মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, গবেষক, ডিবিএম
মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। সানেমের মার্চ ২০২৩-এর জরিপের ফলাফল অনুযায়ী নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার খরচ বেড়েছে ১৩ শতাংশ, খাদ্যে এ খরচ বেড়েছে ১৭ শতাংশ। সে অনুযায়ী আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এ চাপ অনেক বেশি। কারণ তারা আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ খরচ করে খাদ্য ক্রয়ে। উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে একবেলা না খেয়ে খাকছে ৩৭ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার।
মূল্যস্ফীতির প্রথম শিকার গরিবের পুষ্টি। বর্তমানে চার সদস্যের একটা পরিবারের সুষম খাদ্য সরবরাহে প্রতি মাসে প্রয়োজন হয় প্রায় ১৯ হাজার টাকা। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত নিয়মিত-অনিয়মিত দিনমজুরসহ স্বনিয়জিত নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এ পুষ্টি জোগানো প্রায় অসম্ভব।
অর্থনিতীবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, দুর্ভিক্ষে যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়েও বেশি মানুষ মারা যায় অপুষ্টিতে। বিবিএস ও ইউনিসেফ পরিচালিত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯-এর ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশে মাঝারি ও মারাত্মক পর্যায়ের কম ওজনের শিশু ২২ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১৩ সালে যা ছিল ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে মারাত্মক খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ২৮ শতাংশ, ২০১৩-এ যা ছিল ৪২ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা এবং এর ফলে সৃষ্ট পুষ্টিহীনতা মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা খাতে এ-যাবত্কালের আমাদের অর্জনকে পেছনের দিকে চালিত করছে।
দেশে শিশুদের তীব্রতম অপুষ্টির প্রকোপ বাড়ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাও। সরকারি হিসাব অনযায়ী, ২০২১ সালে দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিত্সা নিতে আসা তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা (সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন বা এসএমএ) শিশুর সংখ্যা বেড়েছে আগের তুলনায় ৭২ শতাংশেরও বেশি। ২০২১ সালে এসএএমএ ভোগা শিশু ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ৩১৩ জন, ২০২০-এ যে সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৭০। এ হার চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি (২ হাজার ৬১৩) এবং রংপুর বিভাগে সবচেয়ে কম (৭১১)। মূল্যস্ফীতির সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিঃসন্দেহে এ অবস্থাকে আরো খারাপের দিকে চালিত করবে।
সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি
উচ্চমূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাবে সৃষ্ট পুষ্টিহীনতা থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন খাদ্য অধিকার নিশ্চত করা। এটাই এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এজন্য প্রয়োজন বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে ঢেলে সাজানো। শুধু সংখ্যার বিচারে বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি অধিকারভিত্তিক সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও করহার কমানো
নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে উচ্চমূল্যস্ফীতির আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন নিত্যব্যবহার্য ভোগ্যপণ্য—চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, সাবান, ওষুধ প্রভৃতির ওপর সব পর্যায়ে শুল্ককর ও মূসক প্রত্যাহার বা সহনীয় রাখা, যাতে জনদুর্ভোগ বন্ধ হয় এবং না বাড়ে। সামর্থ্যবান ধনীদের কাছ থেকে কর আদায়, করজাল সম্প্রসারণ এবং কর ফাঁকি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, গবেষক, ডিবিএম