যুগোপযোগী পরিকল্পনার প্রতিফলন থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা

প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা, দূরদর্শী বিচক্ষণ পরিকল্পনা এবং আন্তরিক প্রয়াস আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সুদৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পদার্পণ করেছে। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সেই সঙ্গে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হওয়ার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। কিন্তু করোনা-পরবর্তী বিরূপ পরিবেশ এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। এজন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরো উন্নত সক্ষম করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের বাজেটকে ঘিরে জনগণের ব্যাপক প্রত্যাশা থাকবে। সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি জনমুখী ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণীত হবে বলে আমরা আশা করি।

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে এনে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প সেবা এবং সিএমএসএমইকে শুল্ক করের যৌক্তিক প্রতিরক্ষণ, ক্ষেত্রবিশেষে অব্যাহতি বা বন্ড সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে রফতানি বৈচিত্র্যকরণসহ দেশজ উৎপাদন অব্যাহত রাখা; রফতানি বাজার সম্প্রসারণ বহুমুখীকরণ, নিত্য ব্যবহার্য পণ্যমূল্য সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা, করনীতি, কর পদ্ধতি ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কর নেট বা কর জাল সম্প্রসারণ, স্বেচ্ছায় কর প্রতিপালন হার বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় তথা কর জিডিপির অনুপাত বাড়ানো, আয় কর্মসংস্থান বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কারিগরি কর্মমুখী শিক্ষা এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর বিশেষ নজর দেয়ার প্রস্তাব করছি।

চলমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে দেশের বিনিয়োগ উৎপাদনশীল খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে একটি শিল্প বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।

আগামী বাজেটকে সামনে রেখে রাজস্ববিষয়ক এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব প্রণয়নে যেসব প্রেক্ষাপট (২০২৩-২৬) উদ্দেশ্যাবলি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে কাস্টমস, মূসক আয়করসংক্রান্ত যেসব বিধিবিধান পদ্ধতি ডব্লিউটিও/ ডব্লিউসিও এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ থাকবে না, সেগুলো চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদ্ধতিগত সংস্কারের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়ন, রাজস্ব প্রশাসনে ব্যবসাবান্ধব করদাতা সহায়ক প্রয়োজনীয় সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদারকরণ এবং আমদানি শুল্ক, আয়কর মূল্য সংযোজন কর বিষয়ে বিদ্যমান বিধিবিধানের ব্যবসা শুল্ককর বান্ধব সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন।

উপরোক্ত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আগামী বাজেটের জন্য এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ মৌলিক প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করছি:

শুল্কায়ন, পণ্য খালাস সব ধরনের শুল্ক কর পরিশোধ ত্বরান্বিত করার জন্য অনলাইন প্রক্রিয়াসহ ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোসংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

উৎপাদন, আমদানি রফতানি পর্যায়ে আরোপিত সব শুল্ক কর এবং খালাস প্রক্রিয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব কাস্টমস সংস্থা আন্তর্জাতিক উত্তম ব্যবস্থাবলির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করা।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যকর জোরদার করে ফাঁকি দেয়া কর আদায়ের জন্য প্রণোদনা হিসেবে নিয়মিত স্কেলের বেতন-ভাতাদির অতিরিক্ত হিসেবে কর কর্মকর্তাকে পুরস্কার দেয়ার বিধান বাতিল করা। এতে কর আদায়ে হয়রানি বন্ধ হবে বলে আমরা মনে করি।

রাজস্ব আহরণ রাজস্ব পলিসি কার্যক্রম পৃথক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন করা। ( বিষয়ে বিস্তারিত এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে

রফতানি বাণিজ্যে ব্যয় সময় কমানোর জন্য রফতানি পণ্যে ব্যবহূত আমদানীকৃত দেশীয় উপকরণের ওপর পরিশোধিত সব শুল্ক কর পূর্ব স্থিরীকৃত হারে রফতানি মূল্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে একক বিভাগ মারফত স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাত্ক্ষণিক ফেরত প্রদান করা এবং খরচ সময় কমানোর জন্য রফতানি খাতসহ শিল্প-বাণিজ্য খাতে উৎস আগাম কর ফেরত দেয়ার পরিবর্তে রহিত করা।

উৎপাদনশীল রফতানিমুখী গ্রামীণ ক্ষুদ্র শিল্পসহ নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথ ব্যবস্থাপনায় বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বিতরণ ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে -কমার্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম করা।

উৎপাদন রফতানি বৃদ্ধির সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট সব রফতানি শিল্প খাতে করমুক্ত রেয়াতি হারে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি সরবরাহের সংস্থান করা।

মুদ্রা পাচারে সহায়ক আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা পরিপন্থী বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য মিনিমাম ভ্যালুসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন রহিত করে তদস্থলে বিনিময় মূল্য (ট্র্যানজেকশন ভ্যালু) সিস্টেম চালু করা।

রফতানি বৈচিত্র্যকরণের সুবিধার্থে স্পেশাল বন্ড সুবিধা, প্রচ্ছন্ন রফতানিকারকদের প্রদত্ত বন্ড সুবিধার বাইরে অন্যান্য রফতানিকারকদের জন্য কেন্দ্রীয় বন্ড ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

Revised Kzoto Convention WTO এর Trade Facilitation Agreement (TFA) এর আলোকে বাংলা ভাষায় প্রণীত Trade Facilitating নতুন কাস্টমস অ্যাক্ট আগামী বাজেট অধিবেশনে পাস করার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। উক্ত আইন সংসদে পাস হওয়ার এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

The Customs Act ১৯৬৯ এর Section ১৫৬ () এর Table এর SL9- বর্ণিত Offence এর Penalty অজ্ঞতা ভুলকৃত ক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রের পরিবর্তে শুধু ইচ্ছাকৃত Offence-এর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করে প্রদত্ত জরিমানা রাজস্ব ক্ষতির সমানুপাতিক হারে ধার্য করা।

কাস্টমস ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সিস্টেম অ্যাসাইকুডায় Documents Verification System through digital Integration with key Regulators and Facilitators, Customs Valuation Management Module, Modern Risk Management Module, Litigation Module, Auction Module ইত্যাদি বিষয়ক digital facility সংযুক্ত/সমন্বয়পূর্বক (Integrated) নিয়মিত আধুনিকায়ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ করা; এতে দ্রুত পণ্য খালাস হবে এবং মিথ্যা ঘোষণা, হয়রানি, শুল্ক ফাঁকি, দুর্নীতি হ্রাস পাবে।

পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই না করে যেসব খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছে সেসব খাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, প্রদত্ত অব্যাহতির প্রভাব, অব্যাহতির মেয়াদ, অব্যাহতির রাজস্ব গুরুত্ব যাচাই না করে জাতীয় অর্থনীতির বিদ্যমান সংকটের সময় এসব বিষয়ে অত্যন্ত সতকর্তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

জমি ক্রয়, নির্মাণ এবং শিল্প সেবা খাতের ইউটিলিটি বিলসহ সব উৎপাদনশীল খাতে প্রদেয় যাবতীয় প্রশাসনিক সেবা সম্পূর্ণরূপে পরোক্ষ করমুক্ত রাখা।

আমদানি শুল্ক প্রসঙ্গে: আগামী বাজেটে আমদানিকারক নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহূত তৈরি পণ্য সর্বোচ্চ স্তর ২০৩০-এর মধ্যে ২৫ থেকে ১৫ শতাংশ নামিয়ে আনা, মূসক নিবন্ধিত দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি যন্ত্রাংশ এবং মধ্যবর্তী কাঁচামালের শুল্কহার থেকে শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, যন্ত্রপাতি, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না এমন কাঁচামালের শুল্কহার থেকে শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত পণ্যের ওপর পরিমাণভিত্তিক শুল্ক বা মিশ্র শুল্ক আরোপ করা [যানবাহন, লৌহ ইস্পাত, বিদ্যুৎ জ্বালানি, স্বর্ণ ইত্যাদি] হবে আমরা আশা করছি।

পাশাপাশি কেবল বিলাসজাত দ্রব্য, জনসাধারণের স্বার্থ বা জনসাধারণের নৈতিকতা রক্ষা, জনস্বাস্থ্য, প্রাণী উদ্ভিদের জীবন পরিবেশ রক্ষার জন্য তালিকাভুক্ত পণ্য এবং অনভিপ্রেত দ্রব্য ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে সম্পূরক শুল্ক রাখা, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে আমদানি সীমাবদ্ধ করার জন্য তালিকাভুক্ত পণ্য বা সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা, বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শুল্ক মূল্য নির্ধারণ চুক্তির বিধান অনুযায়ী প্রণীত শুল্ক মূল্যায়ন (আমদানি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ) বিধিমালা মোতাবেক এসআরও নং-৫৭-আইন/২০০০/১৮২১/শুল্ক তাং .০২.২০০০ কার্যকর করা, মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন খাতের শিল্পকে বিভিন্ন শর্তে প্রদত্ত ট্যারিফ সুবিধা ওই খাতের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের স্বার্থে ওই শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে অব্যাহত রাখা, জ্বালানি সাশ্রয় পরিবেশবান্ধব গাড়ি ইলেকট্রিক হাইব্রিড গাড়ির শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব করছি এবং গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে মাইক্রোবাসের শুল্ক কমানো এবং যদি কোনো শিল্প উদ্যোগের মাধ্যমে মূলধনি যন্ত্রপাতিতে ব্যবহারের জন্য স্পেয়ার পার্টস আমদানি করা হয় তবে শুল্ক আইনের প্রথম তফসিল অনুসারে অতিরিক্ত স্পেয়ার পার্টসের জন্য এসআরও নং ১১৩-আইন/২০২১/০২/শুল্ক, তারিখ ২৪.০৫.২০২১ অনুযায়ী পৃথকভাবে বা একই সঙ্গে যেভাবেই আমদানি করা হোক না কেন শতাংশ শুল্কায়ন করা উচিত হবে। বর্তমানে কাস্টমস আইনের অধীনে মূলধনি যন্ত্রপাতি বা খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক মূলধনি যন্ত্রের স্পেয়ার পার্টস পৃথকভাবে আমদানি করা হলে স্পেয়ার পার্টস আইটেমটি ২৫ শতাংশ শুল্কায়ন করা হয়, যা মূলধনি যন্ত্রের সঙ্গে একই সঙ্গে আমদানি করা হলে স্পেয়ার পার্টস আইটেমটি শতাংশ শুল্কায়ন করা হয়।

মূসকসংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব

পণ্য সেবা খাতে মূল্য সংযোজনভিত্তিক একক ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হলে খাত নির্বিশেষে সব পণ্য সেবা খাত বিভিন্ন এসআরওভিত্তিক অসম করহার এবং জটিলতা থেকে রেহাই পাবে এবং কর ব্যবস্থা সহজ সরল হবে। মূল্য সংযোজন কর ভোক্তা ব্যবসাবান্ধব এবং কেবল পণ্য বা সেবার বিক্রয়মূল্যের মূল্য সংযোজিত অংশের ওপর নির্ধারিত হারে আরোপ করার প্রস্তাব করছি।

বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব নিম্নরূপ:

১। ) নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত টার্নওভারকারী একক বা সম্পর্কিত এন্টারপ্রাইজগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এলটিইউ তালিকাভুক্ত করা এবং বর্তমানে কার্যকর করদাতা ইউনিটের (লার্জ ট্যাক্স পেয়ার্স ইউনিট) পাশাপাশি ঢাকায় চট্টগ্রামে আরো একটি করে এলটিইউ স্থাপন করার প্রস্তাব করছি।

) অধিক সংখ্যক ভ্যাট নিবন্ধন এবং রিটার্ন দাখিলের জন্য বরিশাল, ময়মনসিংহ বিভাগে পৃথক ভ্যাট কমিশনারেট স্থাপন করার প্রস্তাব করছি।        

) উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিসের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে সক্ষম ভ্যাট প্রদানকারীদের কর জালের আওতায় আনার জন্য প্রস্তাব করছি।

২। ইনপুট ভ্যাট সমন্বয় করতে না পারলে সব প্রক্রিয়াজাত পণ্যে এবং সেবার লেনদেন মূল্যের ওপর আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হারে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক বহাল করা (পণ্য খাতে ২০ শতাংশ সেবা খাতে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন)

৩। রিয়েল এস্টেট, লোহা ইস্পাত খাত ইত্যাদিসহ তালিকাভুক্ত খাতের জন্য নির্দিষ্ট ট্যারিফভিত্তিক মূসক (ইনপুট ভ্যাট সমন্বয় না করে) বহাল করা।

৪। বর্তমানে পাইকারি খুচরা পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে % হারে ভ্যাট প্রদানের বিধান রয়েছে, যা ব্যবসায়ের খরচ বহনের ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে যায়। পাইকারি খুচরা পর্যায়ের ভ্যাট কমিয়ে শূন্য দশমিক শতাংশে নিয়ে আসার প্রস্তাব করছি।  

৫। উৎপাদন খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান (প্রথম পক্ষ) অন্য কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের (দ্বিতীয় পক্ষ) সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে উপকরণ ক্রয় করলে চুক্তিবদ্ধ দ্বিতীয় পক্ষ থেকে প্রথম পক্ষের কাছে উপকরণ সরবরাহের জন্য মূসক প্রযোজ্য হবে না মর্মে বিধান করার প্রস্তাব করছি। 

৬। পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আমদানীকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে শতাংশ আগাম কর ধাপে ধাপে রহিত করার প্রস্তাব করছি। কারণ এর ফলে শিল্প উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়।

৭। উৎসে মূসক আদায় শুধু বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এবং মূসক আইনে অনিবন্ধিত স্থানীয় সরবরাহের ক্ষেত্রে সীমিত করে মূসক আইনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মূসক . চালান পত্রের মাধ্যমে পারস্পরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তন রহিত করা।

৮। নিম্ন আয় এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য পণ্য, সাধারণ পণ্য পরিবহন, নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সেবা, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্পের কাঁচামাল/উপকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রি-সাইক্লিং, টেন্ডারবহির্ভূত সরাসরি পণ্য মেরামত বা সার্ভিসিং খাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূসক সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি দেয়া।

৯। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মূসক আদায় পদ্ধতিও আন্তর্জাতিক মানের হওয়া দরকার। তাই ম্যানুয়াল কর চালানপত্রের পাশাপাশি অটোমেটেড ভ্যাট চালান বা E-Invoice বা Electronic VAT Challan প্রবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।

১০। বর্তমানে শুধু ভ্যাট নিবন্ধন ভ্যাট রিটার্নের ক্ষেত্রে অনলাইনে দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নোটিস প্রদান, অনলাইনে ডকুমেন্টেশন আদান-প্রদান, অডিট রিফান্ডসহ সব কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক হওয়ার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাব করছি। এছাড়া ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল, রিফান্ড, অডিটসহ সব কার্যক্রম করার ক্ষেত্রে অটোমেশন নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাব করছি। পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে করদাতাদের ব্যবসা পরিচালনা করা অনেক সহজ হবে, তার সঙ্গে সঙ্গে মূসক কর্তৃপক্ষেরও করদাতাদের তদারকি করা অনেক সহজ হবে।

১১। আপিল দায়ের করার ক্ষেত্রে অমীমাংসিত দাবির ২০ শতাংশ পরিশোধ করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা ব্যবসায়ের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। সে কারণে আপিলাত ট্রাইব্যুনালের আবেদনের আগে দাবীকৃত কর হ্রাস করে শতাংশ নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত।

১২। বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত বিধানও ব্যাপকভাবে কার্যকর করা। 

১৩। NBR খুচরা পর্যায়ে EFD মেশিন প্রবর্তন করছে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে মেশিনের সমস্যা আবার অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতার অনীহার কারণে ক্রেতাকে ইএফডি চালান দেয়া হয় না। EFD মেশিন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে স্থাপন যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের পদক্ষেপ অতীব জরুরি। EFD মেশিন সহজলভ্য করা এবং প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে একাধিক কোম্পানিকে বাজারজাত করার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করছি। রাজস্ব আদায় জোরদার করতে ইএফডি মেশিন অনলাইনের মাধ্যমে মনিটরিংয়ের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি।

১৪। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ এবং অনিবন্ধিত ব্যক্তি যাদের ভ্যাট আইনের ধারা অনুযায়ী নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই এবং মূসক চালান . সরবরাহ করে না; সেক্ষেত্রে সরবরাহ গ্রহণকারী সত্তা কর্তৃক সরকারের সমীপে জমাকৃত ট্রেজারি চালানসমূহ রেয়াত দাবির সমর্থনে দলিল হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করছি।

১৫। দফা (১৮ক) এর মাধ্যমে কতিপয় পণ্য সেবাকে উপকরণের সংজ্ঞা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। আইনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা -এর দফা (১৮ক) বাতিলের প্রস্তাব করা হলো। অর্থ আইন ২০২০-এর মাধ্যমে মূসক আইন ২০১২-এর ধারা (১৮ক) এর মাধ্যমে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপের জন্য উপকরণের সংজ্ঞা দিয়ে উপকরণের পরিধি নির্ধারণ হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রেয়াত ব্যবস্থা যত বেশি সহজীকরণ উদারীকরণ হবে তত বেশি নতুন নতুন করদাতা তৈরি হবে। যা সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে।

১৬। ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে প্রশিক্ষণ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ করছি। তাদের কাছে নতুন ভ্যাট আইন অত্যন্ত জটিল মনে হচ্ছে। করদাতাদের জন্য Interactive Training Module তৈরি করে এনবিআরের ওয়েবসাইটে দেয়ার প্রস্তাব করা হলো।

১৭। বর্তমান অনলাইনে পণ্য বিক্রয় সংজ্ঞায় শুধু রিটেইল ক্রয়-বিক্রয়কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যেখানে মার্কেটপ্লেসের সংজ্ঞা সংযোজন করা প্রয়োজন, যা আইনি ভ্যাট প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১- মার্কেটপ্লেসের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে, যা আইন দ্বারা স্বীকৃত।

আয়করসংক্রান্ত প্রস্তাব

আয়কর আইনের কাঠামো এবং মৌলিক বিষয়গুলো আবশ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা এবং দেশের বিনিয়োগ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন আয়কর আইনের মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী আয়কর পরিকাঠামো এবং রূপরেখা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার অনুরোধ করছি

আয়কর আইনের মৌলিক বিষয়গুলো আবশ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা এবং দেশের বিনিয়োগ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে একটি যুগোপযোগী আয়কর আইন প্রণয়ন করা।

দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রদত্ত শুল্ক কর সুবিধার সমতায়ন এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনুসৃত আয় যেখানে কর সেখানে নীতিমালা গ্রহণ করা।

সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করার জন্য সব উপজেলা পর্যায়ে আয়কর দপ্তর স্থাপন করা।

করদায়ী সব সত্তাকে আয়করের আওতায় আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন বাণিজ্য পেশাজীবী সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে দায়িত্ব পালনের বিধান করা।

বেতন, ফি, সুদ, লভ্যাংশসহ (ডিভিডেন্ড) অন্যান্য লেনদেন বা প্রাপ্তির ওপর উৎসে প্রদত্ত আয়কর সমন্বয় করে কেবল চূড়ান্ত করযোগ্য নিট আয়ের (অ্যাকাউন্টিং প্রফিট) ভিত্তিতে ব্যবসা বা পেশার ওপর আয়কর আরোপ করা।

তথ্যপ্রযুক্তি ডিজিটালাইজেশনভিত্তিক উৎসে করের কার্যক্রম, আয়কর রিটার্ন দাখিল, অডিট নির্বাচন, কর নির্ধারণ, আপিল রিফান্ড প্রক্রিয়ার বিধানাবলি আইনে সংযুক্ত করে স্বচ্ছ সহজ প্রক্রিয়ায় এতত্সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য এই আইন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিধিমালার অধীনে যথোপযুক্ত আদর্শ কার্যপ্রণালি অনুসরণ কার্যকর করা।

নির্দিষ্ট বিধান এবং তফসিল প্রদান করে অনুমোদিত ব্যয় হিসাব নির্ধারণের স্বেচ্ছাধীন প্রক্রিয়া পরিহার করা।

নিরীক্ষিত অডিট রিপোর্টের ক্ষেত্র ব্যতীত নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে সহজ নমনীয় হিসাবরক্ষণ পদ্ধতির অধীনে ক্ষুদ্র মাঝারি খাতসহ দেশের বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ঘন এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আয়কর রিটার্ন দাখিলে উদ্বুদ্ধ করা।

স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আলোকে ফাইল নির্বাচন করার প্রস্তাব করছি। একবার অডিট করা হলে সেই ফাইল যেন পরবর্তী তিন বছর আবার পুনরায় অডিট না করা হয়।

স্বেচ্ছা ক্ষমতা পদ্ধতি পরিহার করে কেবল সুনির্দিষ্ট দালিলিক তথ্য বা প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সেই সম্পর্কে করদাতার ব্যাখ্যা গ্রহণ করে আয়কর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান সীমিত করা।

ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনালকে নিরপেক্ষ স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে অবসরপ্রাপ্ত আয়কর কর্মকর্তা অথবা বিজ্ঞ অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী নেতা অথবা পেশাজীবীদের মধ্য থেকে একজন সদস্য নিযুক্ত করার প্রস্তাব করছি।

আয়করের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে অডিট করার স্বার্থে অবিলম্বে অডিট ম্যানুয়াল প্রণয়ন করার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে অডিটের নামে হয়রানি বন্ধ হয়।

অর্থ আইনের মাধ্যমে আয়কর আইনে আনীত যেকোনো পরিবর্তন পরবর্তী অর্থ বছরের জুলাই থেকে প্রত্যাশিতভাবে কার্যকর করার প্রস্তাব করছি। যার মাধ্যমে বছরের অর্থ আইনে দুটো করহার প্রবর্তনের প্রস্তাব করছি, যার একটি আয়বর্ষের জন্য আর অন্যটি হবে পরবর্তী আয়বর্ষের জন্য।

আয়কর বিষয়ে কয়েকটি বিশেষ প্রস্তাব:

বর্তমানে কোম্পানিগুলোর আয়কর হারের শর্তে উল্লেখ আছে যে সকল প্রকার আয় প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেন পাঁচ লক্ষ টাকার অধিক বার্ষিক সর্বমোট ছত্রিশ লক্ষ টাকার অধিক সকল প্রকার ব্যয় বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। উপরিউক্ত শর্ত সকল কোম্পানির জন্য সমভাবে আরোপ না করে শিল্পভিত্তিক ব্যয়ের অনুপাতের ভিত্তিতে আরোপ করার প্রস্তাব করছি। সীমাটি প্রথম বছর ২০ শতাংশ, পরবর্তী বছর ১০ শতাংশ, পরবর্তী বছর শতাংশ এবং তার পরবর্তী বছর শতাংশ হারে নির্ধারণ করা হলে বাস্তবায়ন সহজ হবে।

আয়কর আইনে প্রায় ৫৪টি খাতে বিভিন্ন হারে উৎসে আয়কর কর্তনের বিধান আছে। আবার ৮২সি ধারায় কর্তিত উৎসে কর চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত, যা রিফান্ড পাওয়ার কোনো বিধান নেই। বর্তমানে আইসিএবি কর্তৃক ডিভিএস (ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেমস) চালু করা হয়েছে, যা ব্যবহার করে কর কর্তৃপক্ষ খুব সহজেই বিভিন্ন কোম্পানির অডিটর দ্বারা নিরীক্ষিত আয়-ব্যয় হিসাব বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়ের প্রকৃত আয় এবং খরচের উৎসগুলো চিহ্নিত করতে পারে। সুতরাং আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪- উৎসে কর কর্তনের হার নির্ধারণের সময়ে ডিভিএস ব্যবহার করে শিল্পভিত্তিক ব্যবসায়ের আয়-ব্যয়ের প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর কর্তনের হার উল্লেখযোগ্য হারে যৌক্তিকীকরণের জন্য সুপারিশ করা হলো।

প্রিন্টিং, প্যাকেজিং বাইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে থেকে শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে, যা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকেই বহন করতে হয়। উল্লেখ্য, শতাংশ আয়করের জন্য ২৩.৩৩ টাকা কর-পূর্ববর্তী মুনাফা অর্জন করতে হয়, যা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দুরূহ। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পশ্চাদ শিল্প থেকে না কিনে নিজেরাই ওই শিল্প গড়ে তুলছে এবং এর ফলে এসএমই শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসএমই শিল্পের বিকাশ ত্বরান্নিত করার জন্য প্রিন্টিং শিল্প, প্যাকেজিং বাইন্ডিংয়ের সরবরাহকারীদের উৎসে আয়করের আওতাবহির্ভূত করে ধারা ৫২ বিধি ১৬ তে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার প্রস্তাব করছি।  

ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের বিধিবিধান প্রযোজ্য হওয়া সত্ত্বেও কর নির্ধারণী কর্মকর্তাদের অডিট রিপোর্টের ভাষ্য অগ্রাহ্য করত বিক্রয় নিরূপণ, গ্রস প্রফিট নিরূপণ খরচ অগ্রাহ্য করার স্কোপ অযৌক্তিক। বর্তমানে আইসিএবি কর্তৃক চালুকৃত ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেমস, যা ব্যবহার করে কর কর্তৃপক্ষ খুব সহজে বিভিন্ন কোম্পানির অডিটর দ্বারা নিরীক্ষিত আয়-ব্যয় হিসাব বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়ের প্রকৃত আয় এবং খরচগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। তথাপিও কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক করদাতার জিপি (গ্রস প্রফিট) অনুমান করার মাধ্যমে যে হয়রানি করা হয় তা অনেকাংশে হ্রাস করার ব্যবস্থা করার জন্য সুপারিশ করা হলো। ৩০ ধারার সীমাবদ্ধতা ছাড়া কোম্পানিগুলোর আয় নিরূপণকালে কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অযাচিত বিক্রয়/প্রাপ্তি বৃদ্ধি বা খরচাদি অগ্রাহ্য করার বিধান রহিত করা।

শিল্প পরিচালনার ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের (এআইটি) হার ধাপে ধাপে কমিয়ে শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। বর্তমানে অগ্রিম আয়করের হার শতাংশ। উল্লেখ্য, অগ্রিম আয়করের হার ৩০ জুন ২০১০ পর্যন্ত শতাংশ ছিল।

নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যসামগ্রী যেমন চাল, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, সকল প্রকার ফল ইত্যাদির সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় তালিকাভুক্ত ভোগ্যপণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করছি।

উৎপাদন খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান (প্রথম পক্ষ) অন্য কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের (দ্বিতীয় পক্ষ) সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে উপকরণ ক্রয় করলে চুক্তিবদ্ধ দ্বিতীয় পক্ষ থেকে প্রথম পক্ষের কাছে উপকরণ সরবরাহ বাবদ উৎসে কর রহিত করার প্রস্তাব করছি।

বর্তমানে ৩৩টি খাতে উৎসে কর্তিত কর ন্যূনতম করের আওতাভুক্ত রয়েছে। ন্যূনতম করের বিধানটি আয়করের মূল ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই উৎসে কর কর্তনের এই ৩৩টি খাত থেকে ধারাবাহিকভাবে কিছু কিছু খাতকে ন্যূনতম করের আওতাবহির্ভূত করা যেতে পারে।

বর্তমানে কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত ডিভিডেন্ডের ওপর ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। অন্যান্য দেশে ডিভিডেন্ডের ওপর উৎসে কর কর্তনের কোনো বিধান নেই। আবার কিছু দেশে থাকলেও তা খুব সামান্য। করপোরেট ডিভিডেন্ডের আয়ের ওপর কর হ্রাস করা হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশে হোল্ডিং কোম্পানিগুলো প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত হবে।

জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে লাখ টাকা এবং মহিলা সিনিয়র নাগরিকদের জন্য লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।

বিশ্বায়ন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে দেশের বেসরকারি খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য একটি সুদূরপ্রসারী, বাস্তবানুগ যুগোপযোগী পরিকল্পনার প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন