দেশের সফল
উদ্যোক্তা ও
বিশিষ্ট শিল্পপতি
অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল
ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই)
গ্রুপের চেয়ারম্যান
এম.
আনিস উদ্
দৌলা।
তিনি বর্তমানে
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর
সংগঠন বাংলাদেশ
অ্যাসোসিয়েশন অব
পাবলিকলি লিস্টেড
কোম্পানিজের (বিএপিএলসি)
প্রেসিডেন্ট হিসেবে
দায়িত্ব পালন
করছেন। সম্প্রতি
দেশের পুঁজিবাজার,
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর
অবস্থা, সামষ্টিক
অর্থনীতি সংকট
ও আগামী
অর্থবছরের বাজেটকে
ঘিরে বিএপিএলসির
প্রত্যাশার নানা
দিক নিয়ে
বণিক
বার্তার
সঙ্গে কথা
বলেছেন। সাক্ষাৎকার
নিয়েছেন মেহেদী হাসান
রাহাত।
প্রথমে কভিড-১৯, তার পরে
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে
আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বেশ
চাপ লক্ষ
করা যাচ্ছে। বর্তমান এ
চ্যালেঞ্জিং সময়ে
আগামী অর্থবছরের বাজেটকে ঘিরে
আপনাদের প্রত্যাশা কী?
আমাদের এটা
স্বীকার করতেই
হবে এবারের
বাজেটটা বেশ
চ্যালেঞ্জিং সরকারের
জন্য। এর
মধ্যেও বাজেটে
বেশকিছু সংশোধনী
আনা উচিত।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির
ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো
যে উৎসাহিতবোধ
করবে সে
ধরনের প্রণোদনা
অনুপস্থিত। তালিকাভুক্তির
ফলে কোম্পানির
যে ব্যয়
হয়, সেজন্য
তাদের প্রণোদনা
দেয়া উচিত।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ
অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ
কমিশন (বিএসইসি)
চেষ্টা করছে
পুঁজিবাজারে বিদেশী
বিনিয়োগ আনার
জন্য। কিন্তু
স্থানীয় কোম্পানিগুলো
সেভাবে পুঁজিবাজারে
আসছে না।
অন্যদিকে তালিকাভুক্ত
কোম্পানিগুলোকে করের
বোঝা থেকে
কিছুটা রেহাই
দেয়া উচিত।
করের মধ্যে
অনেক অনাচার
আছে। সবচেয়ে
বড় অনাচার
হচ্ছে অগ্রিম
আয়কর এবং
এটি কেটে
রেখে আয়কর
অধ্যাদেশের ৮২
সি ধারার
মাধ্যমে চূড়ান্ত
হিসেবে ধার্য
করা। আপনি
বেশি কর
কেটে রেখেছেন
এবং পরে
ফেরত দেবেন
না, এটি
তো অনৈতিক।
বিদ্যমান করদাতাদের
বাইরেও অনেকে
রয়ে গেছে
যারা এখনো
করের আওতায়
আসেনি। তাদের
খুঁজে বের
করে কর
জাল সম্প্রসারণ
করা প্রয়োজন।
লভ্যাংশের ওপর
প্রতিটি ধাপে
করারোপ করা
হয়। এতে
লভ্যাংশ প্রায়
নেই হয়ে
যায়। সাবসিডিয়ারির
কাছ থেকে
মূল কোম্পানি
লভ্যাংশ পায়।
সেই কোম্পানির
শেয়ারহোল্ডাররা এ
লভ্যাংশ পাবেন।
শেয়ারহোল্ডার ক্ষেত্রে
এ লভ্যাংশের
ওপর আবার
করারোপ করা
হচ্ছে। এতে
লভ্যাংশ আয়
কমে যাচ্ছে।
এটি পুঁজিবাজারের
জন্য একটি
নেতিবাচক দিক।
লভ্যাংশের ওপর
একবার করারোপ
করা উচিত।
কোম্পানির একজন
জ্যেষ্ঠ নির্বাহী
তার পারকুইজিট
১০ লাখ
টাকার বেশি।
তার হাতে
যখন টাকাটা
যাচ্ছে, তখন
এটি তার
আয় হিসেবের
ওপর করারোপ
করা হচ্ছে।
এখন কোম্পানির
ক্ষেত্রেও এটি
১০ লাখের
ওপর হলে
তখন সেক্ষেত্রেও
করারোপ করা
হচ্ছে। এতে
তো দুবার
করারোপ করা
হয়ে গেল।
আমরা এ
বিষয়ে অনেকবার
বলেছি কিন্তু
কাজ হয়নি।
আপনি তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করতে
কর প্রণোদনার কথা বলছিলেন। এক্ষেত্রে করের
হার কত
হতে পারে?
বিভিন্নভাবে চেষ্টা
করে দেখা
যেতে পারে
যে কোম্পানিগুলো
উৎসাহিত হয়
কিনা। বর্তমানে
তালিকাভুক্ত ও
অতালিকাভুক্ত কোম্পানির
মধ্যে আড়াই
শতাংশ কর
ব্যবধান রয়েছে
ঠিকই। কিন্তু
সেটি আবার
শর্তযুক্ত। ফলে
অনেকের পক্ষেই
এ সুবিধা
নেয়া সম্ভব
হয়নি। করছাড়
দেয়া হলে
সেটি শর্তহীন
হতে হবে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা করছে। তারা
যে দেশে
ব্যবসা করে
সাধারণত সেখানকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু আমাদের এখানে
এর ব্যতিক্রম। দেশে ব্যবসা করা বহুজাতিকদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর কারণ
কী বলে
আপনি মনে
করেন?
আমার নিজের
দুটি বহুজাতিক
কোম্পানিতে কাজ
করার অভিজ্ঞতা
রয়েছে। বহুজাতিকরা
পুঁজিবাজারে না
আসার কারণ
রয়েছে। যেমন
করপোরেট গভর্ন্যান্স
কোড (সিজিসি)
অনুসারে স্বতন্ত্র
পরিচালককে প্রধান
করে নমিনেশন
অ্যান্ড রিমুনারেশন
কমিটি (এনআরসি)
গঠন করতে
হবে। এ
কমিটির সুপারিশ
অনুসারে কোম্পানি
প্রধান নির্বাহীকে
নিয়োগ দিতে
হবে। আমি
কোম্পানির উদ্যোক্তা
হওয়ার সত্ত্বেও
তাদের সুপারিশের
বাইরে আমি
যেতে পারব
না। অন্যদিকে
কোম্পানির চেয়ারম্যান
ও প্রধান
নির্বাহীকে আলাদা
ব্যক্তি হতে
হবে। একই
ব্যক্তি চেয়ারম্যান
ও প্রধান
নির্বাহী হতে
সমস্যা কোথায়।
এসব কারণে
বহুজাতিকরা তালিকাভুক্ত
হতে চায়
না। তারা
মনে করে
আমি ব্যবসা
করব কিন্তু
পুঁজিবাজারে আসব
না।
সম্প্রতি বিএসইসির আইনের খসড়ায়
বিশেষ পরিস্থিতিতে শুনানি ছাড়াই
তালিকাভুক্ত কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে
দেয়ার বিধান
যুক্ত করা
হয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
এ ধরনের
একটি বিধান
যুক্ত করাকে
আমি মনে
করি আত্মঘাতীমূলক
কাজ। আমরা
কি আদিম
সমাজে বাস
করছি নাকি
যে মৌখিক
অভিযোগকে আমলে
নিয়ে আপনি
চাইলেই কোনো
ধরনের শুনানি
ছাড়া একটি
কোম্পানির পর্ষদ
ভেঙে দিতে
পারবেন। এটি
লজ্জাজনক। এ
ধরনের উদ্যোগের
ফলে আস্থার
সম্পর্ক নষ্ট
হবে।
কাঁচামালের দাম
বৃদ্ধি, জাহাজীকরণের ব্যয় বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, জ্বালানি ও
বিদ্যুতের দাম
বাড়ার প্রভাবে ব্যবসায় ব্যয়ও
অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় আপনারা কী
ধরনের নীতি
সহায়তা প্রত্যাশা করছেন?
আমাদের প্রত্যাশা
কর আর
না বাড়ুক।
আমাদের একটু
রেহাই দিলে
আমরা একটু
বাঁচার চেষ্টা
করি। এর
মধ্যে যদি
কর আরো
বাড়ানো হয়,
তাহলে আমাদের
পক্ষে চালিয়ে
যাওয়া কঠিন
হয়ে যাবে।
উদ্যোক্তারা রিটার্নের
জন্যই বিনিয়োগ
করেন। এর
মাধ্যমে তারা
কর্মসংস্থান সৃষ্টি
করছেন। ফলে
তারা টিকে
থাকতে না
পারলে কর্মসংস্থানের
ওপরও প্রভাব
পড়বে। আমাদের
জীবনে এত
খারাপ পরিস্থিতি
আর কখনো
যায়নি। তাই
আমরা চাইছি
সরকার যাতে
আমাদের ছাড়
দেয়।
সরকারের দিক
থেকে তো
রাজস্ব আয়
বাড়ানোরও চাপ
আছে?
আমাকে প্রণোদনা
দিলে আমি
যে কাজ
করতে পারব,
বাড়তি যে
আয় করব
সেটি আমার
কাছ থেকে
জোর করে
আদায়ের চেয়ে
বেশি হবে।
অর্থনীতি বাড়ে
কীভাবে? যখন
মানুষের আর্থিক
উন্নতি হয়
এবং এতে
তারা যে
বাড়তি ব্যয়
করে তা
থেকে সরকারের
রাজস্ব আয়
বাড়ে। একইভাবে
ব্যবসার বিস্তৃতি
বাড়লে তখন
স্বাভাবিকভাবেই সরকার
বাড়তি রাজস্ব
আয় করতে
পারবে।
অপ্রদর্শিত অর্থকে অর্থনীতির মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে
বাজেটে সুযোগ
দেয়ার বিষয়টি সমর্থন করেন
কি?
এর নৈতিক
ও প্রায়োগিক
দিক রয়েছে।
যদি সুযোগ
দেয়ার মাধ্যমে
অর্থনীতির মূলধারায়
অপ্রদর্শিত অর্থ
ফিরিয়ে আনা
যায়, তবে
সেটি ভালো।
কিন্তু এ
সুযোগ বারবার
দেয়া উচিত
নয়। এতে
সৎ করদাতারা
নিরুৎসাহিত হবেন।
আমরা চাইব
অর্থনীতিতে যাতে
অপ্রদর্শিত অর্থের
কম প্রভাব
থাকে।
২০২২-২৩
হিসাব বছরের
প্রথম নয়
মাসের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা
যায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় সংকটের প্রভাব পড়তে শুরু
করেছে। এ
বছরের বাকি
সময়টা কেমন
যাবে বলে
আপনি মনে
করেন?
যেসব সংকট
ও চ্যালেঞ্জ
রয়েছে, সেগুলো
এ বছরজুড়েই
থাকবে। ডলার
সংকট দূর
করা ও
এর দাম
নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি
সরকারকে অত্যন্ত
সতর্কতার সঙ্গে
ম্যানেজ করতে
হবে। তাহলেই
আমরা পরবর্তী
ধাপে যেতে
পারব। নিত্যনতুন
প্রযুক্তিকে সবাই
গ্রহণ করছে।
আমাদেরও সেদিকে
যেতে হবে।
এক্ষেত্রে এসব
প্রযুক্তি কাজে
লাগানোর জন্য
প্রয়োজনীয় ও
দক্ষ জনবলও
আমাদের প্রয়োজন।
সংকট মোকাবেলায় আপনারা কী
ধরনের নীতি
অবলম্বন করছেন?
অবস্থা এমন
হয়েছে যে
সবারই আর্থিক
সক্ষমতা অনেক
কমে গেছে।
এ কারণে
অনেকেই নতুন
করে বিনিয়োগে
যেতে পারছে
না। যদি
পারত তাহলে
সেটি অর্থনীতির
জন্য ভালো
হতো। বিনিয়োগ
করার জন্য
প্রণোদনাও থাকতে
হবে। আমরা
অবকাঠামোর যদি
উন্নয়ন করতে
পারি। অনেক
সড়ক-মহাসড়ক
হচ্ছেও। পাশাপাশি
উদ্যোক্তাদের যদি
ঠিকমতো সহায়তা
দিতে পারি,
তাদের উদ্ভাবনী
ধারণাগুলোকে যদি
বাস্তব রূপ
দেয়া যায়,
তাহলে প্রধানমন্ত্রী
যেভাবে চাইছেন
দেশ সেভাবে
এগিয়ে যাবে।
তৈরি পোশাকের
পাশাপাশি আমাদের
ওষুধ খাতের
ভালো সম্ভাবনা
রয়েছে।
আমাদের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
কভিড-১৯-পরবর্তী
সময়ে আমাদের
অর্থনীতি বেশ
ভালোভাবে পুনরুদ্ধার
হচ্ছিল। এ
কারণে পুঁজিবাজারের
বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও
উৎসাহ দেখা
গেছে। ফলে
সে সময়
পুঁজিবাজার পরিস্থিতিও
ভালো ছিল।
কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধের কারণে
অর্থনীতির পাশাপাশি
পুঁজিবাজারেও এর
নেতিবাচক প্রভাব
পড়েছে। বিএসইসি
অনেক চেষ্টা
করেছে বিনিয়োগকারীদের
আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে
আনার। বিশেষ
করে বিদেশী
বিনিয়োগ আনার
চেষ্টা ছিল
লক্ষণীয়। যদিও
সময়টা অনকূল
ছিল না।
শেয়ারদরে ফ্লোর
প্রাইস আরোপের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
স্বল্পমেয়াদের জন্য এটি করা হলেও তা অব্যাহত রাখা উচিত নয়। এটা শেয়ারদরে হস্তক্ষেপ করার মতো এবং যত দ্রুত এটি দূর করা যায় ততই ভালো হবে।