আমাদের প্রত্যাশা থাকবে গ্যাসের দাম যেন আরো স্থিতিশীল হয়

এম জব্বার , ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিবিএল গ্রুপ

সম্প্রতি গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় সিরামিক পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে খাত। এমন বাস্তবতায় সামগ্রিকভাবে বাজেটে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

সিরামিক শিল্প ন্যাচারাল গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এবং গ্যাসের সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা উচ্চমান বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) এবং লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) একটি অন্যতম কার্যকর বিকল্প, কিন্তু গ্যাসগুলো সাশ্রয়ী নয় এবং বাংলাদেশে এর সরবরাহের ঘাটতি সিরামিক শিল্পে একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

শুধু সিরামিক শিল্পই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় নির্মাণ শিল্পও ধীর হয়ে গেছে। এটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে এবং সামগ্রিকভাবে বাজেটে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। অবস্থায় আমরা, সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার, যেমন পণ্যের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি করতে আগ্রহী নয়, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যাতে গ্যাসের দাম আরো স্থিতিশীল হয়।

একদিকে আমদানি অন্যদিকে স্থানীয় উৎপাদন। পরিস্থিতিতে সিরামিক খাতের বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

বর্তমানে গ্যাসের সংকট, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্থানীয় উৎপাদন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

সিরামিক শিল্পে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা ছিল, যা অবাস্তব রয়ে গেছে, যখন সাম্প্রতিক গ্যাস সংকট শিল্পগুলোয় ধারণক্ষমতার নিচে চলে গেছে এবং উৎপাদন ব্যাহত করছে।

বর্তমানে সিরামিক পণ্য রফতানি ক্রমেই কমছে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে হলে কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?

এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে হলে আমাদের প্রয়োজন পরিকল্পিত বিনিয়োগ।

খাতে আরো বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা দেশীয় চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারেও রফতানির পরিমাণ বাড়াতে পারি। আন্তর্জাতিক বাজারে একটি শক্ত আস্থাশীল অবস্থান গড়ে তুলতে, আমাদের চাই যুগোপযোগী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ জনবল, যা একমাত্র পরিকল্পিত বিনিয়োগের মাধ্যমেই সম্ভব।

এর পাশাপাশি গ্যাস কাঁচামালের পর্যাপ্ত পরিমাণের সরবরাহ এবং মূল্যের স্থিতিশীলতা বিনিয়োগ মাধ্যম বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

স্থানীয় বাজারে দেশের সিরামিক খাত কতটা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে?

অবশ্যই স্থানীয় বাজারে দেশের সিরামিক কোম্পানিগুলো শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। বরং আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের সিরামিক টাইলসের বেশ সুনাম আছে। তবে স্থানীয় বাজারে এখনো বাইরের দেশের টাইলসের একটি চাহিদা রয়েছে। সব বাজারের গ্রাহকদেরই বৈদেশিক পণ্যের প্রতি একটি দুর্বলতা রয়েছে। এর জন্য আমাদের সবাইকে আরো প্রচার-প্রসার করতে হবে। গ্রাহকদের নিজ দেশের পণ্যের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। বিশ্বমানের টাইলস এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন করছে এবং ডিবিএলসহ আরো কিছু ব্র্যান্ড এজন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আমি বরাবরই বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের সম্ভাবনা এবং সক্ষমতা দুটো দিককে কাজে লাগিয়ে আমরা শুধু দেশের চাহিদাও নয়, বরং আমদানিও করতে পারব।

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ডলার সংকটের কারণে খাতের কাঁচামাল আমদানিতে কোনো প্রভাব পড়ছে কি?

গোটা সিরামিক শিল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি হয় চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ কিছু ইউরোপিয়ান দেশ থেকে। যেহেতু আমাদের দেশের রফতানি আয় সীমিত সেক্ষেত্রে ডলারের সংকটে আমাদের কোম্পানিগুলো পণ্য উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশের সিরামিক পণ্যগুলোর ব্যবসা এবং পণ্য বিক্রয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাই।

বিগত বছরে টাইলসের বার্ষিক বাজার ছিল প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার, যার মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশই ছিল আমাদের দেশীয় কোম্পানির। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বাজার হয়তো আরো বাড়তে পারত। তবে আমরা ভবিষ্যতের দিনগুলো নিয়ে চিন্তিত। বৈশ্বিক মন্দা এবং গ্যাস সংকটের কারণে সিরামিক টাইলসের উৎপাদন এরই মধ্যে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। যেখানে ঋণপত্র খুলতে দুই দিন লাগত, সেখানে এখন ঋণপত্র খুলতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগছে। এমনকি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ১৫০ শতাংশ। তবে আমি মনে করি এগুলো সাময়িক সমস্যা। চ্যালেঞ্জ থাকবেই আর সেই চ্যালেঞ্জকেও আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

আমাদের অ্যাসোসিয়েশন বিষয়ে কাজ করছে। আমি আশাবাদী শিগগিরই আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব। তবে প্রশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

সিরামিক খাত টেকসই করতে নীতিনির্ধারক এবং উদ্যোক্তাদুই পক্ষের প্রতি সংশ্লিষ্ট হিসেবে আপনার পরামর্শ কী?

টাইলস এখন আর বিলাসবহুল কোনো পণ্য নয়। শহরের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন স্থাপনায় এখন টাইলস ব্যবহূত হচ্ছে। টাইলসের দামও এখন বেশ সহজলভ্য। এতে আমরা আমদানির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পেরেছি। তবে গ্যাস এবং ডলার সংকট দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারলে বাজার আরো বেগবান হবে, বৃদ্ধি পাবে রফতানির পরিমাণও। টেকসই হবে আমাদের সিরামিক শিল্প।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন