হাসান মেহেদী : সদস্য
সচিব, বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)
পৃথিবীর প্রথম ১০টি জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অন্যদিকে বৈশ্বিক পরিবেশ সূচকের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। আবার পৃথিবীর সব থেকে পাঁচটি দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। সুতরাং টেকসই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন ও উৎপাদন খাতে সবুজ রূপান্তরের বিকল্প নেই। বিগত এক যুগে বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে এ উন্নয়ন হওয়ায় তা বয়ে এনেছে চারটি ঝুঁকি: (১)
আমদানিনির্ভরতা, (২)
অলস অবকাঠামো বিশেষত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ, (৩)
পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি এবং (৪) তথ্য ও জীবন-জীবিকার অধিকার লঙ্ঘন।
এর সবই জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমদানিনির্ভর জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অতিনির্ভরতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়ে যাচ্ছে; বিদেশনির্ভরতায় জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং অতিদূষণের কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে যা জনসাধারণের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নত, পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ুসহিষ্ণু দেশ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে সরকার মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুসারে ২০৩০, ২০৪১ ও ২০৫০ সালের মধ্যে যথাক্রমে ৩০ শতাংশ, ৪০ শতাংশ ও শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়। এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু জাতীয় বাজেটে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ, সবুজ জ্বালানিতে অতিরিক্ত করহার, অর্থায়ন কৌশলের ঘাটতি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। নবায়নযোগ্য জ্বালানিসংশ্লিষ্ট উপকরণের বর্তমানে ধার্যকৃত ২৬-৫৮ শতাংশ কর শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা জরুরি। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ির কর বাতিল করে সৌরভিত্তিক চার্জিং স্টেশন স্থাপনে নগদ ভর্তুকি দেয়ার পাশাপাশি সৌরশক্তিচালিত সেচ পাম্পের জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
যথাযথ অর্থায়ন, আর্থিক নীতি সংশোধন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও প্রণোদনার মাধ্যমে দ্রুতই বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপথ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সবুজ রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আখেরে তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সংহতি রক্ষায় সহায়ক হবে।
হাসান মেহেদী : সদস্য
সচিব, বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)