য ছোট-বড় শতাধিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মতো প্রকল্পনির্ভর সনাতন উদ্যোগের বদলে দরকার গভীর ও সম্প্রসারণমুখী, অধিকারভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত, ডিজিটাল স্মার্ট একটি ‘সর্বজনীন
সামাজিক সুরক্ষার’ ধারণা, আইনগত কাঠামো ও প্রক্রিয়া।
সামাজিক প্লাটফর্ম হিসেবে ডেমোক্রেটিক বাজেট মুভমেন্ট (ডিবিএম) দীর্ঘদিন ধরে একটি সর্বজনীন সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের আলোচনা ও প্রস্তাব করে আসছে। আশার কথা, সরকারের জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলসহ অন্যান্য কৌশলপত্রে এরই মধ্যে এর নীতিগত প্রতিফলন ঘটেছে। এখন প্রয়োজন একটি সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের। আসন্ন জাতীয় বাজেট ঘোষণায় সরকার এ রকম একটি বাস্তবতানির্ভর কাঠামোর প্রস্তাব ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সূত্রপাত হবে বলে আমরা আশা করছি।
একই সঙ্গে জেলা বাজেটসহ বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ, জনঅংশগ্রহণ ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে পরিবেশবান্ধব সবুজ উন্নয়নের জন্য ডিবিএমের যে প্রস্তাব, তা বাস্তবায়ন হলে জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের সুফল সাধারণ মানুষ
পাবে নিঃসন্দেহে।